প্রাইমারী শেষ করার পর আব্বার ইচ্ছা হাইস্কুলে ভর্তি করাবে, আর মায়ের ইচ্ছা মাদ্রাসায় ভর্তি করাবে। দাখিল (আলিয়া) মাদ্রাসায়। মায়ের খুব ইচ্ছা উনি মারা যাওয়ার পর যেন উনার একমাত্র ছেলেই উনার জানাজা পড়ান। যদিও জানাজা পড়ানোর জন্য মাদ্রাসা-হাইস্কুল বিষয় না। আমাদের এলাকায় প্রাইমারীতে ক্লাস ফাইভের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে এলাকায় যত হাইস্কুল-মাদ্রাসা আছে তারা সবাই বেরিয়ে পড়ত ছাত্র সংগ্রহে। তারা ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের পিতা-মাতাদের অনুরোধ করত যেন তাদের স্কুলে বা মাদ্রাসায় তাদের সন্তানকে দেওয়া হয়। তাদের স্কুলে বা মাদ্রাসায় পড়লে কি কি সুবিধা (বিনা বেতন, বিনামূল্যে বই ইত্যাদি) দেওয়া হবে সেটাও উল্লেখ করত। যদিও ১/২ বছর পর মানে মানে ক্লাস এইট/নাইনে গিয়ে শিক্ষকেরা তখনকার দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারতেন না ও তেমন কোন সুবিধা দিতেন না।
এরমধ্যে আব্বার সাথে মায়ের বেশ মনোমালিন্য হয়েছে যে আমাকে মাদ্রাসা না হাইস্কুলে দিবে সেটা নিয়ে। যখন মাদ্রাসা থেকে আমাদের বাড়ীতে শিক্ষকেরা আসলো তখন আমার মায়ে তো আনন্দে আটখানা। উনার কোন সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, উনার ছেলেকে যেন এখনি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। ঐ সময় আব্বা বাড়ীতে ছিল না। মাদ্রাসার শিক্ষকেরা আমাকে তাদের তালিকাভুক্ত করে চলে গেল।
মায়ের জেদা-জেদিতে আব্বা শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়ে আমাকে মাদ্রাসায় পড়াতে রাজী হল। সেদিন বুঝে গেলাম নারীদের কাছে পুরুষেরা কিভাবে হার মানে। ক্লাস সিক্সের শুরু থেকেই পড়া-শোনার ব্যাপারে আমি ভীষণ সিরিয়াস হয়ে গেলাম। আমাদের বাড়ী থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য শুকনোর সময় দুই ভাবে যাওয়া যেত। বিল (ফসলের মাঠ) দিয়ে ও রাস্তা দিয়ে। বিল দিয়ে যাওয়া সহজ ও অল্প পথ ছিল। কিন্ত বর্ষাকালে বিল দিয়ে যাওয়ার উপায় ছিলনা।
আমার এক বান্ধবী প্রতিদিন মাদ্রাসায় যাওয়ার আগে আমাদের বাড়ীতে এসে বসে থাকত। আমার সকালে খাওয়া হলে আমাকে সাথে করে নিয়ে যেত। সে ঐ মাদ্রাসার ইবতেদায়ীতে পড়ছে বিধায় শিক্ষক সহ সবকিছু তার আমার চেয়ে বেশি চেনা-জানা। আর আমি প্রাইমারী থেকে এসেছি। কথা ও কাজে সে আমার চেয়ে অনেক দ্রুত ও স্মার্ট ছিল। তো পরবর্তীতে ঐ বান্ধবী আমাকে অনেক ক্যাচালে ফেলেছিল, সেটা আরেক কাহিনী। আলিয়া মাদ্রাসার ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত শ্রেণীকে ইবতেদায়ী বলে।
আমার সমস্যা ছিল আমি অন্যান্য বিষয়ে ভাল পারলেও আরবী লিখতে ও যের-জবর-পেশ ছাড়া আরবী পড়তে পারতাম না, যেহেতু আমি প্রাইমারী থেকে গিয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকে মক্তবে পড়ার কারণে তখন আমি কুরআন শরীফ ভাল পড়তে পারতাম এবং আমার অনেক সুরা মুখস্ত ছিল। কিন্ত কুরআন শরীফে তো যের-জবর-পেশ আছে, মাদ্রাসার বইয়ে তা ছিলনা। আর মাদ্রাসার ছাত্ররা এভাবেই যের-জবর-পেশ ছাড়াই লিখতে ও পড়তে অভ্যস্ত। যারা ইবতেদায়ী থেকে এসেছিল তাদের এই আরবী লেখা ও পড়ার সমস্যাটা ছিলনা। তারপর টানা ২/৩ মাস অনেক চেষ্টা করার পর আরবী লেখা ও পড়া শিখে গেলাম। এক্ষেত্রে আমার ক্লাসের সহপাঠী ও ঐ বান্ধবী অনেক সাহায্য করেছিল। এই আরবী লেখার ব্যাপারটা পরবর্তীতে আমার অনেক কাজে লেগেছে এবং এখনো লাগে। আমি যখন এস.এস.সি, এইচ.এস.সি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষার খাতায় আরবী লিখি তখন স্যার সেই খাতা আলাদা নজরে দেখে। যার ফলে আমার বেশি নম্বর পাওয়া সহজ হয়।
মাদ্রাসায় নতুন হওয়া সত্ত্বেও ক্লাস সিক্সে বার্ষিক পরীক্ষায় রেজাল্ট অনেক ভাল হল। রেজাল্ট ঘোষণার দিন সভাপতি একটা প্রাইজও দিল। একই ভাবে ক্লাস সেভেনেও প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়ীক পরীক্ষায়ও ভাল রেজাল্ট করলাম। আমাদের সাথে আমাদেরই এক স্যারের মেয়ে পড়ত। তাকে ঘিরেই আজকের এই লেখা। কাহিনীর প্রয়োজনে তার একটা নাম দেয়া প্রয়োজন। ধরা যাক তার নাম- সাজানা।
তার পিতা আমাদের মাদ্রাসার আরবী ব্যাকরণের শিক্ষক ছিলেন। ক্লাসের মধ্যে অনেকেই উনাকে উনার রগচটা স্বভাবের জন্য ভয় পেতেন। উনি হঠাৎ রেগে যেতেন আর আমাদের প্রায় সবাইকে বেদম পেটাতেন। উনার মেয়েকেও বাদ দিতেন না। আবার যেদিন খোশ মেজাজে থাকতেন সেদিন যদি কোন ছাত্র একটা পানের খিলি কিনে দিত, তাহল উনি সেই পান মুখে পুরে পুরো ক্লাস গল্প-গুজব করে কাটিয়ে দিতেন। উনার গল্পে ছাত্রদের হাসতে-হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যেত।
তো আমি খেয়াল করতাম ঐ স্যারের মেয়ে আমাদের বান্ধবী সাজানা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। কখনো চোখা-চোখি হয়ে গেলে আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিত। আবার মাঝে মাঝে মুচকি হাসি দিত। তখন এসবের অর্থ তেমন বুঝতাম না, কিন্ত এখন... :P আমি মাঝে মাঝে পিছনে ও আশে-পাশে তাকিয়ে দেখতাম যে ও অন্য কারো দিকে তাকিয়ে হাসতেছে কি না। কিন্ত তেমন কাউকে দেখতাম না। তখন ওর হাসা-হাসি বা তাকা-তাকির অতটা গুরুত্ব দিতাম না। আরো একটা জিনিস খেয়াল করতাম, যে বান্ধবীর সাথে আমি মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করতাম ও তার সাথে প্রায়ই ঝগড়া করত। এটা আমার কাছে খারাপ লাগত। মনে হত ঐ বান্ধবী সাজানার দুই চোখের বিষ ছিল।
বন্ধুদের আমি ইংরেজী ও গণিতে অনেক সাহায্য করতাম আর তারা আমাকে আরবীতে সাহায্য করত। যদিও ততদিনে আরবী আমি ক্লাসের অন্যান্যদের মতই প্রায় শিখে গেছি। মাদ্রাসায় ক্লাস সেভেনে আমাদের উপজেলা বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল। সবার না। ক্লাসে যারা টপে ছিল এমন ছাত্র-ছাত্রীদের স্যারেরা বাচাই করে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাত। সেই গ্রুপে আমার অনেক বন্ধুর সাথে সাজানাও ছিল। ওর সিট পড়েছিল আমার পাশে। ঐ সময় ও আমাকে অনেক জ্বালাইছে। ওর যেটা প্রয়োজন সেটা আমার কাছে জিজ্ঞেস করত, যেটা অপ্রয়োজন সেটাও আমার কাছে জিজ্ঞেস করত। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যেতাম, কিন্ত প্রকাশ করতাম না। ওর আব্বুকে ক্লাসের সবাই ভয় পেত। যাহোক, এভাবে ক্লাস সেভেন কেটে গেল। বার্ষিক পরীক্ষায় রেজাল্ট গত বছরের চেয়ে ভাল হল। সভাপতি আরো একটা প্রাইজ দিল।
ক্লাস এইটে উঠে মনে হল সাজানার তাকা-তাকি বেড়ে গেছে। ও মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করত। কিন্ত অন্যরা কি বলবে বা স্যারের মাইর দেয় কি না বা যেকোন কারণে আমি বলতাম না আর সেও সুযোগ পেতনা। তবে সে চেষ্টা করত অনেক এটা ভাল ভাবে মনে আছে।
কিন্ত আমার আর মাদ্রাসায় যেতে ভাল লাগত না। কারণ আমার ভাল লাগত ইংরেজী সাব্জেক্ট। আর মাদ্রাসায় হাইস্কুলের তুলনায় ইংরেজী কম ছিল আর আরবীর আধিক্য ছিল বেশি। যদিও তখন আমি আরবী ব্যাকরণ ও সাহিত্য অনেক ভাল বুঝতে ও লিখতে পারি। কিন্ত কি করে হাইস্কুলে ট্রান্সফার হওয়া যায় সেটা নিয়ে অনেক কৌশল করে যাচ্ছিলাম। মাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করালাম, কিন্ত উনি নাছোড়বান্দা। আমার কোন যুক্তি উনার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলনা। অবশেষে ক্লাস এইটে মাদ্রাসায় তিন মাস পড়ার পর আমি ঠিকই হাইস্কুলে গিয়েছিলাম। এরজন্য একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটাকে উসিলা করেই আমি হাইস্কুলে ট্রান্সফার হয়েছিলাম।
মাদ্রাসার নির্ধারিত পোশাক হল পায়জামা, পাঞ্জাবী ও টুপি। কিন্ত শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য যে তখন অনেক ছেলেরা পায়জামার পরিবর্তে মাঝে-মধ্যে লুংগী পরে যেত। আমিও মাঝে মাঝে যেতাম। এটা ২০০৬ সালের কথা যখন ক্লাস এইটে পড়তাম। লুংগী পরে যাওয়া স্যার বা হুজুরেরা মাঝে-মধ্যে অনুৎসাহিত করত, কিন্ত কড়া করে কিছু বলত না। তাই গরমের দিন গুলোতে আমি প্রায় লুংগী পরে যেতাম। তখন বৈশাখ মাস চলে। বিল শুকনা। আমি লুংগী ও পাঞ্জবী পরে মাথায় টুপি দিয়ে বিল দিয়ে যেতাম। বাতাসে খুব ভাল লাগত। কিন্ত প্যান্ট বা পাজামা পরলে গরম লাগত।
একদিন লুংগী পরে দ্বিতীয় সারিতে বসেছি। আর ঐ রগচটা স্যার (সাজানার আব্বু) ক্লাসে এল। ঐদিন কোন কারণে উনার পড়া আমার খুব একটা ভাল হয়নি। তখন আমার মন দো-টানায়। হাইস্কুলে যাব না মাদ্রাসায় থেকে যাব এটা নিয়ে। উনার চোখ হঠাৎ করে আমার লুংগির দিকে গেল। আমার পরনে লুংগী দেখে মনে হল উনি রাগে কাপতে শুরু করলেন। হুংকার দিয়ে বললেন কে কে লুঙ্গী পরে এসেছিস উঠে দাড়া। আমি সহ আরো ৩ জন উঠে দাড়ালাম।
ক্লাসের অন্যান্যদের মধ্যে অনেক ভীতি কাজ করতেছিল। কেউ কোন কথা বলতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল ভয়ে সবার গলা শুকিয়ে পানির তেষ্টা পেয়েছে। সবাই ঢোক গিলছে আর সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠেছে। আমি সহ চারজন দাঁড়িয়ে রয়েছি। পিনপতন নীরবতা। উনি ক্লাস থেকে বের হয়ে দৌড়ে অফিস রুমে গেলেন। ফিরে আসল তিন টা বেত নিয়ে। প্রথম শুরু করল আমাকে দিয়ে। তিন বেত এক সাথে করে ধুমা-ধুম মারতে শুরু করল। দাতে দাত চেপে সেই তিন যৌথ বেতের মাইর সহ্য করে যাচ্ছি। আমার চোখে পানি টলমল করছে কিন্ত গড়িয়ে পড়তেছে না। বলা যায় আমার সহ্য শক্তি ভাল :P একে একে মারতে মারতে উনি শেষের জনকে যখন পিটাতে লাগলো তখন বেত তিনটা ফেটে গেছে। আমাকে দিয়ে শুরু করছিল, বিধায় উনার পিটানির পূর্ণ শক্তি আমার পিঠে পড়ছিল। ফাটা বেত দিয়ে পিটানো যাচ্ছেনা দেখে উনি আবার অফিসে গিয়ে নতুন আরো দুটো বেত আনলো।
আবার আমাকে পিটানো শুরু করলো। এই রকম সময় সাজানা উঠে দাড়ালো। ও কান্না জড়িত কন্ঠে জোরে একবার বলল- আব্বু ওকে আর মেরনা। বলেই ও জ্ঞান হারিয়ে টেবিলের উপর পড়ে গেল। স্যার আমাদের পিটানো বাদ দিয়ে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত হলেন। কয়েকটা মেয়ে তাকে কোলে করে অফিস রুমে নিয়ে গেল। মাথায় পানি দিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ্য করে তুললো। বন্ধুরা আমাকে সান্ত্বনা দিল। সবার একই প্রশ্ন লুংগি পরে কেন আমি সামনের দিকে বসতে গেলাম। পিছনের দিকে বসলে হয়তো আর দেখতে পেতনা।
আমি বাড়ীতে এসে মাকে ঐ পিটানির দাগ দেখালে মা অনেক রাগান্বিত হয়। সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্যারের কাছে বিচার দিতে যেতে চায়। এলাকার মাতব্বরের কাছে বিচার দিতে চায়। আমি বললাম তোমাকে আর কারো কাছে বিচার দিতে হবেনা। কাল থেকে আমি আর মাদ্রাসায় যাব না। তবুও মা আমাকে হাইস্কুলে যেতে দিতে চায়না।
পরদিন সকালে আব্বা-মাকে কিছু না বলে মাত্র ১০ টাকা নিয়ে হাইস্কুল পড়ুয়া এক বন্ধুর (বাল্যবন্ধু) সাথে গিয়ে হাইস্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি হয়ে আসলাম। হাইস্কুলে ভর্তি হতে কোন টাকা লাগেনা। পরীক্ষার সময় অল্প কিছু বেতন ও পরীক্ষার ফিস দিতে হয়। তারপরও কেরানি আমার নামে ১০ টাকা জমা করলো।
