তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

ফরজ নামাজের পর যত প্রকার নফল নামাজ আছে তার মধ্যে তাহাজ্জুদের নামাজের ফজীলত সবচেয়ে বেশি।তাহাজ্জুদ নামাজের ফজীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরজ নামাজের পর সমস্ত নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার নামাজ হলো,গভীর রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ। (মুনসাদে আহমাদ, হাদীস নং- ৮১৫১, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং- ২৯৫৩)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো মুহাররাম মাসের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।(নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং- ১৫৯৬, দারেমী,হাদীস নং- ১৫২৮)
হযরত আবু মালেক আশআরী (রাঃ) বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,জান্নাতে এমন সুন্দর কিছু কামরা রয়েছে,যার ভিতর থেকে বাহির দেখা যায়।বাহির থেকে ভিতর দেখা যায়। আল্লাহ সেগুলো ঐসব মানুষদের জন্য তৈরি করেছেন যারা মেহমানদারী করে। বেশি বেশি সালাম দেয় এবং রাতের বেলায় নামাজ পড়ে,যখন অন্য মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে।(শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং- ৩২১০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং- ৫১০)
হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ো।কেননা তাহাজ্জুদ নামাজ হলো তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের তরীকা এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে তোমাদের নৈকট্য লাভের উপায়।আর তোমাদের গোনাহ মোচনকারী ও পাপ থেকে বাধাঁ দানকারী। (তিরমিযি শরীফ, হাদীস নং- ৩৪৭২), মাজমাউল কাবীর, লিত তারবানী নং-৬০৩১)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে জাগ্রত হয় এবং নিজের স্ত্রীকে জাগ্রত করে দেয় অতঃপর উভয়ে একসাথে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তাদের উভয়কে " অধিক যিকিরকারীদের " তালিকাভুক্ত করা হয়। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং- ১২৩৯, ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং- ১৩২৫)
তাহাজ্জুদের নামাজ বড় ফজিলতের নামাজ। যারা নিয়মিত পড়েন তারা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রিয় হতে পারেন।এমন কোন ওলীআল্লাহ ও পীর বুযুর্গ বিগত হন নি, যিনি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন না।বরং কেউ আল্লাহ তায়ালার ওলী হতে পারেন নি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ছাড়া।আমরাও যদি তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত হতে পারি তাহলে আশা করা যায় আমরাও আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হতে পারবো।আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন।আমীন
যদি কেউ ঘুমানোর সময় তাহাজ্জুদ উঠার নিয়ত করে ঘুমায় আর ঘুম না ভাঙ্গার কারণে উঠতে না পারে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন।এ ব্যাপারে হাদীস আছে,
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে উঠার নিয়ত করে ঘুমায়,এরপর ঘুম গভীর হওয়ার কারণে যদি উঠতে না পারে, তাহলে তার নিয়ত মোতাবেক তাকে সওয়াব দেওয়া হবে। আর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার ঘুম সদকা সরূপ গণ্য হবে। (ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং-১৩৩৪, সহীহ ইবনে খুযায়মা,হাদীস নং- ১১১০)
তাহাজ্জুদের সময় দোয়া কবুল হয়ঃ
তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ একটি ফায়দা হলো, তাহাজ্জুদ নামাজের সময় দোয়া কবুল হয়, হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা রাতে প্রথম আসমানে আসেন, যখন রাতের তিনভাগের এক ভাগ বাকি থাকে (অন্য এক হাদীসে আছে যখন রাতের তিন ভাগের এক ভাগ অতিবাহিত হয়) এসে বলতে থাকেন, কে আছো; আমার কাছে দোয়া করবে,আমি তার দোয়া কবুল করব।কে আছো; আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দিব।কে আছো ; আমার কাছে ক্ষমা চাইবে,আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। (বুখারী শরীফ,হাদীস নং-৬৯৪০,মুসলিম শরীফ,হাদীস নং- ১২৬১, আবু দাউদ,হাদীস নং -১১২০,তিরমিযি শরীফ, হাদীস নং -৩৪২০)
মানুষ বলতে তার কিছু না কিছু সপ্ন ও আশা থাকে,যা পুরা করার জন্য সে চেষ্টা করতে থাকে। আর নবীগণ ব্যতীত কোন মানুষই গুনাহমুক্ত নয়, তাই দোয়া কবুল করানো ও গুনাহ মাফ করানোর সবচেয়ে উত্তম সুযোগ হল তাহাজ্জুদের সময়। তাই প্রত্যেকের উচিত তাহাজ্জুদের নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া, যাতে সে দুনিয়া ও আখিরাতে ধন্য হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।
তাহাজ্জুদের সময়ঃ
ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে নফল নামাজ পড়া হয় তাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে। ইশার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত হলো তাহাজ্জুদের সময়। তবে শেষ রাতে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত থেকে বারো রাকাত পর্যন্ত বা যত বেশি পড়া যায়।নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত আট রাকাত পড়তেন। তাই আট রাকাত পড়াই উত্তম। তবে আট রাকাত না পরলে দুই রাকাত হলেও পড়া উচিত।
তাহাজ্জুদ নসমাজের কোনো কাযা নেই। তবে কোনদিন না পড়তে পারলে পরেরদিন দুপুরের আগে কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়ে নেয়া উত্তম।তাহাজ্জুদ নামাজ যে কোন সূরা দ্বারা পড়া যায়। তবে লম্বা সূরা বা কেরাত দ্বারা পড়া উত্তম।
তাহাজ্জুদের নিয়তঃ আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছি।
কিতাব -"সুন্নতি জিন্দেগী"( মুফতি ইমরান বিন ইলিয়াস)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম