৫ টি সফল ও পরীক্ষিত উপায়ে আপনার সম্ভাবনাকে বের করে আনুন

সফলতা লাভ আমাদের একটি অন্যতম আকাঙ্ক্ষা। জীবনের পথে আমাদের প্রত্যেকেরই সফলতা লাভের জন্য অন্তর্নিহিত শক্তি আছে - শুধু প্রয়োজন সেটা জাগিয়ে তোলা। কিন্ত প্রায়ই এই প্রশ্নটা শোনা যায় যে, আমারা আমাদের অন্তর্নিহিত শক্তি কিভাবে বের করে আনব? এই পোস্টে পাঁচটি প্রমাণিত কৌশল নিয়ে আলোচনা করে আপনাকে আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করার এবং জীবনের বিভিন্ন দিকগুলিতে সাফল্য অর্জনের দিকে আপনার যাত্রায় গাইড করার উপায় সম্পর্কে বলব।

১। ক্রমাগত শিখতে থাকুন

আপনার পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচন করার প্রথম পদক্ষেপ হল জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য তৃষ্ণা তৈরি করা। আজীবন শেখার মানসিকতা ও অভ্যাস নিজের মধ্যে লালন করুন। সফল ব্যক্তিরা জানেন যে সবসময় নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে রয়েছে নতুন কিছু অর্জন করার রহস্য। স্কুলের শিক্ষা, বই পড়া, অনলাইন কোর্স বা নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে, যেভাবেই হোক না কেন, আপনার জ্ঞানের সাধনা কখনো বন্ধ করবেন না। ক্রমাগত শেখা শুধুমাত্র আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করে না বরং আপনার মনের দিগন্তকেও প্রসারিত করে, যা আপনাকে নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কথায় আছে, "মানুষ বই পড়া বন্ধ করে দিলে তার আত্নার মৃত্যু ঘটে"। সর্বনন্দিত মহাজ্ঞানী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিখতে থাকো"। মহা পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরান নাজিলের প্রথম বাক্য ছিল, "পড়, তোমার প্রভুর নামে। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন"। আমার অনেক ব্যস্ততার মাঝে আমি নিজেও প্রতিদিন ৪০/৫০ মিনিট বই পড়ার চেষ্টা করি। দেখুন আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর একাংশ। স্কুল-কলেজে থাকতে গল্প-উপন্যাস প্রিয় ছিল। কিন্ত এখন আত্ন-নিয়ন্ত্রণ ও মার্কেটিং সম্পর্কিত দেশী-বিদেশী বই বেশি পড়ি। আপনারও উচিৎ এরকম একটা লাইব্রেরী গড়ে তোলা। এখান থেকে শুধু আপনি না, আপনার পরিবার, সন্তান ও বন্ধু-বান্ধবরাও উকপকৃত হবে।



২। আপনার লক্ষ্য স্পষ্ট ও পরিষ্কার রাখুন

আপনার শক্তি এবং প্রচেষ্টা পরিচালনা করার জন্য আপনার লক্ষ্যে স্পষ্টতা অপরিহার্য। আপনার স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলি নির্ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত করুন। একটু বড় ধরণের স্পষ্ট ও পরিষ্কার উচ্চাশা পূরণ করা আপনার কাছে দুঃসাধ্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ আপনার লক্ষ্যটাকে মনে মনে রাখবেন না; অবশ্যই খাতায় লিখে রাখতে হবে। লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনার কাজগুলাকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করুন, সেগুলিকে আরও অর্জনযোগ্য এবং পরিচালনাযোগ্য করে তুলুন। তারপর প্রতিদিন আপনার কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে আপনার লক্ষ্যগুলিকে নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা এবং সামঞ্জস্য করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো আপনার লক্ষ্যের প্রতিই পরিচালিত হচ্ছে। যেমনঃ আপনি চান আপনার ইংরেজির দূর্বলতা দূর করতে। এটার জন্য সময় নির্ধারণ করুন ধরা যাক তিন মাস। তারপর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য লক্ষ্যটাকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করুন। এজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে বাছাই করে ১৫০/২০০ শব্দ মুখস্ত করুন। মাস খানেক পর ঐসব শব্দ দিয়ে নিজে-নিজে খাতায় যেকোন বিষয়ে ইংরেজিতে প্যারাগ্রাফ লিখুন। ভুল হলে হোক, লিখতে থাকুন। এভাবে এক মাস চলার পর দেখবেন আপনার লেখায় আগের থেকে সাবলীলতা এসেছে। তারপর কিছু গ্রামার শিখুন যেমনঃ Tense, Right forms of verb ইত্যাদি। এবার চেষ্টা করুন মানুষের সাথে কথা বলার। অনলাইনে এরকম প্রাথমিক ধাপের স্পিকিং পার্টনার পেতে http://speaking24.com সাইটটি ভিজিট করতে পারেন। এভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও কার্যকরী একশনেবল স্টেপ নির্ধারণের মাধ্যমে আপনি আপনার চাকুরী, ব্যবসায় সহ যেকোন ক্ষেত্রে সফলতা পেতে পারেন।

৩। অধ্যবসায় ও লেগে থাকার অভ্যাস তৈরী করুন

সফলতা কখনো সরল রেখায় দেখা যায়না। বাধা-বিপত্তি অনিবার্য, তবে কিভাবে আপনি সেটাকে হ্যান্ডেল করবেন সেটাই হচ্ছে দেখার বিষয়। সফলতার পথে বাধা-বিপত্তিই আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে। তাই চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগ হিসাবে দেখুন। ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করুন সাফল্যের দিকের সোপান হিসাবে, ব্যর্থতা থেকে শিখুন এবং আপনার পদ্ধতির সাথে খাপ খাইয়ে নিন। প্রবাদে আছে, "ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি"। তাই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলেও সামনের দিকে এগিয়ে যান, কারণ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই আমাদের প্রকৃত সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়।

৪। সময়ের ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি

সময়ের মূল্য নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নাই। আমরা অনেক ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি-বাংলায় এ সম্পর্কে প্যারাগ্রাফ-রচনা পড়ে আসতেছি। তবে এখন আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্রায়ান ট্রেসির টাইম ম্যানেজমেন্ট বইটা পড়ার জন্য রিকমেন্ড করি। 

সময় একটি সীমাবদ্ধ সম্পদ, কার্যকর সময় ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। একটি ভাল রুটিন তৈরী করুন যা আপনার প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। কাজের গুরুত্ব ও জরুরীর ভিত্তিতে আপনার রুটিনে দৈনন্দিন কার্যক্রম সাজান। মাল্টিটাস্কিং বা এক সাথে একাধিক কাজ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি আপনার ফোকাসকে কমিয়ে দিতে পারে এবং কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটার পরিবর্তে, গভীরভাবে কাজে মনোযোগ দিন - স্থির মনোযোগের সাথে যেকোন একটি কাজে নিজেকে নিমজ্জিত করুন। কোথাও পড়ছিলাম যে, "সময় নেই, সময় নেই বলে চিৎকার করোনা। যেটুকু সময় আছে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করো"। মনে রাখবেন- সময় আপনার; তাই এটার ব্যবস্থাপনা করাও আপনার দায়িত্ব। 

৫। ইতিবাচক মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন

আপনার মানসিকতাই আপনার বাস্তবতার প্রতিবিম্ব। এমন একটি ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলুন যা আপনার সক্ষমতা এবং সম্ভাবনাকে স্বীকার করে যে- হ্যা, আপনার দ্বারাই সম্ভব। নিজের প্রতি সন্দেহকে আত্মবিশ্বাস দিয়ে প্রতিস্থাপন করুন। অটোসাজেশন অনুশীলন করুন যা আপনার শক্তি এবং ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে। অতিদ্রুত অটোসাজেশনের শক্তি ও আমাদের জীবনে এটার প্রভাব নিয়ে একটা ভিডিও বানাব, ইনশাল্লাহ। যাহোক, আপনার মত ইতিবাচক চিন্তা করে এমন ব্যক্তিদের সাথে মিশুন। একটি ইতিবাচক মন শুধু আপনাকে লক্ষ্যে পৌছাতে সহায়তা করেনা, বরং আপনার জীবনে সুযোগ এবং সমমনা ব্যক্তিদেরও আকর্ষণ করে।

আপনার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা বের করে আনা হল মূলত নিজেকে রুপান্তর করা। এই পাঁচটি প্রমাণিত কৌশল যথা— ক্রমাগত শিখতে থাকুন, আপনার লক্ষ্য স্পষ্ট ও পরিষ্কার রাখুন, অধ্যবসায় ও লেগে থাকার অভ্যাস তৈরী করুন, সময়ের ব্যবস্থাপনা ও প্রোডাক্টিভিটি এবং ইতিবাচক মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন—আপনার সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করে। মনে রাখবেন সাফল্যের পথ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য আলাদা এবং কোন পূর্বনির্ধারিত সময়রেখা নেই। আপনি এই কৌশলগুলি বাস্তবায়ন করার সময় মনে রাখবেন যে কাজের ধারাবাহিকতা ও লেগে থাকাটাই আসল। সময়ের সাথে-সাথে ছোট-ছোট কাজগুলো একত্রিত হয়ে আপনাকে বড় কোন অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করে। এই কৌশলগুলিকে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি কেবল আপনার অন্তর্নিহিত-গোপন সম্ভাবনাই বের করবেন না বরং অন্যদেরও তাদের উন্নতি এবং সাফল্যের যাত্রা শুরু করতে অনুপ্রাণিত করবেন। যেমন ভাবে আমি আপনাদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছি। সুতরাং, দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে সেই প্রথম পদক্ষেপটি নিন এবং মনে রাখবেন যে আপনার সম্ভাবনা সীমাহীন।

লেখাঃ মফিজুল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম