দ্রুত শেখা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ৮টি উপায়

 ছাত্রজীবন বা চাকুরীর পড়াশোনা - এই দুই ক্ষেত্রে যেকোন কিছু দ্রুত শেখা ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। এই দুটো বিষয়ে যে এগিয়ে থাকবে, সে অন্যদের থেকেও এগিয়ে থাকবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ৮টি উপায়ে আপনি যেকোন কিছু দ্রুত শিখতে পারেন এবং আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে নিতে পারেন।

১। প্রাক্টিস এবং প্রাক্টিস

আমি যখন ক্লাস এইটে পড়তাম তখন ডিকশনারী মুখস্ত করার ভূত চাপলো মাথায়। কিন্ত জিনিসটা এত সোজা না। বাজার থেকে একটা ডিকশনারী কিনে এনে দেখি তাতে লেখা আছে যে এখানে ৫০,০০০ শব্দ আছে। তবে সব শব্দ মুখস্ত করতে হবে এমনটাও নয়। আমি বেছে বেছে শব্দ মুখস্ত করতে শুরু করলাম। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১০টা করে শব্দ মুখস্ত করতাম। এভাবে ৪/৫ দিন চলার পর ডেইলি ২০ করে শব্দ মুখস্ত করতাম। যেগুলা মুখস্ত করতাম ঐ শব্দগুলা আগে খাতায় লিখে নিতাম এবং ডিকশনারীতেও মার্ক করে দিতাম। এভাবে মাসখানেক চলার ডেইলি ৭০/৮০টা শব্দ মুখস্ত করা ব্যাপারই ছিলনা। দুই মাস পর দেখলাম আমি ডেইলি প্রায় ১৫০+ শব্দ মুখস্ত করতে পারি এবং আগের থেকে ভালো মনে থাকে। তখন আমি ঐসব শব্দ ব্যবহার করে মনে মনে বাক্য তৈরী করতে থাকলাম। তিন মাস পর প্রতিদিন ২৩০+ শব্দ মুখস্ত করতাম এবং একটা পর্যায়ে দেখলাম আমি পুরো ডিকশনারী কভার করেছি। আমার এই ভোকাবুলারী দক্ষতা পরবর্তীতে সকল একাডেমিক পরীক্ষা ও তারপরে পেশাগত জীবনে দারুণ সফলতা এনে দিয়েছিল। আপনিও শুধুমাত্র প্রাক্টিস চালিয়ে গেলে আপনার ব্রেইন আগের থেকে বেশির থেকে বেশি শার্প হতে থাকবে।

২। নতুন কিছু শিখুন

স্মৃতিশক্তি ঠিক পেশী শক্তির মতো। আপনি এটি যত বেশি ব্যবহার করবেন, এটি তত শক্তিশালী হবে। আর মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা খুব ভালো একটি উপায়। যেমনঃ আমি একদিন টিউটোরিয়াল দেখি, আরেকদিন বই পড়ি, তারপর দিন কোন নতুন ভিডিও বানাই। প্রতিদিন একই জিনিস না করে তার ভিতরে বৈচিত্র্য আনতে পারলে ব্রেইনও রিলাক্স হয়। এর পাশাপাশি ব্রেইনের শক্তি বাড়ানোর জন্য আপনি কবিতা লিখতে পারেন, কোন গেইম খেলতে পারেন, যেমন- সুডোকু বা দাবা; নতুন কোন ভাষা শেখা ইত্যাদি।

৩। গণিত চর্চা করা

গণিত চর্চা করা যে শুধু হিসাব নিকাশের দক্ষতা বৃদ্ধি করে – তাই নয়। স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যও এটি দারুন একটি মাধ্যম।  আর এর জন্য খুব জটিল অংক প্রাকটিস করারও দরকার নেই।  অবসর সময়ে ছোট ছোট পাটিগণিত বা বিজগনিত নিয়মিত প্রাকটিস করলেও মস্তিষ্কের দারুন ব্যায়াম হয়।  গণিত প্রাক্টিসের জন্য এই ধরনের এ্যাপও নামিয়ে নিতে পারেন।  বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও এই ধরনের অংক এবং লজিক্যাল গেম পাবেন।  এগুলো আপনার চিন্তা ভাবনাকে পরিস্কার করবে, এবং সামগ্রিক ভাবে বুদ্ধি বাড়াবে। ইহুদি জাতির মায়েরা তাদের সন্তান পেটে থাকাকালীন বেশি বেশি গণিত প্রাক্টিস করে, যাতে করে তাদের অনাগত সন্তান মেধাবী হয়।

৪। সংক্ষিপ্ত শব্দ এবং সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করে দেখুন

১৯৬০ সাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি পরীক্ষিত হয়ে আসছে। লম্বা তালিকা মনে রাখার জন্য আপনাকে কয়েকটা অক্ষর বা শব্দ মনে রাখতে হবে। যেমন-রংধনুর সাতটি রং মনে রাখার জন্য আমরা মনে রাখতে পারি "বেনীআসহকলা"; যা পুরো অর্থ- বেগুনী, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল। আবার মোঘল সম্রাটদের নাম মুখস্ত করার জন্য আমরা মনে রাখতে পারি "বাবার হইল আবার জ্বর, সারিল ঔষধে"; যার অর্থ- বাবার = বাবর, হইলো = হুমায়ুন, আবার = আকবর, জ্বর = জাহাঙ্গীর, সারিলো = শাহজাহান, ঔষধে= আঔরঙ্গজেব।

৫। ব্যায়াম ও শরীরচর্চা

ব্যায়াম ও শরীরচর্চা যে শুধু শরীরের ফিটনেসই বাড়ায় – তা নয়।  মস্তিষ্কের ফিটনেস বাড়াতেও এটা দারুন ভূমিকা রাখে। দিনে ২০ মিনিট শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে তথ্য প্রসেস করা ও স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়।  গবেষকদের মতে, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্কে নিউরাল পাথ বা সংযোগ পথ অনেক দ্রুত তৈরী হয়।  মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগের গতি বেড়ে যায়। ব্য়ায়ামের ফলে আপনার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা বেড়ে যাবে, এবং মানসিক অস্থিরতা কমবে। কিছুদিন এটা প্রাকটিস করলেই বুঝতে পারবেন, আপনি আগের চেয়ে অনেক দ্রুত চিন্তা করতে পারছেন, এবং অনেক সহজে নতুন জিনিস মনে রাখতে পারছেন, পড়াশুনা ও কাজে ফোকাস বেড়ে যাচ্ছে। আর এই শরীরচর্চা করার জন্য আপনাকে জিমে ভর্তি হতে হবে না, বা ঘরের বাইরেও যেতে হবে না। ঘরে থেকেই যদি প্রতিদিন একটা সময়ে কিছুক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফান, একটু বুকডন দেন, একটু হাত পা নাড়েন – তাহলেই দেখবেন বেশ কাজ হচ্ছে।

৬। খাদ্যাভ্যাস

কিছু খাবার আপনার মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে যেমন- কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, জলপাই তেল বা নারকেল তেল, শিম, সবুজ শাক-সবজি, শস্যদানা ইত্যাদি। আবার কিছু খাবার আপনার মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা কমিয়ে দিবে যেমন- চিনি, ময়দা, লাল মাংশ, ভাজাপোড়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মাখন ইত্যাদি। এগুলা যে একেবারেই খাওয়া যাবেনা এমন না, খুবই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।

৭। পর্যাপ্ত ঘুম

একটা পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। অনেকের এর চেয়ে কম ঘুমেও সমস্যা হয়না। এটা ব্যক্তি বিশেষে কম-বেশি হতে পারে। তবে কম ঘুম আপনার কাজে অমনোযোগিতা এনে দিতে পারে, যেকোন বিষয়ে চিন্তা করার ক্ষমরা হ্রাস করে দিতে পারে - তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ঘুম একটি অন্যতম অনুষঙ্গ।

৮। আনন্দে ও হাসি-খুশী থাকুন

প্রবাদে আছে- হাসি হল সকল রোগের ওষুধ। হাসিখুশি থাকলে আপনার সার্বিক বুদ্ধি ও চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে। তাই কাজের পরের সময়টা কাছের মানুষদের সাথে কাটানোর চেষ্টা করুন। যাদের কাছে গেলে আপনার ভালো লাগে, নিজেকে সুখী মনে হয় – তেমন মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটান।  মন ভালো থাকলে চিন্তা ভাবনা পরিস্কার থাকে, মস্তিষ্ক রিল্যাক্সড থাকে।  এটা মস্তিষ্কের কাজ ঠিকমত হওয়ার জন্য খুবই জরুরী। গম্ভীর ও টেনশনে যেসব ছাত্র-ছাত্রী থাকে তারা তাদের একাডেমিক পরীক্ষায় ভাল করতে পারেনা। ফুরফুরে মেজাজের মানুষেদের স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা বেশি কাজ করে।

Mofizul Islam





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম