ছেলে-মেয়ে সবার জন্য এটা প্রয়োজনীয়। বিয়ের ক্ষেত্রে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে আর তা হচ্ছে, 'জগতের কেউই পারফেক্ট না।' আপনি যেমন একটা পারফেক্ট মেয়েকে খুজবেন, সেই মেয়েও কিন্ত একই ভাবে খুজবে যেন তার বরটা যেন পারফেক্ট হয়।
তাই আপনি যদি বলেন আমার সব দিক থেকে সবকিছু ১০০% পূর্ণ হওয়া লাগবে, তাহলে কোনদিনই বিয়ে হবেনা। সারাজীবন শুধু চ্যাটিং-ডেটিং করে যাবেন, আর পাপ জমাবেন। কিন্ত আসল কাজ কিছুই হবেনা। এজন্য দুইটা লিস্ট করতে হবে। প্রায়োরিটি বা গুরুত্বের দিক থেকে লিস্ট দুইটা করতে হবে।
প্রথম লিস্টে কিছু জিনিস থাকবে যে এই জিনিস গুলা তার মধ্যে অবশ্যই থাকাই লাগবে। না হলে বিয়ে করব না। আর দ্বিতীয় লিস্টটা থাকবে অপশনাল হিসাবে যে এগুলা না হলেও চলবে তবে হলে ভাল হয়।
যেমনঃ প্রথম লিস্টে (আবশ্যক লিস্ট) রাখা যেতে পারে- সৌন্দর্য ও ধার্মিকতা (Beauty and Religiousness)। যে এগুলা মাস্ট থাকাই লাগবে।
আর দ্বিতীয় লিস্টে (ঐচ্ছিক লিস্ট) রাখা যেতে পারেঃ যে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড যেন ভাল হয়, তার উচ্চতা যেন যথেষ্ঠ থাকে - আমি লম্বা তাকেও লম্বা হতে হবে, সে যেন উচ্চ শিক্ষিত হয়, সে যেন স্লিম হয় এরকম আর কি।
লিস্টটা অবশ্যই ইসলামীক চাহিদা অনুযায়ী হতে হবে। তারপর আবশ্যক লিস্ট দেখার পর ঐচ্ছিক লিস্ট থেকে যতগুলা চাহিদা পূরণ হলে হল, না হলে ঐচ্ছিক লিস্ট বাদ দিয়ে সামনে আগানো বা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। ঐচ্ছিক লিস্টটা হবে এমন যে হলে চাই, না হলে আমি ছাড় দিব।
এরপর তার ব্যাপারে ইনকোয়ারী করলেন, মিটিং করলেন, ডেটিং করলেন, লম্বা সময় ধরে ভাবলেন, মুরব্বীদের সাথে আলোচনা করলেন - তারপরও অনিশ্চয়তা। ফাইনাল ডিসিসানে আসতে পারতেছেন না।
তারপর ডিসিসান নেয়ার ক্ষেত্রে ইস্তেখারা করতে হবে। ইস্তেখারা মানে কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। নিজে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার পর আল্লাহর কাছে সঠিক ও কল্যানকর সিদ্ধান্তের জন্য আবেদন করা। ইস্তেখারা বিষয়ে বোখারীতে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এটা শতভাগ সহীহ। হযরত জাবের (রাঃ) বলন- মহানবী (সাঃ) যেভাবে আমাদের কুরআন শিখাতেন সেই ভাবে আমাদের ইস্তেখারা শিক্ষাও দিতেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: “আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরমর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।“ [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
কাতাদা(রহ:) বলেন: “মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরষ্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফীক দেন।”
ইস্তেখারার নিয়ম:
তো ইস্তেখারার নিয়ম হল রাতে ঘুমানোর আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর কুল আইয়োহাল কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পড়া।
তারপর সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালা বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করবেন:
হে আ্ল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই –আপনার ইলমের সাহায্যে। আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে। আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে। আপনি সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী –আমার কোন ক্ষমতা নাই। আপনি সর্বজ্ঞ – আমি কিছুই জানি না। আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।
“হে আল্লাহ, আপনার ইলমে এই বিয়ে যদি আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে দুনিয়া ও আখিরাতের দিক থেকে ভাল হয়, তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন। পক্ষান্তরে আপনার ইলমে যদি এই বিয়ে আমার দ্বীন আমার জীবন-জিবীকা ও কর্মফলের দিক থেকে এবং দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয় তবে আমার ধ্যান-কল্পনা থেকে একাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন। আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন। (বুখারী )
এরপর ঘুমিয়ে যাবেন। এরপর আপনি ঐ রাতেই যে আপনার সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন, এটা একেবারে নিশ্চয়তা দেয়া যায়না। ইস্তেখারায় একবার কাজ না হলে ৫ বার ৭ বারও করা লাগতে পারে। ইনশাল্লাহ এরমধ্যে কিছু না কিছু ইঙ্গিত পেয়ে যাবেন। যেটা আপনাকে ফাইনাল ডিসিসান নিতে সাহায্য করবে। তারপরও না বুঝতে পারলে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আপনার শরীরের কেমন যেন উত্থাল-পাতাল ভাব আসতে পারে যে উমুকের সাথে বিয়েটা করলে মনে হয় ভাল হবে, অথবা অমুকের সাথে পরামর্শ করলে সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। তাই করবেন, ইনশাল্লাহ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছে যাবেন।
পরিশিষ্ঠঃ এটা লেখার জন্য কিছু আলেম-উলামা ও কিছু কিতাবের সাহায্য নিয়েছি। এটা পরিক্ষীত আমল। তাই আপনারা এই প্রসেসে এগিয়ে দ্রুত করে বিয়ে করে দ্বীন-দুনিয়ার মঙ্গলজনক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করুন, সেই দোয়াই করি। আপনার যত অবিবাহিত বন্ধু-বান্ধবী আছে তাদের সাথে এই পোষ্টটা শেয়ার করুন। আর বিয়ের সময় আমাকে অবশ্যই দাওয়াত দিতে ভুলবেন না। আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুক - আমীন।
