সূরা হুমাযাহ'র সংক্ষিপ্ত তাফসীর

নামাজের মধ্যে সুরা হুমাযাহ পড়ি। অথচ নামাজ শেষ করেই আবারো শুরু করে দেই ‘হুমাযাহ’ চর্চা। অর্থ না জানার কারনে বুঝতেই পারি না যে, ‘হুমাযাহ’ মানেটা কি। 

‘হুমাযাহ’ হলো, যে মানুষকে মুখের উপরে নিন্দা ও অপদস্থ করে। আর ‘লুমাযাহ’ হলো, যে পিছনে গীবত করে। মহান আল্লাহ এই সূরায় এই  হুমাযাহ ও লুমাযাহকারীকে ধ্বংসের হুশিয়ারী দিয়েছেন। সেই সাথে যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করে অর্থ সম্পদ জমায় ও তা গণনা করে রাখে, তারও ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। এদের সকলকে ‘হুত্বামাহ’ নামক জাহান্নামে নিক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। আসুন,  ‘হুত্বামাহ’ জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা ও এই সূরার অর্থ জেনে নেই:-

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

অইলুল্লি কুল্লি হুমাযা-তি ল্লুমাযা। 

১) ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনা সামনি) লোকদের ধিক্কার দেয় এবং (পেছনে ) নিন্দা করতে অভ্যস্ত৷ 

আরবী هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ  (হুমাযাহ লুমাযাহ) শব্দ দুটি অর্থের দিক দিয়ে কখনো সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ আবার কখনো দু ‘য়ের পার্থক্য হয়৷  

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ ৷ দোষ অন্বেষন করো না ৷ আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে ৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয় ৷ আল্লাহকে ভয় করো ৷ আল্লাহ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু ৷’  (সূরা হুজুরাত, ১২)

﴿الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ﴾

আল্লাযী জ্বামা‘আ মা-লাওঁ অ‘আদ্দাদাহ। 

২) যে অর্থ জমায় এবং তা গুণে গুণে রাখে৷

আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে, অথচ তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে কঠিন আযাবের সুসংবাদ দাও’। ‘সেদিন জাহান্নামের আগুনে মালগুলি উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে (এবং বলা হবে,) এগুলো সেই মাল, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করেছিলে। অতএব এখন তোমাদের সঞ্চয়ের স্বাদ গ্রহণ করো’ (সূরা তওবা, ৩৪-৩৫)।

﴿يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ﴾

ইয়াহ্সাবু আন্না মা- লাহূ য় আখ্লাদাহ্।

৩) সে মনে করে তার অর্থ -সম্পদ চিরকাল থাকবে ৷

অর্থ জমা করার এবং তা গুণে রেখে দেবার কাজে সে এত বেশী মশগুল যে নিজের মৃত্যুর কথা তার মনে নেই ৷ 

মহান আল্লাহতা’আলা বলেছেন-

‘এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র ৷ আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম ৷’  (সূরা কাহফ, ৪৬)

﴿كَلَّا ۖ لَيُنبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ﴾

কাল্লা-লাইয়ুম্বাযান্না ফিল্ হুত্বোয়ামাহ্। 

৪) কখনো নয়, তাকে তো  ‘হুত্বামাহ’ বা চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গায় ফেলে দেয়া হবে৷

এমন বখীল ব্যক্তিকে ‘হুত্বামাহ’ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ‘হুত্বামাহ’ অর্থঃ ভেঙ্গে-চুরে ধ্বংস করা।

﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ﴾

অমা-আদ্রা-কা মাল্ হুত্বোয়ামাহ্।

৫) আর তুমি কি জানো সেই  ‘হুত্বামাহ’ বা চূর্ণ - বিচূর্ণকারী জায়গাটি কি ? 

হুত্বামাহ কি? এই প্রশ্নসূচক বাক্য ‘হুত্বামাহ’ জাহান্নামের ভয়াবহতাকে ব্যক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, সেটা এমন ভয়ংকর আগুন হবে, যার প্রকৃতত্বে আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি পৌঁছতে পারে না এবং আমরা তা কোনভাবেই বুঝতে বা অনুভব করতে পারবো না।

﴿نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ﴾

না-রুল্লা-হিল্ মূক্বদাহ।

৬) আল্লাহর আগুন ,প্রচণ্ডভাবে উৎক্ষিপ্ত , 

কুরআন মজীদের একমাত্র এখানে ছাড়া আর কোথাও জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলা হয়নি ৷ এখানে এই আগুনকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করার মাধ্যমে কেবলমাত্র এর প্রচণ্ডতা ও ভয়াবহতারই প্রকাশ হচ্ছে না ৷ বরং এই সংগে এও জানা যাচ্ছে যে , দুনিয়ার ধন – সম্পদ লাভ করে যারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় মেতে ওঠে তাদেরকে আল্লাহ কেমন প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্রোধের দৃষ্টিতে দেখে থাকেন ৷ এ কারণেই তিনি জাহান্নামের এই আগুনকে নিজের বিশেষ আগুন বলেছেন এবং এই আগুনেই তাকে নিক্ষেপ করা হবে৷

﴿الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ﴾

আল্লাতী তাত্ত্বোয়ালিউ’‘আলাল্ আফ্য়িদাহ্।

৭) যা হৃদয় অভ্যন্তরে পৌঁছে যাবে ৷

অর্থাৎ, তার উষ্ণতা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এমনিতেই পৃথিবীর সাধারণ আগুনের গুণ হল সমস্ত বস্তুকে জ্বালিয়ে ফেলা। কিন্তু পৃথিবীতে এই আগুন হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছনোর পূর্বেই মানুষের মৃত্যু ঘটে যায়। জাহান্নামে তা হবে না; বরং সেই আগুন হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আর মৃত্যুকে আহবান করা সত্ত্বেও মৃত্যু আসবে না।

﴿إِنَّهَا عَلَيْهِم مُّؤْصَدَةٌ﴾

ইন্নাহা- ‘আলাইহিম্ মু’ছোয়াদাতাহ।

৮) তা তাদের ওপর ঢেকে দিয়ে বন্ধ করা হবে

﴿فِي عَمَدٍ مُّمَدَّدَةٍ﴾

ফী ‘আমাদিম্ মুমাদ্দাদাহ্।

৯) (এমন অবস্থায় যে তা ) উঁচু উঁচু থামে (ঘেরাও হয়ে থাকবো )৷

‘মুমাদ্দাদাহ’ অর্থ হল বন্ধ বা পরিবেষ্টিত। অর্থাৎ, জাহান্নামের সকল দরজা ও পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে; যাতে সেখান হতে কেউ বের হতে না পারে। তাদেরকে লোহার পেরেকের সাথে বেঁধে দেওয়া হবে; যা লম্বা লম্বা স্তম্ভের মত হবে। কোন কোন উলামার মতে, ‘আমাদিম’ অর্থ হলঃ বেড়ি বা লৌহবেষ্টনী এবং কারো মতে এর অর্থ হল স্তম্ভ বা থাম। যাতে বেঁধে জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম