ঘুষ কাহিনী - ১

আজ সকাল শুরু হল পুলিশ ভাই কে ঘুষ দাওয়ার মধ্য দিয়ে। অপরাধ হল আমি সিট বেল্ট বাধিনি। প্রথমে মনে হয়েছিল খুব কড়া এক অফিসার এর পাল্লায় পরেছি... থলথলা শরীরের অধিকারী হলেও উনি আইন ছাড়া কিছুই বুঝেন নাহ... কিন্তু একটু পড়ে যখন উনি দেখল যে আমি ও কম কড়া নই;
কেইস খেতে রাজি আছি কিন্তু ২ নম্বরি সমঝোতায় যেতে রাজি নই তখন উনি হালকা নরম হলেন; আমাকে বুঝালেন যে আমার মত বাবু সাহেবদের কেইস খাওয়া শোভা পায় নাহ... কেইস খাওয়া মানেই কোর্টকাছারি, বি.আর.টি তে খামাকা শীতকালের অহেতুক দৌড়াদৌড়ি। তারচেয়ে বরং কোনও ডকুমেন্টেশনের ঝামেলায় না যেয়ে, জরিমানাটা উনাকে ক্যাশে দিয়ে দিলে উনি আমাকে মাফ করে দিবেন।

শেষ পর্যন্ত রফা দফা হল উনি ৫০০ টাকা পেলে আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি ও বললাম বেশ দিচ্ছি; পকেট থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে ওনাকে বললাম নেন। উনি জানালা দিয়ে গাড়ির ভিতরে হাত ঢুকালেন টাকাটা নেবার জন্য। আমি করলাম কি নোটটার এক কোনা শক্ত করে ধরে রাখলাম। উনি নোটটা টেনে জানালা দিয়ে বের করেন আর আমি টেনে আবার আমার কাছে নিয়ে আসি। আমি গম্ভীর মুখে নোটের কোনা ধরে বসে আছি... আর উনি অবাক মুখে টাকা টা টান দিয়ে কাছে নিচ্ছেন আর আমি টেনে ফিরিয়ে নিয়ে আসছি।

এভাবে ৫/৬ বার টানা টানা চলল। আসে পাশের গাড়ি, উনার পুলিশ কলিগসমগ্র, পথচারী মানুষ ততোক্ষণে তাকিয়ে দেখছে হচ্ছে টা কি এখানে। উনি ও টাকা ছাড়ছেন না, আমি ও ছাড়ছি না। পাশের এক অতি উৎসাহী রিকশাওলা কে বলতেও শুনলাম ‘উস্তাদ হাল ছাইরেন নাহ’... অগত্যা চক্ষু লজ্জার পরোয়া না করে উনি দুই হাতে ধরে নোটটা টান দিলেন। বেচারার কুতাকুতি দেখে আমি হাল ছেড়ে দিলাম... নে বাবা রাখ তোর ৫০০ টাকা।

আমি গাড়ি চালিয়ে চলে যেতে যেতে ব্যাক মিররে দেখলাম উনার থলথলা শরীর হতবম্ভ হয়ে তখনও আমার গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মত ঘুসদাতার পাল্লায় মনেহয় উনি তার জীবনে আর পড়েনি...

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে।]

ছবিঃ সংগৃহীত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম