ভয়ের গল্প বলে ভয় দেখানোকে আমি মোটামটি আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলাম ...আমার এখনো মনে আছে, আমি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরের একটি বিজনেস স্কুলে (ব্রুক্সস বিজনেস স্কুলে) যখন এম.বি.এ করি তখন আমার ডর্মেটরি র সহপাঠীরা আমার ভয়ের গল্পের খুব ফ্যান ছিল।
প্রায় প্রতি মাসেই আমার রুমে, ভয়ের গল্পের আসর বসাতাম। ১৫/২০ জন সাদা চামড়াকে এক সাথে ভয় দেখানো চাট্টিখানি ব্যাপার নাহ। আমি ও দেশীও ভুতের গল্প ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে গড় গড় করে বলে যেতাম। এমনও হয়েছে যে আমরা সবাই ফ্রাইডে ইভিনিং এ ডিনারের পর গল্প করতে বসেছি আমার রুমে, অন্যদের প্ল্যান হল আরেফের গল্প শুনে তারপর ডিস্কতে যাবে কিন্তু গল্প শেষ হবার পর কারও নড়াচড়া নেই। আমি ও মাশাল্লাহ কেনও জানি বানিয়ে বানিয়ে ভালই গল্প বলতে পারতাম। আমি যে স্কেলের ভয় পেতাম সেই স্কেলেই বানিয়ে-মিলিয়ে বানিয়ে-মিলিয়ে গল্প বলতাম। যেমন, বন্ধুমহলের মেয়েদের একটা গ্রুপ আমার গল্প শোনার পর থেকে ডর্মেটরির লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। (যারা অক্সফোর্ড শহরে গিয়েছেন বা যাননি তাদের প্রত্যেকেই বলি, অক্সফোর্ড একটি সম্পূর্ণরূপে এডুকেশনাল শহর বিধায় এখানে প্রচুর গাছ পালা… একটি ডর্মেটরি থেকে আরেকটি ডর্মেটরি যেতেও কম করে হলে ২/৩ তা বড় বড় গাছ পড়বে... প্রচণ্ডও গাছপালা সমৃদ্ধ খোলামেলা; পড়াশোনার জন্য অপূর্ব একটা শহর)। আমার ডর্মেটরি থেকে লন্ড্রিরুম হেঁটে যেতে প্রায় ৪/৫ মিনিট লাগে। সবাই সাধারনত রাতের বেলায় কাপড় ধুতে যায়। আমি একদিন বললাম যে আমি লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়ার পড়ে শুকনোর জন্য ড্রায়ারে কাপড় দেয়ার পড়ে যখন ড্রায়ার থেকে কাপড় বের করতে যাই, তখন দেখি কাপড়ের সাথে লম্বা লম্বা চুল আসছে। আমি ভাবলাম ঘটনা কি? ড্রায়ারগুলো ছিল ফ্লোর লেভেলে তাই যে নিচু হয়ে দেখব যে ভিতরে কি তার ও উপায় নেই। আমি আবার ড্রায়ারে হাত ঢুকালাম শুকনো কাপড় গুলো বের করার জন্য... ওমা আবারও দেখি কিছু বেশ কিছু লম্বা লম্বা চুল আসছে। আমি করলাম কি, হাঁটু গেঁড়ে উকি দিলাম ড্রায়ারের ভিতরে। দেখি যে একটা বারবি ডলকে যেন আগে থেকেই ভিতরে রেখে দিয়েছিল। চিন্তা করলে বিষয় টা কিছুটা ভয়ের আবার ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে ব্যাপারটা কোনই ভয়ের নাহ। আমি গল্প বলার সময় করলাম কি বারবি ডলের ‘বডি’ বাদ দিয়ে দিলাম... আর বানিয়ে বানিয়ে বললাম যে তাকিয়ে দেখি একটা বারবি ডলের ন্যাড়া মাথা পড়ে আছে। আমি নিচু হয়ে হাত দিয়ে মাথাটা বের করার চেষ্টা করছি আর পারছি নাহ। যেহেতু মাথায় চুল নেই আর মাথাটা গোল আবার ওয়াশিং মেশিনও গোল, তাই ধরাই যাচ্ছিলো নাহ। কোনমতে ২ আঙ্গুলদিয়ে মাথাটা ধরে আমি লন্ড্রি রুমের ডাস্টবিনে মাথাটি ফেলতে যেয়ে দেখি ওখানে অনেকগুল মাথা পড়ে আছে। একটিরও বডি নেই। আমি করলাম কি তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে রুমে চলে আসলাম। আসার পথে দেখলাম যে ৩/৪ টি কালো কাক রাস্তায় বেঞ্চের উপর বসে আছে এবং তারা প্রত্যেকই একটু করে মাথা ছাড়া বারবির বডি খামচে ধরে আছে (গল্প শেষ)... এখন অক্সফোর্ড শহরে কাক এল কোথা থেকে তা কারও মাথায় আসবে নাহ। গল্প টা ভুতের ও না আবার খুব একটা ভয়েরও না কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি আমি এমন করে ফেলতাম আর গল্প বলার সময়, আমি চোখ মুখ চোখ এমন করে গল্পগুলো বলতাম যে আমি নিজেই মাঝে মাঝে নিজেকে ভয় পেয়ে যেতাম। এভাবে আমি আস্তে আস্তে ‘ডর্মেটরির হিরো’ (কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার ‘লোকাল গার্ডিয়ান’) হয়ে গেলাম। কিন্তু কেউ আমাকে ভয় পেতো না বরং আমার কাছে থাকলে বুকে বল ফিরে পেতো। সবার হয়ত ধারনা হয়ে গিয়েছিল যে আমি হলাম ‘ভয়ের বাপ’... আমার কাছে থাকলে আবার আবার ভয় কিসের? সবচেয়ে বেশী ভয় পেতো চাইনিজ জাপানিজ ফিলিপিনো গুলো। এমনও অনেকবার হয়েছে যে রাত ১১ টার দিকে আমার রুমের সামনে ৪/৫ জন ফুলসেট ফুলেল নাইটড্রেস পড়া নাক বোঁচা গ্রুপ এসে হাজির। ওরা নাকি ভয় পেয়েছে তাই আমার সাথে ঘুমাবে। আরে বাপ ভয় পেয়েছিস ভাল কথা, ভয় পেয়ে তোরা জাতিগত ভাবে একত্রিত হয়েছিস তাও ভাল কথা... এখন তোরা একত্রিত হয়ে তোদের কারও রুমে থাক। না... তা থাকবে নাহ... আমার রুমে বসে বসেই ওরা ল্যাপটপ দিয়ে ফিলিপিনো হাসির ছবি দেখবে ভয় কাটানোর জন্য। ( ঐ যে বললাম ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ :p)
যা বলছিলাম, এশিয়ান ছাত্ররা বেশী ভয় পেতো আর সব চেয়ে কম ভয় পেতো রাশিয়ান ছাত্ররা। তবে মাশাল্লাহ আমি একদিন এক রাশিয়ান ছাত্রদের গ্রুপকেও সেই রকম ভয় দেখাতে পেরেছিলাম। এমন ভয় পেয়েছিল যে ওরা ওদের সাথে করে নিয়ে আসা ভদকার বোতলের জিনিষ আমার বাথরুমে ফেলে দিয়ে, ঐ বোতল আমার বাথরুমেই ভেঙ্গে ওটাকে অস্ত্র বানিয়ে ওদের মধ্যকার এক লিডার পুরো গ্রুপকে লিড করে নিয়ে যায় আমার রুম থেকে রাত ১২ টায়... পাছে তাদের গাছ থেকে নেমে কেউ আক্রমন করে তাই এই অস্ত্র। পুরাই ডিয়ারিং জাতি।
যাই হোক আমার এই ভয় দেখানর প্রতিভা দেশে ফেরার পর প্রায় ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছে। বিয়ে, বাচ্চা, স্কুল, কাজ এতসবের ভিড়ে ইদানিং কাউকে ভয় দেখানই হচ্ছে নাহ। তাই ভাবছি... অপেক্ষায় থাকুন।
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Thursday, 08 November 2012]
প্রায় প্রতি মাসেই আমার রুমে, ভয়ের গল্পের আসর বসাতাম। ১৫/২০ জন সাদা চামড়াকে এক সাথে ভয় দেখানো চাট্টিখানি ব্যাপার নাহ। আমি ও দেশীও ভুতের গল্প ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে গড় গড় করে বলে যেতাম। এমনও হয়েছে যে আমরা সবাই ফ্রাইডে ইভিনিং এ ডিনারের পর গল্প করতে বসেছি আমার রুমে, অন্যদের প্ল্যান হল আরেফের গল্প শুনে তারপর ডিস্কতে যাবে কিন্তু গল্প শেষ হবার পর কারও নড়াচড়া নেই। আমি ও মাশাল্লাহ কেনও জানি বানিয়ে বানিয়ে ভালই গল্প বলতে পারতাম। আমি যে স্কেলের ভয় পেতাম সেই স্কেলেই বানিয়ে-মিলিয়ে বানিয়ে-মিলিয়ে গল্প বলতাম। যেমন, বন্ধুমহলের মেয়েদের একটা গ্রুপ আমার গল্প শোনার পর থেকে ডর্মেটরির লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। (যারা অক্সফোর্ড শহরে গিয়েছেন বা যাননি তাদের প্রত্যেকেই বলি, অক্সফোর্ড একটি সম্পূর্ণরূপে এডুকেশনাল শহর বিধায় এখানে প্রচুর গাছ পালা… একটি ডর্মেটরি থেকে আরেকটি ডর্মেটরি যেতেও কম করে হলে ২/৩ তা বড় বড় গাছ পড়বে... প্রচণ্ডও গাছপালা সমৃদ্ধ খোলামেলা; পড়াশোনার জন্য অপূর্ব একটা শহর)। আমার ডর্মেটরি থেকে লন্ড্রিরুম হেঁটে যেতে প্রায় ৪/৫ মিনিট লাগে। সবাই সাধারনত রাতের বেলায় কাপড় ধুতে যায়। আমি একদিন বললাম যে আমি লন্ড্রিতে কাপড় ধোয়ার পড়ে শুকনোর জন্য ড্রায়ারে কাপড় দেয়ার পড়ে যখন ড্রায়ার থেকে কাপড় বের করতে যাই, তখন দেখি কাপড়ের সাথে লম্বা লম্বা চুল আসছে। আমি ভাবলাম ঘটনা কি? ড্রায়ারগুলো ছিল ফ্লোর লেভেলে তাই যে নিচু হয়ে দেখব যে ভিতরে কি তার ও উপায় নেই। আমি আবার ড্রায়ারে হাত ঢুকালাম শুকনো কাপড় গুলো বের করার জন্য... ওমা আবারও দেখি কিছু বেশ কিছু লম্বা লম্বা চুল আসছে। আমি করলাম কি, হাঁটু গেঁড়ে উকি দিলাম ড্রায়ারের ভিতরে। দেখি যে একটা বারবি ডলকে যেন আগে থেকেই ভিতরে রেখে দিয়েছিল। চিন্তা করলে বিষয় টা কিছুটা ভয়ের আবার ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করলে ব্যাপারটা কোনই ভয়ের নাহ। আমি গল্প বলার সময় করলাম কি বারবি ডলের ‘বডি’ বাদ দিয়ে দিলাম... আর বানিয়ে বানিয়ে বললাম যে তাকিয়ে দেখি একটা বারবি ডলের ন্যাড়া মাথা পড়ে আছে। আমি নিচু হয়ে হাত দিয়ে মাথাটা বের করার চেষ্টা করছি আর পারছি নাহ। যেহেতু মাথায় চুল নেই আর মাথাটা গোল আবার ওয়াশিং মেশিনও গোল, তাই ধরাই যাচ্ছিলো নাহ। কোনমতে ২ আঙ্গুলদিয়ে মাথাটা ধরে আমি লন্ড্রি রুমের ডাস্টবিনে মাথাটি ফেলতে যেয়ে দেখি ওখানে অনেকগুল মাথা পড়ে আছে। একটিরও বডি নেই। আমি করলাম কি তাড়াতাড়ি কাপড় নিয়ে রুমে চলে আসলাম। আসার পথে দেখলাম যে ৩/৪ টি কালো কাক রাস্তায় বেঞ্চের উপর বসে আছে এবং তারা প্রত্যেকই একটু করে মাথা ছাড়া বারবির বডি খামচে ধরে আছে (গল্প শেষ)... এখন অক্সফোর্ড শহরে কাক এল কোথা থেকে তা কারও মাথায় আসবে নাহ। গল্প টা ভুতের ও না আবার খুব একটা ভয়েরও না কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি আমি এমন করে ফেলতাম আর গল্প বলার সময়, আমি চোখ মুখ চোখ এমন করে গল্পগুলো বলতাম যে আমি নিজেই মাঝে মাঝে নিজেকে ভয় পেয়ে যেতাম। এভাবে আমি আস্তে আস্তে ‘ডর্মেটরির হিরো’ (কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার ‘লোকাল গার্ডিয়ান’) হয়ে গেলাম। কিন্তু কেউ আমাকে ভয় পেতো না বরং আমার কাছে থাকলে বুকে বল ফিরে পেতো। সবার হয়ত ধারনা হয়ে গিয়েছিল যে আমি হলাম ‘ভয়ের বাপ’... আমার কাছে থাকলে আবার আবার ভয় কিসের? সবচেয়ে বেশী ভয় পেতো চাইনিজ জাপানিজ ফিলিপিনো গুলো। এমনও অনেকবার হয়েছে যে রাত ১১ টার দিকে আমার রুমের সামনে ৪/৫ জন ফুলসেট ফুলেল নাইটড্রেস পড়া নাক বোঁচা গ্রুপ এসে হাজির। ওরা নাকি ভয় পেয়েছে তাই আমার সাথে ঘুমাবে। আরে বাপ ভয় পেয়েছিস ভাল কথা, ভয় পেয়ে তোরা জাতিগত ভাবে একত্রিত হয়েছিস তাও ভাল কথা... এখন তোরা একত্রিত হয়ে তোদের কারও রুমে থাক। না... তা থাকবে নাহ... আমার রুমে বসে বসেই ওরা ল্যাপটপ দিয়ে ফিলিপিনো হাসির ছবি দেখবে ভয় কাটানোর জন্য। ( ঐ যে বললাম ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ :p)
যা বলছিলাম, এশিয়ান ছাত্ররা বেশী ভয় পেতো আর সব চেয়ে কম ভয় পেতো রাশিয়ান ছাত্ররা। তবে মাশাল্লাহ আমি একদিন এক রাশিয়ান ছাত্রদের গ্রুপকেও সেই রকম ভয় দেখাতে পেরেছিলাম। এমন ভয় পেয়েছিল যে ওরা ওদের সাথে করে নিয়ে আসা ভদকার বোতলের জিনিষ আমার বাথরুমে ফেলে দিয়ে, ঐ বোতল আমার বাথরুমেই ভেঙ্গে ওটাকে অস্ত্র বানিয়ে ওদের মধ্যকার এক লিডার পুরো গ্রুপকে লিড করে নিয়ে যায় আমার রুম থেকে রাত ১২ টায়... পাছে তাদের গাছ থেকে নেমে কেউ আক্রমন করে তাই এই অস্ত্র। পুরাই ডিয়ারিং জাতি।
যাই হোক আমার এই ভয় দেখানর প্রতিভা দেশে ফেরার পর প্রায় ম্রিয়মাণ হয়ে গিয়েছে। বিয়ে, বাচ্চা, স্কুল, কাজ এতসবের ভিড়ে ইদানিং কাউকে ভয় দেখানই হচ্ছে নাহ। তাই ভাবছি... অপেক্ষায় থাকুন।
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Thursday, 08 November 2012]
