বাথরুমের উপসংহার

আহ …প্রায় সাত বছর পর পুরনো জায়গায় এসে অনেক সৃতি মনে পরে যাচ্ছে। কিছু আছে মজার সৃতি, কিছু আছে দুঃখের, তো কিছু আছে গোপন। এরকম একটা গোপন সৃতি কেনও জানি আজকে শেয়ার না করে পাড়ছিই নাহ :পি। এম.বি.এ করতে এসে প্রথম ৩ মাস আমি একটা ইউনিভার্সিটির ডর্মেটরিতে উঠি। এখানে ছাত্রদের রুমের সাথে এটাটচড বাথরুম ছিল নাহ। ৬ টা সিঙ্গেল রুমের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য রুমের দরজার একটু পাশেই একটা কমন বাথরুম এরিয়া।

ডর্মেটরিতে এসেই প্রথম যে প্রবলেম এ পড়লাম তা হল এখানের কমডের সাথে কোনও ‘মুসলিম সাওয়ার’ নেই। টয়লেট পেপার ব্যবহার করায় কোনদিনই খুব একটা অভ্যস্ত ছিলাম নাহ। আর অক্সফোর্ড শহরে বদনাও বা পাবো কোথায়!...বদনা কিনতে হলে যেতে হবে পূর্ব লন্ডনের বাঙালি পাড়ায় (সেই...টাওয়ার হ্যামলেটসের হোয়াইট চ্যাপেলে), যেখানে কিনা এখান থেকে যেতে কম করে হলেও ঘণ্টা দুয়েক লাগবে... আর ওটা (!) কিনতে এতদূর যাওয়া ফিজিবল ও হবে নাহ!

প্রথম প্রথম বুদ্ধি করে রুম থেকে ২ লিটার কোক এর খালি বোতল নিয়ে বাথরুমে যেতাম। যাওয়া বা আসার পথে কেউ যেন বোতলটা না দেখতে পায় সেজন্য টাওয়েল দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে যেতাম। বগল দাবা করে যাওয়ার পথে প্লাস্টিকের বোতলের টেপ খাওয়ার শব্দ ছাড়া আর কোনও বিশেষ সমস্যা হত নাহ। প্রথম এক মাস বোতলই ভরসা ছিল।

একদিন, সপ্তাহের কিছু টুকটাক জিনিষপত্র কিনতে সিটি সেন্টারের গ্রসারি শপে গিয়েছি। কেনাকাটা করে ফিরতে যাব এমন সময় চোখে পড়ল ‘কেতলি’... চা বানানর কেতলি; আস্তে করে ওটার কাছে গেলাম। জিনিষটা ঐ দিনই ভাল মত লক্ষ্য করলাম যে হাতলের অবস্থানগত পার্থক্য ছাড়া, ‘বদনার’ সাথে ‘কেতলির’ ভালই মিল আছে। সমস্যা হল ওই দোকানে ছিল সব ইলেকট্রিক কেতলি, পিছন দিয়ে তার বের করা। আমি ফিলিপিনো সেলসগার্ল কে বললাম, ‘তার ছাড়া... আই মিন ম্যানুয়াল কোনও কেতলি নাই’? উনি অনেক খুঁজে একটা তার ছাড়া কেতলি বের করলো। ৯৯ পাইন্ড দাম কারন যদিও এটার তার নেই তবুও এটা নাকি অত্যাধুনিক কেতলি। তার বের করা গুলোর দাম ৫০ পাউন্ডের বেশী না কিন্তু এটা কেনও ৯৯ পাইন্ড তার খুব একটা কনভিন্সিং উত্তর সেলসগার্ল দিতে পারল নাহ। আমি বললাম সমস্যা নেই। আমি কিনব। প্যাক ইট হানি!

বাসায় এসে খুব খুশি... আজ শান্তি মত উপসংহার টানা যাবে। আর কেউ এটা নিয়ে আমায় বাথরুমে ঢুকতে দেখলেও সমস্যা নেই। সবাই ভাববে হয়তো কল থেকে গরম পানি আনতে যাচ্ছি রুমে চা বানাবো বলে। ঘন ঘন কেতলি নিয়ে বাথরুমে গেলেও সমস্যা নাই, সবাই বরং ভাব্বে, ‘ছেলেটা কতই না পড়াশোনা করে, পড়াশোনার প্রেসারের জন্য তার একটু পর পর চা না খেলেই নয়’। বাজার শেষ করে রুমে এসেই খুশিতে লাথি দিয়ে কোক এর বোতল জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম।

সময় এলো কেতলি নিয়ে বাথরুমে যাবার। মুডের উপরে হাতে করে কেতলি নিয়ে ঢুকলাম বাথরুমে। কেতলিতে পানি ভরে কমডের পাশে রেখে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ইউরেকা ভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করছি, ‘আহ এই বুদ্ধিটা এতদিন কেনও এলো নাহ? ২ লিটারের কোক এর বোতল থেকে এই ৩ লিটারের কেতলি কতই না হ্যান্ডি’।

চিন্তা ভাবনা শেষ করে পায়ের কাছ থেকে খুশি খুশি কেতলি ওঠাতে গিয়ে দেখি ওটার ভিতরে টগবগ করে বলপ উঠছে। একি?? ধোঁয়া ওঠা কেতলির হাতল ধরে কোনমতে কেতলির গায়ের লেখা পড়ে দেখলাম যে ‘এই সোলার পাওয়ারে চলা কেতলিতে পানি রাখলেই এটা অটোমেটিক পানি গরম করে দিবে। বলপ ওঠা শেষ হলে কেতলি অটোমেটিক থামবে... আবার, কেতলির পানি ঠাণ্ডা হওয়া শুরু হবা মাত্রই এটা অটোমেটিক পানিকে গরম করে দিবে; কেতলির বিশেষত্বই হল এটাতে একবার পানি ভরলে ওটা অল টাইম পানিকে ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখবে। এ দেখি বিশাল সাইন্স...

অক্সফোর্ড শহরের বাথরুমে বসে সেদিনই সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করলাম ‘সাইন্স আসলেই আজ ধরা ছোঁয়ার অনেকক বাইরে’

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Thursday, 08 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম