প্রফেশন vs সুরত

“প্রফেশনের” সাথে “সুরতের মিল” কেনও জানি দিন দিন কমে যাছে!

-ছোটবেলায়, “ডাকাত” শুনলে, চোখের সামনে ভেসে উঠত ইয়া বড় গোঁফ ওয়ালা, লাল চোখের কোনও আদমির চেহারা। কিন্তু আজকাল ডাকাত কি সেই আইকন ধরে রাখতে পেরেছে? ইদানিংকালের ডাকাতের সাইজ হল লুতফজ্জামান বাবরের সাইজের; যারা টেম্পুর ভিতরে সাচ্ছন্দে হাঁটাচলা করতে পারবে; সাইজ দেখলেই হাসি পায়... এরা নাকি আবার শুনলাম ইদানিং শরীরে ভেসলিন মেখে, বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়েও চলে আসতে পারে

-“ডাক্তার” শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠে সুন্দর, ভদ্র, শান্ত চেহারার একজন হাসিখুশি মানুষ। কিন্তু আজকালকের ডাক্তার দেখলে মনে হয় উনি নিজেই রুগী, কোনমতে ওরে কোলে করে এনে চেয়ারে বসানো হয়েছে... রুগী দেখা শেষ হলে, আবার কোলে করে বিছানায় শোয়ায় দেয়া হবে

-“কসাই” শুনলে মনে হয়... বুকে পশম ছাড়া, চওড়া বুকের পাষাণ চেহারার গম্ভীর কেউ হবেন। গত সপ্তাহে একজন এসেছেন টিংটিঙে ফিগারের একজন। আমি ওকে দেখে বললাম, 'আপনার ফিগার দেখলে তো গরু খুশিতে হেসে ফেলবে হে'। উনি আমার কথা শুনে, না বুঝেই নড়েনড়ে হাসতে থাকলেন! আমার দৃঢ় বিশ্বাস... হাসিটা উনার ছিল; কিন্তু নড়াচড়াটা, আমার রুমের এসি’র বাতাসের কারনে হয়েছিল!

-আজকালের “কবি”দের নিয়ে আর কি বলব! কবি মানেই যে চোখের সামনে নিরমলেন্দু গুন টাইপ চেহারা ভেসে উঠত… আর আজকে? (আমার নেটওয়ার্কে যেহেতু অনেকেই ইদানিং কবিতা লেখে, তাই এই প্রসঙ্গ এখানেই থামিয়ে দেই :P)

-ছোট বেলায় দেখতাম, এলাকার “সন্ত্রাসী” মানে, লম্বা চুল, জিন্সের প্যান্টের সাথে মোটা বেল্ট, পায়ে কেডস। কিন্তু আজকের সন্ত্রাসিদের সুরত দেখলে কষ্ট লাগে।

গত মাসে, ১৫ই আগস্টের অনুষ্ঠান করার জন্য চাঁদা নিতে আসে একজন। কয়েকদিন থেকেই দেখা করার চান্স খুঁজছিলেন কিন্তু সময় দিতে পারছিলাম না। একদিন সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে অফিসে এসে পড়লেন। আমাকে নিচ থেকে জানান হয় যে, তিতুমির কলেজের ছাত্রলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সেক্রেটারি জুলফিকার তরফদার সাহেব আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। ভীত রিসিপ্সনিস্ট আরও জানালেন, উনার সাথে ২/৩ টা মটরসাইকেল করে আরও ৪/৫ জন আছেন... উনার বডি গার্ড মনে হয়...

আমি বললাম, শুধু উনাকে আসতে বলও আমার রুমে...আর উনার বডি গার্ডদের আমাদের গার্ড রুমে বসায়ে রাখো।

একটু পরে, সাড়ে ৪ ফিটের এক বান্দা আমার রুমের কাঁচের দরজা অনেক কষ্টে ঠেলে ঠুলে প্রবেশ করলেন। আমি কাগজ থেকে মাথা তুলে বললাম, কই আপনার বস কই?

উনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, আমি ই যুলফিকার তরফদার

ও আচ্ছা আচ্ছা ...বসেন বসেন।

আমার টেবিলের সামনের চেয়ারে উনি বসেছেন। সাইজ এতই ছোট যে; আমার, মাঝে মাঝে উকি মেরে উনার সাথে কথা বলতে হচ্ছে। আই লেভেল ঠিক না থাকলে কথা বলে আরাম পাওয়া যায় নাহ। এখন, উনি ক্যাডার মানুষ, উনাকে তো আর বলা যায় না যে, আপনি দাড়িয়ে কথা বলেন প্লিজ

আমি পিওনকে ডেকে বললাম, চেয়ারটা উঁচু করে দাও।

চেয়ার উঁচু করার পর দেখা গেল উনার চোখ আই লেভেলে এসেছে... কিন্তু ওদিকে, উনার পা চেয়ারে ঝুলছে... এক পায়ের স্যান্ডেল আবার ঝুলতে ঝুলতে, টপ করে নিচে পরে গেলেন

চাঁদাবাজির মত সেন্সিটিভ ইস্যু নিয়ে কথা তো আর হাসতে হাসতে করা যায় নাহ...

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Monday, 12 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম