ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামীর হকসমূহ

১. স্বামীর আনুগত্য ও খেদমত করা স্ত্রীর উপর ওয়াজীব। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের পরে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকারই সবচেয়ে বেশি।তবে স্ত্রী কোনো পাপ কাজে স্বামীর আনুগত্য করবে না।যেমন - নামাজ না পড়া, যাকাত না দেওয়া, পর্দায় না থাকা বা পিছনের রাস্তায় সংগম করতে দেওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে স্বামী হুকুম দিলে তা মান্য করা হারাম হবে।সেসব ব্যাপারে (নম্রভাবে এবং কৌশলে ও হেকমতের সঙ্গে) স্বামীর বিরোধিতা করা ফরজ। এমনিভাবে স্বামী যে কোনো ফরজ, ওয়াজীব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা লংঘনের ব্যাপারে তথা হারাম বা মাকরূহ তাহরীমী করার ব্যাপারে হুকুম দিলে বা বললে তার বিরোধিতা করতে হবে। আর কোনো মুস্তাহাব ও নফল কাজের ব্যাপারে না করার হুকুম দিলে সে ব্যাপারে স্বামীর কথা মেনে চলা ওয়াজিব।স্ত্রী কোনো মোবাহ কাজে লিপ্ত হতে পারবে না যাতে স্বামীর কষ্ট হবে - এরূপ হুকুম মানতে হবে ( যদি সেটা পাপের হুকুম না হয় )।স্বামী কাছে থাকা অবস্থায় নফল নামাজ ও নফল রোজা স্বামীর অনুমতি ব্যতীত করবে না, তবে স্বামী সফরে বা বাইরে থাকলে তার অনুমতি ব্যতীত করায়ও ক্ষতি নেই।
২. স্বামীর নিকট তার সাধ্যের বাইরে কোনো খাদ্য - খাবার বা পোষাক -পরিচ্ছদের আবদার করবে না। বরং স্বামীর সাধ্য থাকলেও নিজের থেকে কোনো কিছু ফরমায়েশ না করাই উত্তম। স্বামী নিজের থেকেই তার খাহেশ জিজ্ঞেস করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা করবে - এটাই সুন্দর পন্থা।
৩. স্বামী অপছন্দ করে এরকম কোনো পুরুষ বা নারীকে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ঘরে আসতে দিবে না, নিজের নিকট আনবে না এবং নিজের কাছে রাখবে না।
৪. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাড়ি বা ঘর থেকে বের হবে না।
৫. স্বামীর টাকা -পয়সা ও মাল- সামান থেকে কাউকে (মা, বাপ, ভাই-বোন হলেও) কোনো কিছু দিবে না।এমনকি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার টাকা-পয়সা থেকে
ঘরের আসবাব-পত্রও ক্রয় করতে পারবে না।স্বামীর টাকা-পয়সা থেকে গোপনে কিছু কিছু নিজে সঞ্চয় করা এবং নিজেকেই সেটার মালিক মনে করা এবং সেভাবে সে অর্থ অন্যত্রে পাচার করা বা ব্যাবহার করাও জায়েজ নয়।সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্যও এরূপ করতে পারবে না, করতে চাইলে তার জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে।
এমনিভাবে স্বামীর স্পষ্ট অনুমতি বা অনুমতি দেওয়ার প্রবল ধারণা না হওয়া পর্যন্ত স্বামীর মাল -দৌলত থেকে কাউকে চাঁদা প্রদান বা দান -খয়রাতও করতে পারবে না। অবশ্য দুই চার পয়সা যা ফকিরকে দেওয়া হয় বা এরূপ যৎসামান্য বিষয়, যে ব্যাপারে স্বামীর অনুমতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল সেরূপ বিষয় ভিন্ন কথা, সেটা অনুমতি ছাড়াও জায়েজ।স্ত্রীর নিজস্ব সম্পদ ব্যয় করার ক্ষেত্রেও স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন ও সেটাই উত্তম।
৬. যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য আহবান করলে স্ত্রীর পক্ষে তাতে সাড়া দেওয়া কর্তব্য, ফরজ। অবশ্য শরীয়তসম্মত ওজর (কারণ) থাকলে ভিন্ন কথা। যেমন হায়েজ, নিফাসের অবস্থা থাকলে।
৭. স্বামী অসচ্ছল, দরিদ্র বা কুৎসিত হলে তাকে তুচ্ছ না জানা।
৮. স্বামীর মধ্যে শরীয়তের খেলাফ কোনো কিছু দেখলে আদবের সাথে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করা এবং স্বামীকে দ্বীনদার বানানোর চেষ্টা চালানো স্ত্রীর কর্তব্য। এর জন্য প্রথমে স্ত্রীকে শরীয়াতের অনুগত ও দ্বীনদার হতে হবে, তাহলে স্ত্রীর প্রচেষ্টা বেশী সফল হবে।
৯. স্বামীর নাম ধরে না ডাকা (অনুমতি থাকলে ভিন্ন কথা) । এটা বে-আদবী। তবে প্রয়োজনের সময় স্বামীর নাম মুখে উচ্চারণ করা যায়।
১০. কারো সম্মুখে স্বামীর সমালোচনা না করা।
১১. স্বামীর আপনজন ও আত্বীয় -স্বজনের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ ও কথা কাটাকাটি না করা।সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করা।
১২. স্বামীর উদ্দেশ্যে সেজে- গুজে পরিপাটি হয়ে এবং হাসি খুশি থাকা কর্তব্য। এটা স্বামীর অধিকার।
১৩. স্বামীর মেজাজ ও মানসিক অবস্থা বুঝে চলা জরুরী।
১৪. স্বামী সফর থেকে এলে বা বাইরে থেকে কর্মক্লান্ত হয়ে এলে তার তাৎক্ষনিক যত্ন নেওয়া, সুবিধা অসুবিধা দেখা ও খোঁজখবর নেওয়া জরুরী। শুধু সফর থেকে ফিরলেই নয় সর্বদাই স্বামীর স্বাস্থ্য শরীরের প্রতি খেয়াল রাখা ও যত্ন নেওয়া স্ত্রীর দায়িত্ব।
১৫. স্বামীর ঘরের রান্না বান্না করা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি আইনগতভাবে স্ত্রীর দায়িত্ব নয়, তবে এটা তার নৈতিক কর্তব্য। অবশ্য স্বামীর সচ্ছলতা থাকলে এর জন্য স্ত্রী চাকর-নওকর চেয়ে নেওয়ার অধিকার রাখে।স্ত্রী চাকর -নওকার এর কাজ তত্তাবধান করবে এবং নিজেও তাদের সঙ্গে কাজ কাজ করবে।এমনিভাবে স্বামীর কোনো আত্বীয়-স্বজন বা শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর খেদমত করাও স্ত্রীর আইনগত দায়িত্ব নয়, তবে নৈতিক কর্তব্য । প্রয়োজনে এর জন্য স্বামী নিজে না পারলে চাকর-নওকর নিয়োগ করবে। অবশ্য স্বামী যদি অসচ্ছল হয় এবং নিজেও ঘরের বা মা-বাপ আপনজনের এসব খেদমত করতে না আঞ্জাম দিতে না পারে আর অনন্যেপায় অবস্থায় স্ত্রীকে এসব কাজের জন্য হুকুম দেয়, এমতাবস্থায় স্বামীর সে হুকুম না মানলে স্বামীর কষ্ট হবে বিধায় তখন স্ত্রীর পক্ষে সে হুকুম মান্য করা কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। ঘরের কাজ করার মধ্যে স্ত্রীর সম্মান নিহিত রয়েছে,অসম্মান নয় এবং এর জন্য স্ত্রী সওয়াব লাভ করবে- স্ত্রী এসব কথা মনে রাখলেই এভাবে চল তার জন্য সহজ লাগবে।
১৬. স্বামীর না -শুকরি করবে না।যেমন -কোনো এক সময় তার আনীত কোনো দ্রব্য অপছন্দ হলে এরূপ বলবে না যে, কোনোদিন তুমি একটা পছদসই জিনিস দিলে না... ইত্যাদি।
১৭.স্বামীর আদব এহতেরাম ও সম্মান রক্ষা করে চলা।চড়া গলায় কথা না বলা, তাকে শক্ত কথা না বলা।স্বামী কখনও স্ত্রীর হাত পা দাবিয়ে দিতে গেলে স্ত্রী সেটা করতে দিবে না। ভেবে দেখুন তো, মাতা-পিতা বা যাদের সঙ্গে আদব রক্ষা করে চলতে হয় তারা এরূপ করতে চাইলে তখন কি করতে হয়। অবশ্য অনন্যেপায় অবস্থার কথা ভিন্ন।মোটকথা, কথা-বার্তায়, উঠা-বসায়, আচার-আচরণে সর্বদা স্বামীর আূব রক্ষা করে চলা কর্তব্য। ভালবাসা ও আদব উভয়টার সমন্বয় করে চলা কর্তব্য।
১৮. সন্তানাদি লালন-পালন করাঃ এটা স্ত্রীর দায়িত্ব। সন্তানকে দুধ পান করানো স্ত্রীর উপর ওয়াজীব।
১৯. সতীত্ব রক্ষা করাঃ এটা স্বামীর সম্পদ,অতএব সতীত্ব রক্ষা করে না করলে সতীত্বহীনতার অপরাধতো রয়েছেই, সেই সাথে রয়েছে স্বামীর অধিকার লংঘনের অপরাধ।
("ফিকহুন নিসা" কিতাব থেকে নেওয়া।
লেখক - মাওলানা মোহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন।)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম