জ্বীন এ ধরা

তখন দুপুর বারোটা কি একটা বাজে বোধহয়... আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে বলল ‘আরিফ, ভুতে ধরার একটা জেনুইন কেইস পাইসি... যাবি?’ আমি বললাম “অবশ্যই যাব... কোথায়?... বেশী দূরে?” বন্ধু জানালো যে, আশুলিয়ার জিরাবো বাজার থেকে ২ মাইল দক্ষিণের একটা গ্রামে... যেতে হারডলি ১ ঘণ্টা লাগবে। আমি বললাম, ‘আমি রেডি... তুই উড়ায় আয়’।

এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা রওনা দিলাম। ওখানে যখন যেয়ে পৌছালাম তখন ৩ টা বাজে...ভরদুপুর।আশুলিয়া বাজ
ার থেকে আমাদের সোর্স কে উঠিয়ে নিলাম। যেতে যেতে যা শুনলাম তা হল, ‘সকাল থেকে একটা নারিকেল গাছের উপরে এক মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। গ্রামবাসীর বদ্ধমূল ধারনা ‘মহিলাকে জীনে ধরেছে আর স্বয়ং জীনই মহিলাকে গাছের উপরে উঠিয়েছে’। এই মহিলা ‘কে?’ তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে নাহ। তবে এই মহিলা যে এই গ্রামের কেউ না তা ঐ গ্রামবাসী শিওর।’

আমি মনে মনে ভাবলাম, ‘ধুর... এটা কোনও কেইস হল? বেহুদা টাইম নষ্ট করতে আসলাম। কোন না কোন পাগল গাছের উপর উঠে বসে আছে আর এটা দেখার জন্য আমি জরুরী কাজ ফেলে এতো দূর আসলাম... মনটাই খারাপ হয়ে গেলো’

যেহেতু কাছাকাছি এসেই পড়েছিলাম তাই ভাবলাম আচ্ছা দেখেই যাই পাগলটাকে। গ্রামের ভিতরে যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে, ওখান পর্যন্ত গাড়ি যায় নাহ। তাই অগত্যা আধা কিলোমিটার আগে গাড়ি রেখে রিক্সা করে যেতে হল... রাস্তা খুবই খারাপ।

যেয়ে দেখি একটা গাছের নিচে হালকা জটলা... খুব বেশী মানুষ হবে নাহ। আমি গাছের উপরে তাকিয়ে ধাক্কার মত খেলাম। দেখি যে, শাড়ি পড়া এক মহিলা ৬০ ফিট এর মত উচু খাঁড়া একটা তালগাছে উপরে, গাছ জড়িয়ে ধরে ঝুলে আছে, আর একটু পর পর হাসি দিচ্ছে। কলিজায় লাগার মত হাসি তার... যেই নিচ থেকে তার দিকে তাকাচ্ছে, সে গাছের উপর থেকে তার দিকেই তাকিয়ে হাসি দিচ্ছে।

আমি চোখ নামিয়ে লজিকালি চিন্তা করতে লাগলাম... কম করে হলেও ৬০/৭০ ফিট হবে গাছটা...এই মহিলা শাড়ি পরে কোনভাবেই এই তাল গাছে উঠতে পারবে না কারন, তাল গাছে উঠার যে একটাই টেকনিক আছে, সেটা আর যাই হোক, শাড়ি পরে হবে নাহ। উঠতে হলে মই লাগবে অবশ্যই। এখন এতো বড় ৬০/৭০ ফিটের মই এই গ্রামে কেনও, ঢাকা শহরেও নেই। ওঠার এক মাত্র উপায় হল ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি মই। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে আমার ছোট গাড়িই ঢুকলও না তো ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি কেমনে আসবে? আমি মনে মনে বললাম ‘ইয়া মাবূদ... সাম থিং ইজ ভেরি রং’

গাছের নিচে ২/৩ জন হুজুর পানি পড়া ছিটাচ্ছে আর ফিসফিস করে কোরানের আয়াত পড়ছে। আমি বন্ধু কে বললাম ‘চল আমি আর থাকব নাহ এখানে’। সেও বিড়বিড় করে বলল, ‘ দিস ইজ সামথিং সিরিয়াস...লেটস কুইট দিস কেইস অ্যান্ড লিভ দিজ প্লেইস রাইট এওয়ে’।

আমরা যে রিক্সা তে আসলাম সেই রিক্সাতেই ব্যাক করলাম... ফিরতে ফিরতে দেখলাম কিছু হুজুর জোরে জোরে ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়তে পড়তে ২০ ফিটের মত একটা মই নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছেন।

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Saturday, 24 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম