Steve Jobs এর সমাপনী বক্তৃতা।


স্টিভ জবস এর সমাবর্তন বক্তৃতা- 
পৃথিবীর অন্যতম 
শ্রেষ্ঠ 
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের 
সমাবর্তন 
অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমি খুবই 
সম্মানিত বোধ 
করছি। 
আমি কখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় 
থেকে পাশ করিনি। 
সত্যি কথা বলতে কি, 
আজকেই 
আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের 
সমাবর্তন অনুষ্ঠান 
সবচেয়ে কাছ 
থেকে দেখছি। আজ 
আমি তোমাদেরকে আমার 
জীবনের তিনটি গল্প 
বলবো। তেমন 
আহামরী কিছু না। শুধু 
তিনটা গল্প। 
প্রথম গল্পটি কিছু 
বিচ্ছিন্ন ঘটনা এক 
সূতোয় 
বাঁধা নিয়ে (connecting 
the dots)। 
রিড 
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার 
ছয় মাসের মাথায় 
আমি মোটামুটি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। 
অবশ্য 
পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয় 
ছেড়ে দওয়ার 
আগে প্রায় বছর 
দেড়েক 
এটা সেটা কোর্স 
নিয়ে কোনমতে লেগেছিলাম। 
তো কেনো আমি বিশ্ববিদ্যালয় 
ছেড়ে দিয়েছিলাম? 
ঘটনার শুরু আমার 
জন্মের আগে থেকে। 
আমার আসল 
মা ছিলেন 
বিশ্ববিদ্যালয়ের 
একজন 
অবিবাহিতা তরুণী গ্রাজুয়েট 
ছাত্রী। আমার 
জন্মের 
আগে তিনি সিদ্ধান্ত 
নিলেন 
আমাকে কারো কাছে দত্তক 
দিবেন। মা খুব 
চাচ্ছিলেন 
আমাকে যারা দত্তক 
নিবেন তাদের 
যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের 
ডিগ্রী থাকে। 
তো একজন 
আইনজীবি এবং তাঁর 
স্ত্রী আমাকে দত্তক 
নেওয়ার জন্য 
রাজি হলো। কিন্তু 
আমার জন্মের পর 
তাঁদের 
মনে হলো তাঁরা আসলে একটা কন্যা শিশু 
চাচ্ছিলেন। 
অতএব আমার 
বর্তমান বাবা-মা, 
যারা অপেক্ষমাণ 
তালিকাতে ছিলেন, 
গভীর 
রাতে একটা ফোন 
পেলেন - "আমাদের 
একটা অপ্রত্যাশিত 
ছেলে শিশু আছে, 
আপনারা ওকে নিতে চান?" 
"অবশ্যই!" - আমার 
বাবা-মা'র তড়িৎ 
উত্তর। আমার আসল 
মা পরে জানতে পেরেছিলেন 
যে আমার নতুন 
মা কখনো বিশ্ববিদ্যালয় 
আর নতুন 
বাবা কখনো হাই 
স্কুলের 
গন্ডি পেরোননি। 
তিনি দত্তক নেবার 
কাগজপত্র সই 
করতে রাজী হননি। 
কয়েক মাস 
পরে অবশ্য 
তিনি রাজী হয়েছিলেন, 
আমার নতুন বাবা- 
মা এই 
প্রতিজ্ঞা করার পর 
যে তারা একদিন 
আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। 
১৭ বছর পর 
আমি সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। 
কিন্তু আমি বোকার 
মতো প্রায় 
স্ট্যানফোর্ডের সমান 
খরচের 
একটা বিশ্ববিদ্যালয় 
বেছে নিয়েছিলাম। 
এবং আমার নিম্ন 
মধ্যবিত্ত 
পিতামাতার সব 
জমানো টাকা আমার 
পড়ালেখার খরচের 
পেছনে চলে যাচ্ছিলো। 
ছয় মাস 
এভাবে যাওয়ার পর 
আমি এর কোন 
মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম 
না। 
জীবনে কী করতে চাই 
সে ব্যাপারে আমার 
তখনো কোন 
ধারণা ছিলোনা, 
এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের 
পড়ালেখা এ 
ব্যাপারে কিভাবে সাহায্য 
করবে সেটাও 
আমি বুঝতে পারছিলাম 
না। অথচ আমি আমার 
বাব-মা'র 
সারা জীবনের 
জমানো সব টাকা এর 
পেছনে দিয়ে দিচ্ছিলাম। 
তাই 
আমি বিশ্ববিদ্যালয় 
ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত 
নিলাম 
এবং আশা করলাম 
যে সবকিছু 
আস্তে আস্তে ঠিক 
হয়ে যাবে। ওই সময়ের 
প্রেক্ষিতে এটা একটা ভয়াবহ 
সিদ্ধান্ত 
মনে হতে পারে, কিন্তু 
এখন পেছন 
ফিরে তাকালে মনে হয় 
এটা আমার জীবনের 
অন্যতম 
সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো। 
যেই 
মুহুর্তে আমি বিশ্ববিদ্যালয় 
ছেড়ে দিলাম সেই 
মুহুর্ত 
থেকে আমি আমার 
অপছন্দের অথচ 
ডিগ্রীর জন্য 
দরকারী কোর্সগুলো নেওয়া বন্ধ 
করে দিতে পারলাম, 
এবং আমার পছন্দের 
কোর্সগুলো নেওয়ার 
সুযোগ 
তৈরি হয়ে গেলো। 
অবশ্য 
ব্যাপারটি অতোটা সুখকর 
ছিলোনা। 
ছাত্রহলে আমার কোন 
রুম ছিলোনা, তাই 
আমি আমার বন্ধুদের 
রুমে ফ্লোরে ঘুমাতাম। 
ব্যবহৃত কোকের 
বোতল ফেরত 
দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট 
করে পেতাম 
(প্রতি বোতল) 
যেটা দিয়ে আমি আমার 
খাবার কিনতাম। 
প্রতি রবিবার 
আমি সাত মাইল 
হেঁটে শহরের অপর 
প্রান্তে অবস্থিত 
হরে কৃষ্ণ 
মন্দিরে যেতাম 
শুধুমাত্র 
একবেলা ভালো খাবার 
খাওয়ার জন্য। কিন্তু 
আমি এটাকে পছন্দ 
করতাম। আমার 
কৌতুহল 
এবং ইনটুইশন অনুসরণ 
করে আমার 
জীবনে আমি যতোকিছু 
করেছি পরবর্তীতে সেটাই 
আমার 
কাছে মহামূল্যবান 
হিসেবে প্রতীয়মান 
হয়েছে। একটা উদাহরণ 
দিইঃ 
সেই সময় রীড কলেজ 
সম্ভবত দেশের 
সেরা ক্যালিগ্রাফী কোর্সগুলো করাতো। 
ক্যাম্পাসের 
প্রত্যেকটি পোস্টার, 
প্রতিটি লেবেল 
করা হতো হাতে করা ক্যালিগ্রাফী দিয়ে। 
যেহেতু 
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের 
ছাত্র ছিলাম না, তাই 
আমি যেকোনো কোর্স 
নিতে পারতাম। তাই 
ভাবলাম 
ক্যালিগ্রাফী কোর্স 
নিয়ে ক্যালিগ্রাফী শিখবো। 
আমি সেরিফ 
এবং স্যান সেরিফ 
টাইপফেইস শিখলাম, 
বিভিন্ন অক্ষরের 
মধ্যে স্পেস 
কমানো বাড়ানো শিখলাম, 
ভালো টাইপোগ্রাফী কিভাবে করতে হয় 
সেটা শিখলাম। 
ব্যাপারটা ছিলো দারুণ 
সুন্দর, ঐতিহাসিক, 
বিজ্ঞানের 
ধরাছোঁয়ার বাইরের 
একটা আর্ট। 
এবং এটা আমাকে বেশ 
আকর্ষণ করতো। 
এই 
ক্যালিগ্রাফী জিনিসটা কখনো কোনো কাজে আসবে এটা আমি কখনো ভাবিনি। 
কিন্তু, দশ বছর পর 
যখন আমরা আমাদের 
প্রথম ম্যাকিন্টস 
কম্পিউটার ডিজাইন 
করি তখন এর 
পুরো ব্যাপারটাই 
আমাদের 
কাজে লেগেছিলো। 
ম্যাক কম্পিটার 
টাইপোগ্রাফী সমৃদ্ধ 
প্রথম কম্পিটার। 
আমি যদি দশ বছর 
আগে সেই 
ক্যালিগ্রাফী কোর্সটা না নিতাম 
তাহলে ম্যাক 
কম্পিউটারে কখনো মাল্টিপল 
টাইপফেইস 
এবং আনুপাতিক 
দুরত্মের ফন্ট 
থাকতো না। আর 
যেহেতু উইন্ডোজ 
ম্যাক এর এই ফন্ট 
নকল করেছে, বলা যায় 
কোনো কম্পিউটারেই 
এই ধরণের ফন্ট 
থাকতো না। 
আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় 
না ছাড়তাম 
তাহলে আমি কখনোই 
ওই 
ক্যালিগ্রাফী কোর্সে ভর্তি হতাম 
না, 
এবং কম্পিউটারে হয়তো কখনো এতো সুন্দর 
ফন্ট থাকতো না। 
অবশ্য 
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় 
এই সব বিচ্ছিন্ন 
ঘটোনাগুলোকে এক 
সুতোয় বাঁধা অসম্ভব 
ছিলো, কিন্তু দশ 
বছর পর সবকিছু 
একেবারে পরিস্কার 
বোঝা গিয়েছিলো! 
তুমি কখনোই 
ভবিষ্যতের 
দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন 
ঘটনাগুলোকে এক 
সূতায় বাঁধতে পারবেনা। 
এটা শুধুমাত্র 
পেছনে তাকিয়েই 
সম্ভব। অতএব, 
তোমাকে বিশ্বাস 
করতেই 
হবে বিচ্ছিন্ন 
ঘটনাগুলো একসময় 
একটা ভালো পরিণামের 
দিকে যাবে ভবিষ্যতে। 
তোমাকে কিছু 
না কিছুর উপর 
বিশ্বাস করতেই হবে - 
তোমার মন, ভাগ্য, 
জীবন, কর্ম, কিছু 
একটা। এই বিশ্বাস 
আমাকে কখনোই 
ব্যর্থ করে দেয়নি, 
বরং আমার জীবনের 
সব বড় 
অর্জনে বিশাল 
ভুমিকা রেখছে। 
আমার দ্বিতীয় 
গল্পটি ভালোবাসা আর 
হারানো নিয়ে। 
আমি সৌভাগ্যবান 
ছিলাম। আমি আমার 
জীবনের প্রথম 
দিকেই আমার 
ভালোবাসার কাজ 
খুঁজে পেয়েছিলাম। ওজ 
আর আমি আমার 
বাবা-মা'র বাড়ির 
গারাজে অ্যাপল 
কম্পানী শুরু 
করেছিলাম। তখন 
আমার বয়স ছিলো ২০ 
বছর। 
আমরা কঠিন পরিশ্রম 
করেছিলাম - ১০ 
বছরের মাথায় অ্যাপল 
কম্পিউটার গারাজের 
২ জনের 
কম্পানী থেকে ৪০০০ 
এম্পলয়ীর ২ বিলিয়ন 
ডলারের 
কম্পানীতে পরিণত 
হয়। আমার বয়স যখন 
৩০ হয় তার অল্প 
কিছুদিন 
আগে আমরা আমাদের 
সেরা কম্পিউটার - 
ম্যাকিন্টস - 
বাজারে ছাড়ি। আর 
ঠিক তখনি আমার 
চাকরি চলে যায়। 
কিভাবে একজন তার 
নিজের প্রতিষ্ঠিত 
কম্পানী থেকে চাকরিচ্যুত 
হয়? 
ব্যাপারটি এমনঃ অ্যাপল 
যখন অনেক 
বড়ো হতে লাগলো তখন 
আমি কম্পানীটি খুব 
ভালোভাবে চালাতে পারবে এমন 
একজনকে নিয়োগ 
দিলাম। প্রথম বছর 
সবকিছু ভালোভাবেই 
গেলো। কিন্তু এরপর 
তার সাথে আমার 
চিন্তাভাবনার 
বিভাজন স্পষ্ট 
হওয়া শুরু হলো। 
এবং পরিচালনা পর্ষদ 
তার পক্ষ নিলো। 
অতএব, ৩০ বছর 
বয়সে আমি কম্পানী থেকে আউট 
হয়ে গেলাম। এবং খুব 
ভালোভাবে আউট 
হলাম। আমার 
সারা জীবনের স্বপ্ন 
এক নিমিষে আমার 
হাতছাড়া হয়ে গেলো। 
ঘটনাটা আমাকে বেশ 
ভেঙ্গে দিয়েছিলো। 
এরপরের কয়েক মাস 
আমি বুঝতে পারছিলাম 
না আমি কী করবো। 
আমার 
মনে হচ্ছিলো আমি আগের 
প্রজন্মের 
উদ্যোগতাদের মনোবল 
ভেঙ্গে দিয়েছি - 
আমার 
হাতে যে দায়িত্ব 
দেওয়া হয়েছে সেটা আমি করতে পারিনি। 
আমি ডেভিড 
প্যাকার্ড এবং বব 
নয়েস এর 
সাথে দেখা করে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলাম। 
একবার ভাবলাম 
ভ্যালী ছেড়ে পালিয়ে যাই। 
কিন্তু 
ধীরে ধীরে আমি একটা ব্যাপার 
অনুভব করতে লাগলাম 
- আমি আমার 
কাজকে এখনো ভালোবাসি! 
এপলের ঘটনাগুলি সেই 
সত্যকে এতোটুকু 
বদলাতে পারেনি। 
আমাকে প্রত্যাখ্যান 
করা হয়েছে, কিন্তু 
আমি এখনো আমার 
কাজকে ভালোবাসি। 
তাই আমি আবার 
একেবারে গোড়া থেকে শুরু 
করার সিদ্ধান্ত 
নিলাম। 
প্রথমে এটা তেমন 
মনে হয়নি, কিন্তু 
পরে আবিষ্কার 
করলাম অ্যাপল 
থেকে চাকরিচ্যুত 
হওয়াটা ছিলো আমার 
জীবনের 
সবচেয়ে ভালো ঘটনা। 
সফল হবার ভার 
চলে যেয়ে আমি তখন 
নতুন করে শুরু করলাম। 
কোন চাপ নেই, 
সবকিছু 
সম্পর্কে আগের 
চেয়ে কম নিশ্চিত। 
ভারমুক্ত 
হয়ে আমি আমার 
জীবনের 
সবচেয়ে সৃজনশীল 
সময়ে যাত্রা শুরু 
করলাম। 
পরবর্তী পাঁচ 
বছরে আমি নেক্সট 
এবং পিক্সার 
নামে দুটো কম্পানী শুরু 
করি, আর 
প্রেমে পড়ি এক 
অসাধারণ মেয়ের 
যাকে আমি পরে বিয়ে করি। 
পিক্সার 
থেকে আমরা পৃথিবীর 
প্রথম এনিমেশন 
ছবি "টয় স্টোরী" 
তৈরি করি। পিক্সার 
বর্তমানে পৃথিবীর 
সবচেয়ে সফল 
এনিমেশন স্টুডিও। 
এরপর ঘটে কিছু 
চমকপ্রদ ঘটনা। 
অ্যাপল 
নেক্সটকে কিনে নেয় 
এবং আমি অ্যাপলএ 
ফিরে আসি। 
এবং নেক্সটএ 
আমরা যে প্রযুক্তি তৈরি করি সেটা এখন 
অ্যাপল এর বর্তমান 
ব্যবসার 
একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে 
। অন্যদিকে লরেন 
আর 
আমি মিলে তৈরি করি একটা সুখী পরিবার। 
আমি মোটামুটি নিশ্চিত 
এগুলোর কিছুই 
ঘটতো না যদি না আমি অ্যাপল 
থেকে চাকরিচ্যুত 
হতাম। এটা ছিলো খুব 
তেতো একটা ওষুধ 
আমার জন্য, কিন্তু 
আমার মনে হয় রোগীর 
সেটা দরকার ছিলো। 
কখনো কখনো জীবন 
তোমাকে মাথায় ইট 
দিয়ে আঘাত করে। 
তখন বিশ্বাস 
হারাইওনা। 
আমি নিশ্চিত 
যে জিনিসটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা হচ্ছে - 
আমি আমার 
কাজকে ভালোবাসতাম। 
তোমাকে অবশ্যই 
তোমার ভালবাসার 
কাজটি খুঁজে পেতে হবে। 
তোমার ভালোবাসার 
মানুষটিকে যেভাবে তোমার 
খুঁজে পেতে হয়, 
ভালোবাসার 
কাজটিকেও তোমার 
সেভাবে খুঁজে পেতে হবে। 
তোমার জীবনের 
একটা বিরাট অংশ 
জুড়ে থাকবে তোমার 
কাজ, তাই জীবন 
নিয়ে সন্তুস্ট হওয়ার 
একমাত্র উপায় 
হচ্ছে চমৎকার 
কোনো কাজ করা। আর 
কোনো কাজ 
তখনি চমৎকার 
হবে যখন তুমি তোমার 
কাজকে ভালোবাসবে। 
যদি এখনো তোমার 
ভালোবাসার কাজ 
খুঁজে না পাও 
তাহলে খুঁজতে থাকো। 
অন্য কোথাও 
স্থায়ী হয়ে যেওনা। 
তোমার মন আর সব 
জিনিসের মতোই 
তোমাকে জানিয়ে দিবে যখন 
তুমি তোমার 
ভালোবাসার 
কাজটি খুঁজে পাবে। 
যে কোনো সম্পর্কের 
মতোই, তোমার 
কাজটি যতো সময় 
যাবে ততোই 
ভালো লাগবে। 
সুতরাং খুঁজতে থাকো যতক্ষন 
না ভালোবাসার 
কাজটি পাচ্ছো। অন্য 
কোন 
কাজে স্থায়ী হয়ো না। 
আমার শেষ 
গল্পটি মৃত্যু নিয়ে। 
আমার বয়স যখন ১৭ 
ছিলো তখন 
আমি একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলামঃ "তুমি যদি প্রতিটি দিন 
এটা ভেবে পার কর 
যে আজই তোমার 
জীবনের শেষ দিন, 
তাহলে একদিন 
তুমি সত্যি সঠিক 
হবে"। এই 
লাইনটা আমার 
মনে গভীর রেখাপাত 
করেছিলো, এবং সেই 
থেকে গতো ৩৩ বছর 
আমি প্রতিদিন 
সকালে আয়নার 
সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস 
করি - "আজ 
যদি আমার জীবনের 
শেষ দিন 
হতো তাহলে আমি কি যা যা করতে যাচ্ছি আজ 
তাই করতাম, 
নাকি অন্য কিছু 
করতাম?" যখনি এই 
প্রশ্নের উত্তর "না" 
হতো পরপর বেশ কিছু 
দিন, আমি জানতাম 
আমার কিছু 
একটা পরিবর্তন 
করতে হবে। 
"আমি একদিন 
মরে যাবো" - এই 
কথাটা মাথায় 
রাখা আমার 
জীবনে আমাকে বড় 
বড় সব সিদ্ধান্ত 
নিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য 
করেছে। কারণ 
সবকিছু - সকল আশা- 
প্রত্যাশা, গর্ব, 
ব্যর্থতার ভয় 
বা লজ্জা - এইসব 
কিছু মৃত্যুর মুখে নাই 
হয়ে যায়, শুধুমাত্র 
সত্যিকারের 
গুরুত্মপূর্ণ 
জিনিসগুলোই 
টিকে থাকে। তোমার 
কিছু হারানোর 
আছে এই চিন্তা দূর 
করার সবচেয়ে সহজ 
উপায় 
হচ্ছে এটা মনে রাখা যে একদিন 
তুমি মরে যাবে। 
তুমি নগ্ন হয়েই আছো। 
অতএব নিজের 
মনকে না শোনার 
কোনো কারণই নাই। 
প্রায় এক বছর 
আগে আমার ক্যান্সার 
ধরা পড়ে। সকাল ৭:৩০ 
এ আমার 
একটা স্ক্যান হয় 
এবং এতে পরিস্কারভাবে আমার 
প্যানক্রিয়াসএ 
একটা টিউমার 
দেখা যায়। 
আমি তখনো জানতাম 
না প্যানক্রিয়াস 
জিনিসটা কী। আমার 
ডাক্তাররা বললেন এই 
ক্যান্সার প্রায় 
নিশ্চিতভাবে অনারোগ্য, 
এবং আমার আয়ু আর 
তিন থেকে ছয় মাস 
আছে। আমার ডাক্তার 
আমাকে বাসায় 
ফিরে যেয়ে সব 
ঠিকঠাক 
করতে বললেন। 
সোজা কথায় মৃত্যুর 
জন্য প্রস্তুত হওয়া। 
এরমানে হচ্ছে তুমি তোমার 
সন্তানদের 
আগামী দশ 
বছরে যা বলবে বলে ঠিক 
করেছো তা আগামী কয়েক 
মাসের 
মধ্যে বলতে হবে। 
এরমানে হচ্ছে সবকিছু 
গোছগাছ 
করে রাখা যাতে তোমার 
পরিবারের সবার জন্য 
ব্যাপারটি যথাসম্ভব 
কম বেদনাদায়ক হয়। 
এরমানে হচ্ছে সবার 
থেকে বিদায় 
নিয়ে নেওয়া। 
এভাবে সেদিন 
সারাদিন গেলো। সেদিন 
সন্ধ্যায় আমার 
একটা বায়োপসি হলো। 
তারা আমার গলার 
ভেতর 
দিয়ে একটা এন্ডোস্কোপ 
নামিয়ে দিলো, এরপর 
আমার পেটের ভেতর 
দিয়ে যেয়ে আমার 
ইনটেস্টাইন থেকে সুঁই 
দিয়ে কিছু কোষ 
নিয়ে আসলো। 
আমাকে অজ্ঞান 
করে রেখেছিলো তাই 
আমি কিছুই দেখিনি। 
কিন্তু আমার 
স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিলো যে আমার 
ডাক্তাররা যখন 
এন্ডোস্কোপি থেকে পাওয়া কোষগুলি মাইক্রোস্কোপ 
এর 
নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু 
করলো তখন 
তারা প্রায় কাঁদতে শুরু 
করেছিলো, কারণ 
আমার যে ধরণের 
প্যানক্রিয়াটিক 
ক্যান্সার 
হয়েছিলো সেটার 
আসলে সার্জারীর 
মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। 
আমার সেই 
সার্জারী হয়েছিলো এবং এখন 
আমি সুস্থ্য। 
এটাই আমার মৃত্যুর 
সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়া, 
এবং আমি আশা করি আরো কয়েক 
দশকের জন্যও 
এটা তাই যেনো হয়। 
মৃত্যুর খুব 
কাছাকাছি যাওয়ার 
এই বাস্তব 
অভিজ্ঞতার 
কারণে মৃত্যু 
সম্পর্কে এখন 
আমি অনেক 
বেশি জানি, 
যেটা আমি জানতাম 
না যদি না এই 
অভিজ্ঞতার মধ্য 
দিয়ে না যেতামঃ 
কেউই মরতে চায় না। 
এমনকি যারা বেহেশতে যেতে চায়, 
তারাও সেখানে যাওয়ার 
জন্য 
তাড়াতাড়ি মরে যেতে চায় 
না। কিন্তু এরপরও 
মৃত্যুই আমাদের সবার 
গন্তব্য। কেউই 
কখনো এটা থেকে পালাতে পারেনি। 
এবং সেটাই 
হওয়া উচিৎ, কারণ 
মৃত্যু সম্ভবত 
জীবনের সবচেয়ে বড় 
আবিস্কার। 
এটা জীবনের 
পরিবর্তনের এজেন্ট। 
মৃত্যু 
পুরনোকে ধুয়ে মুছে নতুনের 
জন্য জায়গা করে দেয়। 
এই 
মুহুর্তে তোমরা হচ্ছো নতুন, 
কিন্তু খুব বেশিদিন 
দূরে নয় যেদিন 
তোমরা পুরনো হয়ে যাবে এবং তোমাদেরও 
ধুয়ে মুছে ফেলা হবে। 
নাটকীয়ভাবে বলার 
জন্য দুঃখিত, কিন্তু 
এটা খুবই সত্যি। 
তোমাদের সময় 
সীমিত, অতএব, অন্য 
কারো জীবন যাপন 
করে সময় নষ্ট 
করো না। 
কোনো মতবাদের 
ফাঁদে পড়ো না, অর্থ্যাৎ 
অন্য কারো চিন্তা- 
ভাবনা দিয়ে নিজের 
জীবন চালিয়ো না। 
তোমার নিজের 
ভেতরের 
কন্ঠকে অন্যদের 
চিন্তা-ভাবনার 
কাছে আটকাতে দিও 
না। আর সবচেয়ে বড় 
কথাঃ নিজের মন আর 
ইনটুইশন এর 
কথা শোনার সাহস 
রাখবে। ওরা ঠিকই 
জানে তুমি আসলে কি হতে চাও। 
বাকী সব কিছু 
ততোটা গুরুত্মপূর্ণ নয়। 
আমি যখন তরুণ 
ছিলাম তখন 
একটা পত্রিকা বের 
হতো যার নাম 
ছিলো "The Whole 
Earth 
Catalog" (সারা পৃথিবীর 
ক্যাটালগ). 
এটা ছিলো আমার 
প্রজন্মের 
একটা বাইবেল। 
এটা বের করেছিলেন 
স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড 
নামে এক ভদ্রলোক 
যিনি মেনলো পার্কের 
কাছেই থাকতেন। 
তিনি পত্রিকাটিকে কাব্যময়তা দিয়ে জীবন্ত 
করে তুলেছিলেন। 
এটা ছিলো ষাট এর 
দশকের শেষ দিককার 
কথা - কম্পিউটার 
এবং ডেস্কটপ 
পাবলিশিং তখনো শুরু 
হয়নি। তাই 
পত্রিকাটি বানানো হতো টাইপরাইটার, 
কাঁচি, এবং পোলারয়েড 
ক্যামেরা দিয়ে। 
পত্রিকাটিকে ৩৫ 
বছর আগের 
পেপারব্যাক গুগল 
বলা যায়ঃ অনেক 
তত্ত্ব-তথ্যে সমৃদ্ধ 
আর মহৎ 
উদ্দেশ্যে নিবেদিত। 
স্টুয়ার্ট এবং তার টিম 
পত্রিকাটির 
অনেকগুলি সংখ্যা বের 
করেছিলো। 
পত্রিকাটির জীবন 
শেষ হয় 
একটা সমাপ্তি সংখ্যা দিয়ে। 
এটা ছিলো সত্তর এর 
দশকের 
মাঝামাঝি সময়ে, 
আমার বয়স 
ছিলো তোমাদের 
বয়সের কাছাকাছি। 
সমাপ্তি সংখ্যার শেষ 
পাতায় একটা ভোরের 
ছবি ছিলো। তার 
নিচে ছিলো এই 
কথাগুলিঃ "ক্ষুধার্ত 
থেকো, বোকা থেকো"। 
এটা ছিলো তাদের 
বিদায় বার্তা। 
ক্ষুধার্ত থেকো। 
বোকা থেকো। 
এবং আমি নিজেও 
সবসময় 
এটা মেনে চলার 
চেষ্টা করে এসেছি। 
এবং আজ তোমরা যখন 
পাশ 
করে বিশ্ববিদ্যালয়ের 
গন্ডি ছেড়ে আরো বড় 
জীবনের 
গন্ডিতে প্রবেশ 
করছো, 
আমি তোমাদেরকেও 
এটা মেনে চলার 
আহবান জানাচ্ছি। 
ক্ষুধার্ত থেকো। 
বোকা থেকো। 
সবাইকে ধন্যবাদ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নতুন মন্তব্যগুলি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত নয়৷*

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম