আমরা তো দীর্ঘদিন ধরেই সূরা মাঊন পড়ছি। কিন্তু ‘মাঊন’ কাকে বলে, তা কি জানি? যেমন ধরুন, আপনার প্রতিবেশী আপনার কাছে গৃহস্থলির ব্যবহার্য ছোটখাটো সামান্য কিছু জিনিস চাইলেন। অথচ আপনি তাকে নানান টালবাহানা দেখিয়ে বিদায় করে দিলেন। এই ধরনের সামান্য দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসকেই ‘মাঊন’ বলা হয়েছে। যারা এই ছোট-খাট নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী অন্যকে দিতে বিরত থাকে, যারা এতিমের হক মেরে খায় এবং তাদেরকে সম্পত্তি থেকে বেদখল করে, যারা মিসকীনকে খাদ্যদানে উদ্বুদ্ধ করে না, যারা নিজেদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর এবং লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে — আসুন এদের সম্পর্কে এ সূরায় আল্লাহ কি বলেছেন তা জেনে নেই:-
أَرَءَيْتَ ٱلَّذِى يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ
‘আরয়াইতাল্লাযী- ইয়ুকায্যিবু বিদ্দীন্।’ (আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে কর্মফলকে মিথ্যা বলছে)?
‘আপনি কি তাকে দেখেছেন’ বাক্যে এখানে বাহ্যত সম্বোধন করা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে। আর “আদ্ দ্বীন” শব্দটি থেকে আখেরাতের কর্মফল বা শাস্তি ও পুরস্কারকে বুঝানো হয়েছে।
فَذَٰلِكَ ٱلَّذِى يَدُعُّ ٱلْيَتِيمَ
‘ফাযা-লিকাল্লাযী ইয়াদু’উ’ল্ ইয়াতীমা’ (সে-ইতো সেই ব্যক্তি যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়)।
এর কয়েকটি অর্থ হয়। এক, সে এতিমের হক মেরে খায় এবং তার বাপের পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে বেদখল করে তাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। দুই, এতিম যদি তার কাছে সাহায্য চাইতে আসে তাহলে দয়া করার পরিবর্তে সে তাকে ধিক্কার দেয়। তিন, সে এতিমের ওপর জুলুম করে।
وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلْمِسْكِينِ
‘অলা-ইয়াহুদ্ব্দু ‘আলা-তোয়া‘আ- মিল্ মিসকীন্।’ (আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উদ্বুদ্ধ করে না)।
সে মিসকিনকে খাবার দিতে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে না। নিজের পরিবারের লোকদেরকেও উদ্বুদ্ধ করে না। এবং অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে না যে, সমাজে যেসব গরীব ও অভাবী লোক অনাহারে মারা যাচ্ছে তাদের হক আদায় করা এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কিছু করো।
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
‘ফাওয়াইলুল্লিল্ মুছোয়াল্লীনা’। (অতএব সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য দুভোর্গ)।
ٱلَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
‘আল্লাযীনাহুম্ ‘আন্ ছলা-তিহিম্ সা-হূন্।’ (যারা নিজেদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর)।
নামায পড়া ও না পড়া উভয়টিরই তাদের দৃষ্টিতে কোন গুরুত্ব নেই। কখনো তারা নামায পড়ে আবার কখনো পড়ে না। যখন পড়ে, যেন কোন আপদ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাই আখেরাতের প্রতি ঈমান না রাখার আলামত।
ٱلَّذِينَ هُمْ يُرَآءُونَ
‘আল্লাযীনা হুম্ ইয়ুরা-য়ূনা’ (যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে)।
সৎকাজও তারা আন্তরিক সংকল্প সহকারে আল্লাহর জন্য করে না। বরং যা কিছু করে অন্যদের দেখাবার জন্য করে। আল্লাহ বলেন, “আর যখন তারা নামাযের জন্য ওঠে অবসাদগ্রস্তের ন্যায় ওঠে। লোকদের দেখায় এবং আল্লাহকে স্মরণ করে খুব কমই।” (সূরা নিসা ১৪২)
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
‘অইয়াম্ না‘ঊনাল্ মা-‘ঊন্।’ (এবং ছোট-খাট নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী অন্যকে দিতে বিরত থাকে)।
অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে, সাধারণত প্রতিবেশীরা একজন আর একজনের কাছ থেকে গৃহস্থালীর দৈনন্দিন যেসব জিনিস চেয়ে নিয়ে থাকে সেগুলোই মাঊনের অন্তর্ভুক্ত। এ জিনিসগুলো অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নেয়া কোন অপমানজনক বিষয় নয়। কারণ ধনী-গরীব সবার এ জিনিসগুলো কোন না কোন সময় দরকার হয়। অবশ্য এ ধরনের জিনিস অন্যকে দেবার ব্যাপারে কার্পণ্য করা হীন মনোবৃত্তির পরিচায়ক। এই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে, আখেরাত অস্বীকৃতি মানুষকে এতবেশী সংকীর্ণমনা করে দেয় যে, সে অন্যের জন্য সামান্যতম ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি হয় না।
