বিয়ের আগে বউকে গপ্প দিয়েছিলাম যে ‘সুইজারল্যান্ডের বাটারফ্লাই পার্কে’ নিয়ে যাব, কিন্তু বিয়ের পরে পরেই কাজের ব্যস্ততার কারনে ঐ দিকে আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। সময় স্বল্পতার কারনে ওকে সিঙ্গাপুর এর বাটারফ্লাই পার্কেই নিয়ে যাই। বিয়ে শেষ... সুতরাং এখন আর বাটারফ্লাই, সূর্যাস্ত এইসব খুব একটা আবেগ দেয় নাহ... তারপরেও কথা যখন দিয়েই ফেলেছিলাম, ওকে নিয়ে একদিন খুশি খুশি বাটারফ্লাই পার্কে যাই।
হোটেলে পৌঁছেই ফ্রন্ট ডেস্ককে ইনফরম করলাম যে, আমরা বাটারফ্লাই পার্কে যেতে ইচ্ছুক। হোটেল জানালো যে আগামীকাল সকালেই এই হোটেল থেকে একটা ট্রিপ যাবে বাটারফ্লাই পার্কে, যেখানের বেশিরভাগই নিউলি-মেরিড কাপলস। আমি ভাবলাম, খারাপ হবে নাহ ওদের সাথে গেলে। আমি ও নাম লেখালাম কালকের ট্রিপের জন্য।
সাত সকালে হাসি খুশি আমরা বাসে যেয়ে উঠেছি। আমার পা অনেক লম্বা (শরীরের তুলনায় লম্বা না, শরীরের আনুপাতিক হারেই লম্বা) তাই বাসের একদম শেষের সিটে যেয়ে খুশি খুশি বসেছি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি বেশিরভাগই সাদা চামড়া। আরও ভাল ভাবে দেখলাম যে আমি আর আমার বউ ছাড়া সবাই ইংলিশ স্পিকিং। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি আর কেও ছিল নাহ... এশিয়ান বলতে কিছু চাইনিজ আর জাপানিজ কাপলস ছিল। দেখতে দেখতেই এক বাংলাদেশি দম্পতি বাসে উঠল।
আমি সাথে সাথে বীথিকে আস্তে করে বললাম যে ‘এই শুনও, একজন বাঙালি দম্পতি আসছে... ওরা যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে বলব যে আমরা ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশি নাহ; সাত সকালে বেহুদা বাংলায় প্যাঁচাল পারতে ভাল লাগে নাহ। বুঝসও? আমরা ইন্ডিয়াতে থাকি... বাংলাদেশে না... OK??’। বীথি বলল যে ‘তোমাকে কোন দিক দিয়ে ইন্ডিয়ান মনে হয়?’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা যাও, এটা বলব যে আমি সাউথ ইন্ডিয়ান কিন্তু বিয়ে করেছি মিডল ইন্ডিয়ান মেয়ে কে... এবার খুশি?’
বাঙালি ভদ্রলোক বাসে উঠেই, আমাদেরকে দেখে হাসি দিয়ে সোজা আমার পাশে এসে বসে। আমি যতটা সম্ভব গম্ভীর মুখ করে থাকলাম, বীথি মোবাইল টিপাটিপি করতে লাগলো। ভদ্রলোক আমার ঠিক পাশে এসে বলল ‘স্লামালিকুম ভাই’। আমি মনে মনে সেই রকম বিরক্ত যে বেটা চেহারা দেখে কিভাবে ভেবেনিল যে আমি শিওর বাঙালি। আমি উত্তর দিলাম... ‘হ্যালো... আপ কাহাকে রেহনেকা হ্যাঁ’? বীথি ফিক করে হেসে উঠল তারপর মুখে লম্বা ওড়না টেনে, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলো। আমি বিথির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, বাঙালি ভাই এর সাথে কথা বলতে থাকলাম।
বাঙালি ভাই মনে হল যে আরও খুশি হল একজন ইন্ডিয়ান কে পেয়ে। উনি হিন্দি সিরিয়ালের বদৌলতেই হউক আর লিবারেশনের কারনেই হউক, ভালই কাজ চালানর মত হিন্দি বলতে পারে। আমি বানায় বানায় কথা বলতে হাঁপিয়ে উঠছি কিন্তু ভদ্রলোক একটু পর পর পুরো উদ্দমে নতুন নতুন প্রশ্ন করছে। যেমন...সাউথ ইন্ডিয়া এর জাতীয় খাবার কি?...জাতীয় ফুল কি?...সাউথ ইন্ডিয়া’র কুটির শিল্প কি?... এরকম হাজারো প্রশ্ন। এক পর্যায়ে ভদ্রলোকের স্ত্রী উনাকে বাংলায় বলে ও ফেলে যে ‘তুমি থামো তো... দেখছ না উনার স্ত্রী তোমার কথার জ্বালায় ঘুমাতেও পাড়ছে না, একটু পর পর কেঁপে উঠছে’।
হোটেল থেকে জুরং পার্ক যেতে ৪০ মিনিট লাগে। অলরেডি প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি উনাকে প্রায় কম করে হলেও সাউথ ইন্ডিয়ান রিলেটেড ১০০ এর বেশী প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবে এই সফরে একটা জিনিষ বেশ ভাল লাগলো যে, যখন উনি বুঝল যে আমি বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব একটা জানি নাহ, তখন উনি বাংলাদেশের ব্যাপারে বানিয়ে বানিয়ে চাপা মারতে থাকলো। দেশকে উপরে উঠাতে কে না চায়? উনার চাপা গুলো শুনতে ভালই লাগছিলো। জি.ডি.পি বাড়িয়ে বলা থেকে অনেক কিছুই সে বেশ বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলল। দেশের ব্যাপারে বাড়িয়ে বলা যায়... এতে গুনা হয় নাহ।
কিন্তু আমার সাউথ ইন্ডিয়া নিয়ে উনার আগ্রহ একটু পর পর যেন বেড়েই যাচ্ছিলো। আমি সাউথ ইন্ডিয়া নিয়ে যতটুকু জানি, তার থেকে উনি ই বেশী জানেন। যেমন, সুপারস্টার রাজানিকান্ত এর যে ৩ টা এতিম খানা আছে সাউথ ইন্ডিয়া তে... ঐ ৩ টা সাউথ পার্টের কোন কোন প্রদেশে তার নাম জানতে চাইল। ওইদিকে আমার বউ উনার কথার জ্বালায় একটু পর পর ঘোমটা মুখে দিয়ে কেপেই যাচ্ছে। রাজানিকান্ত এর এতিম খানার এড্রেস বলতে যাব এমন সময় পকেটে থাকা ফোন বেজে উঠল। আমি মনে মনে বললাম ‘শুকুর আলহামদুলিল্লাহ্... মানির মান আল্লাহ্ রাখে’... এই ফোন আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিলো। যতক্ষণ না বাস গন্তব্বে পৌঁছে, ততক্ষন আর ফোন রাখব নাহ। পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিয়ে দেখি যে ঢাকা থেকে আব্বা কল দিয়েছে। এখন আমার এন্টি আওয়ামেলীগ আব্বার সাথে হিন্দিতে কথা বলা শুরু করে দিলে উনি ওখান থেকেই আমাকে ফোনে ত্যাজ্য করে দিবেন। আর ফোনটা না ধরলে রাজানিকান্ত সাহেবের এর এতিম খানার এড্রেস আমাকে বলতেই হবে।
(গল্প এখানেই শেষ... এই গল্পের কোনও দ্বিতীয় পর্ব নেই)
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Thursday, 08 November 2012]
হোটেলে পৌঁছেই ফ্রন্ট ডেস্ককে ইনফরম করলাম যে, আমরা বাটারফ্লাই পার্কে যেতে ইচ্ছুক। হোটেল জানালো যে আগামীকাল সকালেই এই হোটেল থেকে একটা ট্রিপ যাবে বাটারফ্লাই পার্কে, যেখানের বেশিরভাগই নিউলি-মেরিড কাপলস। আমি ভাবলাম, খারাপ হবে নাহ ওদের সাথে গেলে। আমি ও নাম লেখালাম কালকের ট্রিপের জন্য।
সাত সকালে হাসি খুশি আমরা বাসে যেয়ে উঠেছি। আমার পা অনেক লম্বা (শরীরের তুলনায় লম্বা না, শরীরের আনুপাতিক হারেই লম্বা) তাই বাসের একদম শেষের সিটে যেয়ে খুশি খুশি বসেছি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি বেশিরভাগই সাদা চামড়া। আরও ভাল ভাবে দেখলাম যে আমি আর আমার বউ ছাড়া সবাই ইংলিশ স্পিকিং। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি বা বাংলাদেশি আর কেও ছিল নাহ... এশিয়ান বলতে কিছু চাইনিজ আর জাপানিজ কাপলস ছিল। দেখতে দেখতেই এক বাংলাদেশি দম্পতি বাসে উঠল।
আমি সাথে সাথে বীথিকে আস্তে করে বললাম যে ‘এই শুনও, একজন বাঙালি দম্পতি আসছে... ওরা যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে বলব যে আমরা ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশি নাহ; সাত সকালে বেহুদা বাংলায় প্যাঁচাল পারতে ভাল লাগে নাহ। বুঝসও? আমরা ইন্ডিয়াতে থাকি... বাংলাদেশে না... OK??’। বীথি বলল যে ‘তোমাকে কোন দিক দিয়ে ইন্ডিয়ান মনে হয়?’ আমি বললাম, ‘আচ্ছা যাও, এটা বলব যে আমি সাউথ ইন্ডিয়ান কিন্তু বিয়ে করেছি মিডল ইন্ডিয়ান মেয়ে কে... এবার খুশি?’
বাঙালি ভদ্রলোক বাসে উঠেই, আমাদেরকে দেখে হাসি দিয়ে সোজা আমার পাশে এসে বসে। আমি যতটা সম্ভব গম্ভীর মুখ করে থাকলাম, বীথি মোবাইল টিপাটিপি করতে লাগলো। ভদ্রলোক আমার ঠিক পাশে এসে বলল ‘স্লামালিকুম ভাই’। আমি মনে মনে সেই রকম বিরক্ত যে বেটা চেহারা দেখে কিভাবে ভেবেনিল যে আমি শিওর বাঙালি। আমি উত্তর দিলাম... ‘হ্যালো... আপ কাহাকে রেহনেকা হ্যাঁ’? বীথি ফিক করে হেসে উঠল তারপর মুখে লম্বা ওড়না টেনে, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলো। আমি বিথির দিকে মনোযোগ না দিয়ে, বাঙালি ভাই এর সাথে কথা বলতে থাকলাম।
বাঙালি ভাই মনে হল যে আরও খুশি হল একজন ইন্ডিয়ান কে পেয়ে। উনি হিন্দি সিরিয়ালের বদৌলতেই হউক আর লিবারেশনের কারনেই হউক, ভালই কাজ চালানর মত হিন্দি বলতে পারে। আমি বানায় বানায় কথা বলতে হাঁপিয়ে উঠছি কিন্তু ভদ্রলোক একটু পর পর পুরো উদ্দমে নতুন নতুন প্রশ্ন করছে। যেমন...সাউথ ইন্ডিয়া এর জাতীয় খাবার কি?...জাতীয় ফুল কি?...সাউথ ইন্ডিয়া’র কুটির শিল্প কি?... এরকম হাজারো প্রশ্ন। এক পর্যায়ে ভদ্রলোকের স্ত্রী উনাকে বাংলায় বলে ও ফেলে যে ‘তুমি থামো তো... দেখছ না উনার স্ত্রী তোমার কথার জ্বালায় ঘুমাতেও পাড়ছে না, একটু পর পর কেঁপে উঠছে’।
হোটেল থেকে জুরং পার্ক যেতে ৪০ মিনিট লাগে। অলরেডি প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই আমি উনাকে প্রায় কম করে হলেও সাউথ ইন্ডিয়ান রিলেটেড ১০০ এর বেশী প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তবে এই সফরে একটা জিনিষ বেশ ভাল লাগলো যে, যখন উনি বুঝল যে আমি বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব একটা জানি নাহ, তখন উনি বাংলাদেশের ব্যাপারে বানিয়ে বানিয়ে চাপা মারতে থাকলো। দেশকে উপরে উঠাতে কে না চায়? উনার চাপা গুলো শুনতে ভালই লাগছিলো। জি.ডি.পি বাড়িয়ে বলা থেকে অনেক কিছুই সে বেশ বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলল। দেশের ব্যাপারে বাড়িয়ে বলা যায়... এতে গুনা হয় নাহ।
কিন্তু আমার সাউথ ইন্ডিয়া নিয়ে উনার আগ্রহ একটু পর পর যেন বেড়েই যাচ্ছিলো। আমি সাউথ ইন্ডিয়া নিয়ে যতটুকু জানি, তার থেকে উনি ই বেশী জানেন। যেমন, সুপারস্টার রাজানিকান্ত এর যে ৩ টা এতিম খানা আছে সাউথ ইন্ডিয়া তে... ঐ ৩ টা সাউথ পার্টের কোন কোন প্রদেশে তার নাম জানতে চাইল। ওইদিকে আমার বউ উনার কথার জ্বালায় একটু পর পর ঘোমটা মুখে দিয়ে কেপেই যাচ্ছে। রাজানিকান্ত এর এতিম খানার এড্রেস বলতে যাব এমন সময় পকেটে থাকা ফোন বেজে উঠল। আমি মনে মনে বললাম ‘শুকুর আলহামদুলিল্লাহ্... মানির মান আল্লাহ্ রাখে’... এই ফোন আজকে আমাকে বাঁচিয়ে দিলো। যতক্ষণ না বাস গন্তব্বে পৌঁছে, ততক্ষন আর ফোন রাখব নাহ। পকেট থেকে ফোন বের করে হাতে নিয়ে দেখি যে ঢাকা থেকে আব্বা কল দিয়েছে। এখন আমার এন্টি আওয়ামেলীগ আব্বার সাথে হিন্দিতে কথা বলা শুরু করে দিলে উনি ওখান থেকেই আমাকে ফোনে ত্যাজ্য করে দিবেন। আর ফোনটা না ধরলে রাজানিকান্ত সাহেবের এর এতিম খানার এড্রেস আমাকে বলতেই হবে।
(গল্প এখানেই শেষ... এই গল্পের কোনও দ্বিতীয় পর্ব নেই)
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Thursday, 08 November 2012]
