বন্ধুত্বের হিসাব-নিকেশ নিয়ে ফেসবুকে ইদানিং খুব আলোচনা হচ্ছে। ব্যাপারটা হচ্ছে বাংলাদেশের একজন মোটিভেশনাল স্পিকার (?) সোলাইমান সুখন বলছেন তোমার বন্ধু তোমাকে যা দেয় সেটা হিসাবের খাতায় লিখে রাখ। পরবর্তীতে সেই পরিমাণ তোমার বন্ধুকে ফেরৎ দিবে :P
কিন্ত বন্ধুত্বের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? ধর্মীয় মতে, না জেনে কাউকে যেমন বন্ধু রূপে গ্রহণ করা যায় না। তেমনি সত্যবাদী, নামাজি, দ্বীনদার ও পরোপকারী ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করারও কোনো উপায় নেই। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (তিরমিজি)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্ধুত্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রয়কারী এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতর ওয়ালা তোমাকে নিরাশ করবে না; হয় তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে কিংবা তার কাছে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে আর না হলে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি)
বন্ধু নির্বাচনের দিকনির্দেশনায় মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ২৮)
বন্ধু নির্বাচনের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)
কিয়ামতের দিন ভালো বন্ধুদেরকে আল্লাহ তাআলা আরশের নিচে ছায়া দান করবেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমার মর্যাদার (আনুগত্যের) কারণে পরস্পরের বন্ধুত্বকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়া তলে আশ্রয় দেব। যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। (মুসলিম)
এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করবে না। (তিরমিজি)
তাইতো যার মধ্যে কুরআন হাদিসের ভালোবাসা বা অনুভূতি নেই, ইসলাম তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৮)
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা একজন বন্ধুর গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য কি হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সুরা তাওবা : আয়াত ৭১)
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, 'নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।’
হজরত ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। আর তা হলো- ‘বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া, পাপাচারী না হওয়া, বেদআতি না হওয়া এবং দুনিয়াসক্ত না হওয়া।’
পরিশেষে বলা যায় বন্ধুত্ব হতে হবে পরকালের কল্যাণে। আর পরকালের কল্যাণে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বন্ধু নির্বাচনে একজন মানুষ হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ঈমানদার। যা প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে (কাউকে) ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।’ (আবু দাউদ)