এরপর হাইস্কুলে অনেক ঘটনা ঘটলো। একটা ঘটনা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে সেটা হল ক্লাস এইটে থাকা কালে এস.এস.সি'র যারা বিদায়ী ব্যাচ তারা যে বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ঐ অনুষ্ঠানে আমি ইংরেজীতে মাত্র ৫ মিনিটের একটা বক্তৃতা দিয়েছিলাম- How to you can improve your English এই টপিকের উপর। বক্তৃতাটা আমি বাড়ী থেকে লিখে খুব ভাল মত মুখস্ত করে গিয়েছিলাম এবং মঞ্চে উঠে টানা বলে যেতে পেরেছিলাম। আমার ইংরেজী বক্তৃতা শুনে সামনে থাকা আমার ক্লাসের সহপাঠীরা বেঞ্চে অনেক জোরে জোরে চড় দিয়েছিল আর আমাদের ইংরেজীর শিক্ষক মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। সেই বৃদ্ধ শিক্ষক এখনো বেচে আছে। আমাদের স্কুলে থেকে প্রতি বছর অনেক ছেলে-মেয়ে ইংরেজীতে ফেল করত। এই বক্তৃতা দেয়ার ফলে ক্লাসের বন্ধুরা আমাকে সমীহ করতে চলতে লাগলো। সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো আমি এটা কিভাবে পারলাম। আর ইংরেজী স্যারও আমার এক্সট্রা কেয়ার নিত।
এরপর কেটে গেল অনেক বছর। আমি হাইস্কুল শেষ করে ওখানকার কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলাম। তার আরো বছর দুই পরে আমি তখন নারায়ণগঞ্জের একটা কোম্পানীতে আছি। এরমধ্যে অনেক স্যার পরলোকগমন করেছে। অনেক স্যার রিটায়ার্ড হয়েছে। স্কুলে এখন প্রায় সব স্যার নতুন। আমি জব থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে এসে এলাকায় বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। ঘুরতে ঘুরতে একটা বাড়ীর পাশে দেখি সেই সাজানা। কোলে একটা বাচ্চা। আমাকে দেখেই চিনতে পারলো। বলল যে এটা তাদের বাড়ী। জিজ্ঞেস করলাম বিয়ের কত বছর হল? বলল যে তিন বছর। আরো কিছু জিজ্ঞেস করার পর আমি তার সেদিনের ঐ জ্ঞান হারানোর কথা মনে করায়ে দিলাম। মজা করে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি সেদিন সত্যিই জ্ঞান হারিয়েছিলে নাকি স্যারের মাইর থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য ওমন করেছিলে?
আমার কথা শুনে সাজানা হাসতে লাগলো। সে হাসির অনেক অর্থ হতে পারে। তবে আমার কাছে সে হাসির অর্থ মনে হল- মেয়েরা সব পারে, তারা সহজে অতীত ভুলতে পারে, তারা সহজে সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে, যেকোন স্মৃতিকে পদদলিত করে তারা সামনে এগিয়ে যেতে পারে, তারা তাদের নিজস্ব সুখের বিসর্জন দিয়ে তাদের পরিবারকে খুশী রাখতে জানে। হাসির মধ্যে মনে হল তার চোখে পানি জমে যাচ্ছে, যেকোন মুহুর্তে গড়িয়ে পড়বে। আমি দ্রুত তার সামনে থেকে চলে আসলাম। ও পিছন থেকে সেইদিনের মত কান্নাজড়িত কন্ঠে ডাক দিল। তারপরও আমি সামনে এগিয়ে চললাম।
