আজকে, লাঞ্চের একটু পড়ে, তিতুমির কলেজের ছাত্রলীগের ক্রীড়া-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে এক মিষ্টভাষী ভদ্রলোক ফোন করে আমাকে (অফিসের টি.এন.টি তে)। তার মিষ্টি ভাষায় যা বুঝলাম তা হল উনি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ উত্তর VS ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ দক্ষিনের মাঝে একটি শীতকালীন প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করতে চাচ্ছেন। স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে, ছেলেপেলেদের চাঙ্গা করার জন্য যে খেলাধুলার বিকল্প নেই তা নিয়ে উনি রীতিমতো টানা ১০ মিনিট আকাশ পাতাল এক করে লেকচার দিলেন। আমি চুপ করে উনার কথা শেষ পর্যন্ত শুনলাম।
আস্তে আস্তে উনি উনার মতলবের কথায় আসলেন; বললেন যে, দেখেন এখন বাচ্চাদের বল ব্যাট কেনায় কিছু সহযোগিতা করেন। আমি বললাম, অবশ্যই করবো সহযোগিতা... আপনার একজন কর্মী কে এখনই পাঠিয়ে দেন; আমি ওর কাছে ৩/৪ টা ডিয়ার-5 ফুটবল কিনে দিয়ে দিচ্ছি। উনি উত্তর দিলেন ‘না না আপনি আমাদের কিছু ক্যাশ দিয়ে সহযোগিতা করেন... বল আলরেডি আমাদের আছে’। আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম ‘ক্যাশ লাগবে কেন?’ উনি তবুও রেগে গেলেন না, আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝালেন যে ফুটবল খেলার ব্রেকের মধ্যে কিছু খানা পিনা জোগান করতে হবে তাই উনারা ক্যাশ টাকাটাই প্রেফার করছেন।
আমি অত্যন্ত কোমল ভাবে জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাই আপনাদের টোটাল বাজেট কত??’ উনি হয়ত ভাবলেন যে আমি বিষয়টা একাই স্পন্সর করতে ইন্টারেস্টেড তাই পুরো বাজেট টা শুনতে চাচ্ছি। উনি বললেন ‘ভাই আপাথত ছেলেপেলে ৩৭ লাখ টাকার একটা বাজেট পেশ করেছে। তবে অত লাগবে নাহ... ৩০ এর মধ্যে ফুল প্রোগ্রাম সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা যাবে’। আমি বললাম ‘ওরে বাবা এত বড় বাজেট কেনও?’ উনি বললেন ভাই ৭০০ কর্মী খাওয়া দাওয়া করবে, ১২ তা গরু তো লাগবেই। ফুল ডিটেইল বাজেট আমার কাছে করা আছে, আপনাকে ফ্যাক্স করবো এখনই? আমি বললাম ‘না ফ্যাক্স করা লাগবে নাহ... আপনি ২২ জন খেলোয়াড়ের সাস্থের দিকে তাকালেন কিন্তু বাকি সাড়ে ছয়শ কর্মীর সাস্থের দিকে তাকালেন নাহ, আপনি কেমন সেক্রেটারি হইসেন’?? এবার মিষ্টি ভাই আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন নাহ। আমাকে কড়া গলায় প্রশ্ন করলো ‘আপনার নাম কি’?
আমি বললাম : “ফোন করেছেন তো আপনি; আপনি জানেন না আমার নাম”??
উনি উত্তর দিলেন : ‘খারান... আপনার চৌদ্দ গুষ্টি বাইর করতেসি’
আমি মনে সাহস রেখে বললাম : “আমি কি হল্ডে থাকব ভাই?”
উনি পাশে দাঁড়ানো তার কর্মী বললেন : ‘ঐ হারামি কই কল দিসত? আমারে নাম দেখা কোম্পানির’
পাশে দাঁড়ানো কর্মী কে স্পষ্ট বলতে শুনলাম ‘ভাই লিস্ট তো আপনার সামনে... আপনি কারে কল দিসেন আমি কেমনে জানবো?’
আমি মনে হয় বুকে পানি ফিরে পেলাম... আমি বলতে থাকলাম “শুনেন শুনেন, আমার নাম্বার লেখেন আপনি; আমি বলতেসি... ৯৮৮১২xx” গড় গড় করে আমি বানিয়ে একটা নাম্বার বললাম। উনি যে নাম্বার টা কলম দিয়ে কাগজে লেখলেন সেই খশ খশ আওয়াজ ও পেলাম
উনি বলতে থাকল ‘তোর কোম্পানি কেমনে গুলশানে বিজনেস করে আমি দেখব’
আমি বললাম : “ভাইজান ম্যাচের রেফারী কে হবে ঠিক করেছেন??”
উনি উত্তর দিলেন : ‘খাড়া... আমি আইতাসি তোর অফিসে’
আমি বলে যেতে থাকলাম : “রেফারী হিসেবে এরশাদ চাচারে নিতে পারেন। উনার শরীরে বল আসে মাশাল্লাহ”
উনি উত্তর দিলেন : *^%%$#%
আমি বলে যেতে থাকলাম : “বাজেটে সমস্যা নাই আমার ... এরশাদ চাচারে রেফারী পদে ফিক্স করেন, আমি যত টাকা লাগে দিব। শর্ত একটাই, উনাকে হালফ প্যান্ট পড়ে রেফারীগিরি করতে হবে”
উনি খট করে ফোন রেখে দিলেন
ফোন রেখেছে প্রায় ২ ঘণ্টা হল। এখন পর্যন্ত উনি এর কল দেয়নি। মনে হয় তাড়াহুড়ায় আমার মিছি মিছি নাম্বারে ডায়াল করে আমি কোন অফিসের বেয়াদপ তা শিওর হতে গিয়ে উনি উনার টি.এন.টির সেটের লাস্ট ডায়াল্ড নাম্বারটাও (আমার আসল নাম্বারটা) হারিয়েছে। আবার এমনও হতে পারে উনি কারেক্টলি আমাকে আইডেন্টিফাই করেছেন এবং উনি কিছু কর্মী নিয়ে রওনা দিয়েছে আমার অফিসে। যদিও তিতুমির কলেজ থেকে আমার অফিস গুলশান ২ এ আসতে ২ ঘণ্টা লাগার কথা নাহ। আবার এমন ও হতে পারে উনি সাঙ্গ পাঙ্গ জোগাড় করতে করতে ১ ঘণ্টা লেগেছে এখন উনি রাস্তায় আছে।
আল্লাহ্ ভরসা...
[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট
http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]