চক্ষু দান

ঢাকার ভিতরে কোনও ঘুরতে যাবার জায়গা নেই বিধায় বাধ্য হয়েই মাসে ১/২ বার মেয়ে কে নিয়ে গুলাশানের ওয়ান্ডারল্যান্ড এ যাই। যদিও প্রচণ্ড অপরিষ্কার একটা জায়গা... কিন্তু আমার মেয়ে ওখানে গেলে প্রচণ্ড রকম খুশি হয়।

গত সপ্তাহে গিয়েছি। মেয়ে টায়ার্ড হয়ে বসে বসে চিপস খাচ্ছে আর চার্জ নিচ্ছে আবার, আরেক দফা রাইডে উঠার জন্য। আমার ঠিক পাশে বসে ছিল আরেকজনের আব্বা। বয়স পঞ্চাশের উপর হবে। তার ছেলের বয়স কম করে হলেও ২৫ তো হবেই। আমি অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি ‘এই ধেম্রা কে নিয়ে এখানে আসার কি হল’? ছেলেটার আচরণও ঠিক স্বাভাবিক না... বাচ্চাদের মত। একবার বলছে, ‘আব্বা আমি এটাতে চরব না, ভয় লাগে’... তো একবার বলছে ‘বাবা ওত উপর থেকে তোমাকে দেখতে পুইট্টার মত লাগবে... আমি ওটাতে চরব’। একবার আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার মাকে আস্তে করে বলল, ‘আমি এরকম চিপস খাব’ আমি ভুরু কুঁচকে অন্য দিকে মনোযোগ দিলাম। ধেম্রা ছেলেটা তার মাকে নিয়ে উচু রাইডে উঠতে গেলো।

তার বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না, ও জন্ম থেকে অন্ধ ছিল’। গত সপ্তাহে একজন ডোনার খুঁজে পেয়েছি বলে ও এখন এই ২২ বছর পরে দেখতে পাচ্ছে। আমাদের বাড়ি কুমিল্লায়... ভাবলাম বাড়ি যাওয়ার আগে ছেলে কে ওয়ান্ডারল্যান্ড এ ঘুরিয়ে নিয়ে যাই’। আমার ইচ্ছে হল যে আমি এখনই ওই ছেলেটিকে যেয়ে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু ও ততক্ষনে উচু রাইডে উঠে তার পুইট্টা বাপ কে দেখছে আর হাত নাড়াচ্ছে। আমি ও হাত নাড়ালাম... সে আমাকে দেখে ও হাত নাড়ালো। ওর বাবার কাছে শুনলাম যে ‘ইসলামিয়া হাসপাতালে ওর অপারেশন হয়েছে... আর চোখ যোগাড় করেছে ‘ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট’ থেকে।

আমি পরের দিন অফিসে এসে ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউটে ফোন করলাম... ওরা বিকেলেই অফিসে এসে ওদের ফর্মে আমার সাইন নিয়ে গেলো, যেখানে লেখা ছিল যে, ‘আমি সজ্ঞানে আমার চোখ দুটো দান করলাম। আমার মৃত্যুর সাথে সাথে যদি চোখ অক্ষত থাকে তাহলে তারা এসে জানাজার আগেই আমার চোখটা তারা নিয়ে যাবে এবং সুবিধাবঞ্ছিত চক্ষুহীন কাউকে দান করে দিবে’ আমার একবিন্দুও আফসোস নেই।

হ্যাঁ... সত্যি বলতে একটা আফসোস আছে বটে... আফসোসটা হল যে, ‘আমার চোখ যার কাজে আসবে তার হাসিটা আমি দেখে যেতে পারব নাহ’

NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট  http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম