মুনির হাসানের শরবতে বাজিমাত বইয়ের রিভিউ

কেমব্রিজ ভার্সিটি থেকে পাশ করে তিন বন্ধু রিচার্ড রিড, এডাম বেলন আর জন রাইট - শরবতের ব্যবসায় নামেন। প্রিজারভ মেশানো শরবত না, একেবারে খাটি, ন্যাচারাল, পিওর ও কোনরুপ কেমিকেল মেশানো না - এমন শরবতের ব্যবসায়। তাদের তিন জনের ছিলনা কোন মূলধন, ছিলনা পূর্বের কোন ব্যবসার বাস্তব অভিজ্ঞতা। তারা কলেজে সপ্তাহান্তে "প্লিজ" নামে একটা গান-বাজনার একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, কিছুদিন পর সেটা জনপ্রিয় হলে কলেজ কতৃপক্ষ সেটাকে বন্ধ করে দেন। এ থেকে শিক্ষা নেন-

১। যেখানে কোন 'অভাব' আছে সেখানেই সম্ভাবনা।

২। কোন রকম কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই কিছু একটা শুরু করা ও সফল হওয়া সম্ভব।

৩। তারা তিনজন একত্রে কাজ করতে ভালবাসেন এবং তাদের টিম বেশ ভাল একটা টিম।

৪। "প্লিজ" খুব সফল ছিল।

ধারণা থেকে ব্যবসা দাড় করানোর চেকলিস্ট-

১। চাহিদাকে অনুসরন করুন।

২। আপনার গ্রাহককে জানুন।

৩। অভিনব নয়, আরেকটু ভালো কিছু করার কথা ভাবুন।

৪। যে জিনিস নিজের পরিবারকে বোঝাতে পারবেন না, সে জিনিস আপনার কাস্টমারকেও বোঝাতে পারবেন না।

৫। ফোকাসে থাকুন, অনড় থাকুন।

তারা তিন জন তিন ফার্মে চাকুরীতে ঢুকেছিলেন। কিন্ত তারা প্রতি সপ্তাহে একসাথে হয়ে মিটিং করত কিভাবে তাদের শরবতের ব্যবসা চালু করবে সেটা নিয়ে। মূলধন সংগ্রহের জন্য তারা অনেক জাগায় যান, কিন্ত প্রায় সবাই তাদের ধারণার কথা শুনে বিদায় করে দেয়। কিন্ত তাদের চোখে-মুখে ছিল স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উদ্দাম আকাঙ্ক্ষা। তাদের আত্নবিশ্বাস দেখে অবশেষে এক ব্যক্তি তাদের মূলধন জোগান দেন। পরবর্তীতে তিন বন্ধু ব্যবসাতে সফল হওয়ার পর সেই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়, কেন আপনি তাদের টাকা দিয়েছিলেন, যেখানে সবাই তাদের 'শরবত' বিক্রির ধারণা শুনে ফিরিয়ে দিচ্ছিল? তিনি বলেন, "আমি আসলে তাদের চোখের দিকে তাকিয়েই টাকা দিয়েছিলাম এবং যখন তাদের টাকা দিয়েছিলাম তখন এটা ভেবে রেখেছিলাম যে এই টাকা গুলা জলেই যাচ্ছে।" ঐ মুলধন দাতার নাম ছিল মরিস। আপনি যখন কোন জিনিসের প্রতি নিবিষ্ট হবেন, আপনার চোখে-মুখে সেটার একটা প্রতিফলন ঘটবে।

মূলধন পেয়ে "ইনোসেন্ট" নাম দিয়ে তারা তাদের ব্যবসা শুরু করেন। মূলধনের জন্য তাদের অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছিল। তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। শুধুমাত্র "লাভ"র আশা না করে তারা তাদের কাস্টমারকে 'সঠিক' জিনিসটাই সরবরাহ করে যাচ্ছিলেন। লন্ডনের পর পুরো দেশে তাদের প্রডাক্ট ছড়িয়ে দেন। এরপর ইউরোপের দেশগুলাতেও তাদের প্রডাক্টস পৌছে যায়, সেটাও আরেক কাহিনী। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে ২৫০ এর অধিক কর্মী আছে। অথচ শুরুতে কাচামাল জোগাড় করা, আউটসোর্স দিয়ে প্রোডাক্ট বানানো, বাজারজাত করা - সবই ঐ তিন বন্ধু মিলে করত।

পুরো বইয়ে তাদের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তারিত বলা আছে। তাদের ধারণা নিয়ে মিটিং করা, চাকুরী ছেড়ে দেওয়া, মূলধন সংগ্রহ করা, আউটসোর্স করা, বোতলের লেবেল ডিজাইন, মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন দেওয়া, কাস্টমারদের রিভিউ/ফিডব্যাক নেওয়া, ইউরোপের দেশে ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটানো, নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পদ্ধতি, কাস্টার ধরে রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি বর্ণনা করা আছে। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা বা এন্টারপ্রেনার হন, আপনার অবশ্যই উচিৎ বইটা পড়া।

[বইটা 'ক্রিয়েটিভ কমন্স'র আন্ডারে প্রকাশ করা হয়েছে। মানে অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বইটা কপি ও যেকোন ভাবে বিতরণ করা যাবে]



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম