সাতক্ষীরা থেকে বাসে উঠার পর বাস যখন গাবতলী ছাড়িয়ে শ্যামলী গিয়ে থামলো তখন রাত তিনটা বাজে। সেই হিসাবে আমি ৮ ঘন্টার মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা পৌছে গেছি। আবার যখন যানজট বা প্রাকৃতিক সমস্যা যেমন কুয়াশার কারণে ফেরী পার হতে না পারলে অথবা ঈদের সময় ২ দিন পর্যন্ত লেগে যায় ঢাকা থেকে বাড়ীতে পৌছাতে।
যাহোক, যেহেতু গাড়ীতে ঘুমিয়েছিলাম সেহেতু রাত তিনটার পর আর ঘুম আসছিল না। বাইরে হাটা-হাটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত আম্মোর শহরে আমার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে জেনেও বাসে বসে থাকা সঙ্গত মনে করলাম। বলা তো যায়না কে কোথা থেকে এসে চাকু ধরে বলে 'মোবাইলটা দিয়ে দে নইলে কিডনি একটা খুলে নিব!', অথবা তেনারা এসে যদি পকেটে কাগজের মোড়া ঢুকিয়ে আমার মত সহজ-সরল ছেলেকে আবার ** ব্যবসায়ী বানিয়ে ফেলে! গভীর রাতে বা যখন রাস্তায় মানুষের চলাচল কম থাকে তখন আমাদের দেশে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। যাহোক, এভাবে বসে থাকতে থাকতে এক সময় ফজরের আজান দিল। নামাজ পড়ার জন্য শ্যামলী কেন্দ্রীয় মসজিদে গেলাম।
দু'রাকাত সুন্নাত পড়ার পর ইমাম সাহেব ফরজ পড়ার জন্য প্রস্তত হল। ক্বিরাতে অনেক লম্বা সুরা পড়লো। কিন্ত আমার সমস্যা হচ্ছিল, আমার সামনে যে লোকটা দাড়িয়েছিল তার গায়ে একটা জ্যাকেট ছিল। সেই জ্যাকেটের পিছনে জাপানের মানচিত্র আঁকানো। আরো খেয়াল করে দেখলাম ঐ মানচিত্রের মধ্যে 'টোকিও' নামটা আছে। টোকিও জাপানের রাজধানী এবং আমাদের সকলের পরিচিত নাম। টোকিও নামের আশে-পাশে চোখ বুলাতে আরো দেখলাম- Sapporo, Aomori, Sendai, Ota, Osaka, Kobe, Hiroshima, Yokosuka, Gifu, Nagoya, Etajima ইত্যাদি। এগুলা জাপানের বড় বড় শহর।
আমার বি.সি.এস দেয়ার ইচ্ছে কোন কালে ছিল না এবং এখনো নাই। যেহেতু নামগুলোর মধ্যে আগে কয়েকটার নাম মুখস্ত ছিল আর নামাজের ভিতরে ঐ লোকের জ্যাকেটের দিকে বার-বার নজর যাচ্ছিল তাই আরো কয়েকবার চোখ বুলিয়ে বাকীগুলার নামও মুখস্ত করে নিলাম। বলা তো যায়না, কোথায় কি কাজে লাগে! :P
শৈশবের একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমি তখন ক্লাস ফোরে বা ফাইভে পড়ি। নিয়মিত মসজিদে যেতাম। তো মসজিদে একটা বুড়ো আসত নামাজ পড়তে। তার অভ্যাস ছিল এমন যে, নামাজের কাতারে তারপাশে কেউ দাড়ালে এবং বুড়োর গায়ে যদি কোন রকম স্পর্শ লাগত, বুড়ো নামাজের মধ্যেই তার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে শাসাত। আর নামাজ শেষ হলে সালাম ফিরানোর পর তাকে বকা-ঝকা করত। তাই বুড়োর দুই পাশে যারা দাড়াত তারা যথেষ্ঠ ফাকা স্থান রেখেই দাড়াত, যদিও এটা নিয়ম না। নিয়ম হল কাধে কাধ মিলিয়ে দাঁড়ানো।
একদিন আমি সাদা পাঞ্জাবী পরে মসজিদে গেছি এবং নামাজের সময় আমার স্থান হল ঐ বুড়োর পাশে। আমিতো বুড়োর অভ্যাস জানি। আমি দুষ্টুমি করে আমার কনুই দিয়ে বুড়োর কনুইতে ধাক্কা দিলাম। বুড়ো কটমট করে আমার দিকে তাকালো। আমি আবার কনুই দিয়ে তাকে ধাক্কা দিলাম। বুড়ো নামাজরত অবস্থায় আমার দিকে ফিরে আবার চোখ দিয়ে শাসাল। কিন্ত নামাজ শেষ না হলে কিছুই বলতে পারছেনা। আমি আরো একবার বুড়োকে কনুই দিয়ে জোরে ধাক্কা দিলাম। মনে হল বুড়ো নামাজের মধ্যেই আমাকে মেরে বসবে। ধাক্কা দিয়ে ঐ জায়গা থেকে চলে এসে অন্য লাইনে দাড়ালাম আর আমার স্থানে আমার বন্ধু গিয়ে দাড়ালো। আমার ধাক্কা দেওয়ার পর বন্ধু মসজিদে আসছে এবং তার গায়েও সাদা পাঞ্জাবী। নামাজ পড়া শেষ হলে বুড়ো আমার বন্ধুকে থাপড়াতে লাগলো যে কেন তাকে নামাজের মধ্যে কনুই দিয়ে গুতো দিল! বন্ধু যতই বলে "আমি দেই নাই", বুড়ো তো বিশ্বাস করেনা। বলে তোর গায়ে সাদা পাঞ্জাবী ছিল এখনো আছে, ধাক্কা তুই দিছিস। পরে আমরা সকলে মিলে বুড়োর হাত থেকে বন্ধুকে উদ্ধার করি। এ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই আমাদের মধ্যে হাসা-হাসি হত।
তো নামাজের মধ্যে নিয়ম হচ্ছে দাঁড়ানো অবস্থায় চোখের নজর থাকবে সিজদা দেয়ার স্থানে, রুকুতে দুই পায়ের পাতার মাঝে, সিজদারত অবস্থায় নাকের ডগা বরাবর আর বসা অবস্থায় তলপেটের দিকে। এটা পুরুষদের জন্য, মহিলাদের নিয়মটা দেখতে হবে। কিন্ত আমাদের ঈমানের দুর্বলতা, অস্থির চিত্ত বা ফোকাস ধরে রাখতে না পারার কারণে নজর মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক চলে যায়। নামাজে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারিনা। এভাবে মনোযোগহীন অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে, কিন্ত তাতে আদৌ সওয়াব হবে কি না সেটা অনিশ্চিত।
রাসূলের (সাঃ) একটা হাদীস আছে এমন- অশান্ত মনের দোয়া আল্লাহ কবুল করেনা। তাই নামাজের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আলেম-উলামারা কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। যেমনঃ নামাজের মধ্যে কল্পনা করতে হবে আজরাইল আমার পিছনে সব সময় দাড়িয়ে আছে, যেকোন মুহুর্তে জান কবজ করে নিয়ে যেতে পারে। আর আল্লাহ আমার নামাজ পড়া দেখছেন, তাই আরো ভাল ভাবে ও মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এর সাথে ভাবতে হবে আমার বাম পাশে রয়েছে ভয়ানক অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত দোযখ, নামাজ না পড়লে বা অন্যান্য পাপের দরুণ এটাতে আমাদের জ্বলতে হবে আর ডান পাশে রয়েছে চির সুখ ও সমৃদ্ধির স্থান জান্নাত, যেখানে আল্লাহ ও রাসুলের (সাঃ) আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে ঐখানে চিরস্থায়ী ভাবে থাকতে পারব।। এই প্রাক্টিসের মাধ্যমে আশাকরি নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হবে।
এরপর ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে সালাম ফেরালো। আমি বাইরে চলে এলাম কিন্ত জাপানের মানচিত্র, শহরের নাম ও অবস্থান আমার মনের মধ্যে তখনো ভাসতে লাগলো। তাই আমাদের উচিৎ এসব লেখা যুক্ত পোশাক না পরে প্লেইন কালারের পোশাক পরে মসজিদে আসা। জামা বা পাঞ্জাবীতে ফুল হোক বা যেকোন অঙ্কন এড়ানো উচিৎ। মসজিদের কার্পেট প্লেইন হলে ভাল হয়। এতে করে অন্য মুসল্লীদের নামাজে ফোকাস ধরে রাখতে সহায়তা হবে। এই পোষ্ট লিখতে লিখতে চলে এলো ৮ নং গাড়ী, আমি আল্লাহর নামে ছুটে চললাম যাত্রাবাড়ী।
যাহোক, যেহেতু গাড়ীতে ঘুমিয়েছিলাম সেহেতু রাত তিনটার পর আর ঘুম আসছিল না। বাইরে হাটা-হাটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্ত আম্মোর শহরে আমার জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে জেনেও বাসে বসে থাকা সঙ্গত মনে করলাম। বলা তো যায়না কে কোথা থেকে এসে চাকু ধরে বলে 'মোবাইলটা দিয়ে দে নইলে কিডনি একটা খুলে নিব!', অথবা তেনারা এসে যদি পকেটে কাগজের মোড়া ঢুকিয়ে আমার মত সহজ-সরল ছেলেকে আবার ** ব্যবসায়ী বানিয়ে ফেলে! গভীর রাতে বা যখন রাস্তায় মানুষের চলাচল কম থাকে তখন আমাদের দেশে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। যাহোক, এভাবে বসে থাকতে থাকতে এক সময় ফজরের আজান দিল। নামাজ পড়ার জন্য শ্যামলী কেন্দ্রীয় মসজিদে গেলাম।
দু'রাকাত সুন্নাত পড়ার পর ইমাম সাহেব ফরজ পড়ার জন্য প্রস্তত হল। ক্বিরাতে অনেক লম্বা সুরা পড়লো। কিন্ত আমার সমস্যা হচ্ছিল, আমার সামনে যে লোকটা দাড়িয়েছিল তার গায়ে একটা জ্যাকেট ছিল। সেই জ্যাকেটের পিছনে জাপানের মানচিত্র আঁকানো। আরো খেয়াল করে দেখলাম ঐ মানচিত্রের মধ্যে 'টোকিও' নামটা আছে। টোকিও জাপানের রাজধানী এবং আমাদের সকলের পরিচিত নাম। টোকিও নামের আশে-পাশে চোখ বুলাতে আরো দেখলাম- Sapporo, Aomori, Sendai, Ota, Osaka, Kobe, Hiroshima, Yokosuka, Gifu, Nagoya, Etajima ইত্যাদি। এগুলা জাপানের বড় বড় শহর।
আমার বি.সি.এস দেয়ার ইচ্ছে কোন কালে ছিল না এবং এখনো নাই। যেহেতু নামগুলোর মধ্যে আগে কয়েকটার নাম মুখস্ত ছিল আর নামাজের ভিতরে ঐ লোকের জ্যাকেটের দিকে বার-বার নজর যাচ্ছিল তাই আরো কয়েকবার চোখ বুলিয়ে বাকীগুলার নামও মুখস্ত করে নিলাম। বলা তো যায়না, কোথায় কি কাজে লাগে! :P
শৈশবের একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমি তখন ক্লাস ফোরে বা ফাইভে পড়ি। নিয়মিত মসজিদে যেতাম। তো মসজিদে একটা বুড়ো আসত নামাজ পড়তে। তার অভ্যাস ছিল এমন যে, নামাজের কাতারে তারপাশে কেউ দাড়ালে এবং বুড়োর গায়ে যদি কোন রকম স্পর্শ লাগত, বুড়ো নামাজের মধ্যেই তার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে শাসাত। আর নামাজ শেষ হলে সালাম ফিরানোর পর তাকে বকা-ঝকা করত। তাই বুড়োর দুই পাশে যারা দাড়াত তারা যথেষ্ঠ ফাকা স্থান রেখেই দাড়াত, যদিও এটা নিয়ম না। নিয়ম হল কাধে কাধ মিলিয়ে দাঁড়ানো।
একদিন আমি সাদা পাঞ্জাবী পরে মসজিদে গেছি এবং নামাজের সময় আমার স্থান হল ঐ বুড়োর পাশে। আমিতো বুড়োর অভ্যাস জানি। আমি দুষ্টুমি করে আমার কনুই দিয়ে বুড়োর কনুইতে ধাক্কা দিলাম। বুড়ো কটমট করে আমার দিকে তাকালো। আমি আবার কনুই দিয়ে তাকে ধাক্কা দিলাম। বুড়ো নামাজরত অবস্থায় আমার দিকে ফিরে আবার চোখ দিয়ে শাসাল। কিন্ত নামাজ শেষ না হলে কিছুই বলতে পারছেনা। আমি আরো একবার বুড়োকে কনুই দিয়ে জোরে ধাক্কা দিলাম। মনে হল বুড়ো নামাজের মধ্যেই আমাকে মেরে বসবে। ধাক্কা দিয়ে ঐ জায়গা থেকে চলে এসে অন্য লাইনে দাড়ালাম আর আমার স্থানে আমার বন্ধু গিয়ে দাড়ালো। আমার ধাক্কা দেওয়ার পর বন্ধু মসজিদে আসছে এবং তার গায়েও সাদা পাঞ্জাবী। নামাজ পড়া শেষ হলে বুড়ো আমার বন্ধুকে থাপড়াতে লাগলো যে কেন তাকে নামাজের মধ্যে কনুই দিয়ে গুতো দিল! বন্ধু যতই বলে "আমি দেই নাই", বুড়ো তো বিশ্বাস করেনা। বলে তোর গায়ে সাদা পাঞ্জাবী ছিল এখনো আছে, ধাক্কা তুই দিছিস। পরে আমরা সকলে মিলে বুড়োর হাত থেকে বন্ধুকে উদ্ধার করি। এ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই আমাদের মধ্যে হাসা-হাসি হত।
তো নামাজের মধ্যে নিয়ম হচ্ছে দাঁড়ানো অবস্থায় চোখের নজর থাকবে সিজদা দেয়ার স্থানে, রুকুতে দুই পায়ের পাতার মাঝে, সিজদারত অবস্থায় নাকের ডগা বরাবর আর বসা অবস্থায় তলপেটের দিকে। এটা পুরুষদের জন্য, মহিলাদের নিয়মটা দেখতে হবে। কিন্ত আমাদের ঈমানের দুর্বলতা, অস্থির চিত্ত বা ফোকাস ধরে রাখতে না পারার কারণে নজর মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক চলে যায়। নামাজে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারিনা। এভাবে মনোযোগহীন অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজের ফরজ আদায় হয়ে যাবে, কিন্ত তাতে আদৌ সওয়াব হবে কি না সেটা অনিশ্চিত।
রাসূলের (সাঃ) একটা হাদীস আছে এমন- অশান্ত মনের দোয়া আল্লাহ কবুল করেনা। তাই নামাজের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আলেম-উলামারা কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। যেমনঃ নামাজের মধ্যে কল্পনা করতে হবে আজরাইল আমার পিছনে সব সময় দাড়িয়ে আছে, যেকোন মুহুর্তে জান কবজ করে নিয়ে যেতে পারে। আর আল্লাহ আমার নামাজ পড়া দেখছেন, তাই আরো ভাল ভাবে ও মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। এর সাথে ভাবতে হবে আমার বাম পাশে রয়েছে ভয়ানক অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত দোযখ, নামাজ না পড়লে বা অন্যান্য পাপের দরুণ এটাতে আমাদের জ্বলতে হবে আর ডান পাশে রয়েছে চির সুখ ও সমৃদ্ধির স্থান জান্নাত, যেখানে আল্লাহ ও রাসুলের (সাঃ) আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে ঐখানে চিরস্থায়ী ভাবে থাকতে পারব।। এই প্রাক্টিসের মাধ্যমে আশাকরি নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হবে।
এরপর ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে সালাম ফেরালো। আমি বাইরে চলে এলাম কিন্ত জাপানের মানচিত্র, শহরের নাম ও অবস্থান আমার মনের মধ্যে তখনো ভাসতে লাগলো। তাই আমাদের উচিৎ এসব লেখা যুক্ত পোশাক না পরে প্লেইন কালারের পোশাক পরে মসজিদে আসা। জামা বা পাঞ্জাবীতে ফুল হোক বা যেকোন অঙ্কন এড়ানো উচিৎ। মসজিদের কার্পেট প্লেইন হলে ভাল হয়। এতে করে অন্য মুসল্লীদের নামাজে ফোকাস ধরে রাখতে সহায়তা হবে। এই পোষ্ট লিখতে লিখতে চলে এলো ৮ নং গাড়ী, আমি আল্লাহর নামে ছুটে চললাম যাত্রাবাড়ী।
