আমার অফিসের এক বুড়ো পিওন, আমাকে ফোন করলো রাত ১০ টার দিকে। সে যা বলল তা এরকমঃ
“স্যার, আমার ছেলেকে চোখ বাইন্দে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”
আমি বললাম, ‘ওমা কেনও???’
সে বলল, “স্যার, আমার ছেলে একটা মেয়ের কাছে দশ হাজার টাকা পেতো... অনেকদিন থেকে দিচ্ছে নাহ... দিব দিব বলে ঘুরাচ্ছে। আজকে বিকালে আমার ছেলে, ওই মেয়ের কাছ থেকে টাকা ফিরত নিতে তার কলেজে গেলো। স্যার, মেয়েটা আবার অনেক অনেক দুষ্টু। সে টাকা ফিরত দিবে নাহ। আমার ছেলে করলো কি মাথা গরম করে মেয়ে কে একটা চড় দিলো। স্যার, এই সব দুষ্টু মেয়ের এইভাবেই শায়েস্তা করতে হয়। যাইহোক, টাকা না পেয়ে আমার ছেলে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে সবে মাত্র আমাদের সাথে ভাত খেতে বসেছে... এমন সময় পুলিশ এসে ওকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে গেলো। স্যার, আমি আমার খুব বিপদ... কিছু একটা করেন আপনি প্লিজজ”
তখন আমি আমার বড় মেয়েকে ঘুম পারাচ্ছিলাম। কোনমতে মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে, বউ কে মেনেজ করে আমি গেলাম থানায়। থানায় যেয়ে দেখি ঘটনা পুরা উল্টা। মামলা হয়েছে ‘ইভ টিজিঙ্গের’।
মামলার নথি পড়ে দেখলাম হিসেব তো মিলে যাচ্ছে। আসলেই তো ইভ টিজিঙ্গের কেউস!! এই ছেলে, ওই মেয়ের স্কুলে যেয়ে টাকা পায়নি দেখে চড় মারবে এটা তো বিশ্বাসযোগ্য কথা নাহ। আমি মেয়ের বাবার সাথেও আলাপ করলাম। গো বেচারা টাইপ মানুষ... পাশে উনার স্ত্রীও বোরকা পড়ে বসে আছেন। আমি উনাকে ডেকে বললাম, ‘খালাম্মা কাহিনী কি একটু খুলে বলেন আমাকে’। সে আমাকে ঘটনা খুলে বলল। আসলেই ছেলেটা, মেয়েটাকে খারাপ ভাবে উত্তক্ত করেছে আর মেয়ে যখন বলেছে সে এখনই থানায় যেয়ে সব কিছু বলে দিবে তখন ছেলেটা তাকে থাপ্পড় দিয়ে বলেছে যে, ‘যা তুই পারলে থানায়... থানা হইলো আমার শ্বশুরবাড়ি... ওখানে আমি প্রতিদিনই বিয়া করতে যাই... সাহস থাকলে যা থানায়... যা’
সম্পূর্ণ ঘটনাটার সময় পাশে ছিল ওই বাসার কাজের মেয়ে; যেকিনা, এখন বাদী (এবং সাক্ষী) হিসেবে থানাতেই বসে আছে আমাদের সামনে।
আমি সব কিছু শুনে ওসি সাহেবের রুমে ঢুকলাম। ওসি সাহেব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি করবো এখন বলেন’
আমি বললাম, ‘একটু কষ্ট করে একজন কাজি ডাক দেন। আমি ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেই’
ওসি সাহেব মজা পেলেও বেল টিপে সেন্ট্রি কে ডেকে সিরিয়াসলি বললেন, ‘আসামির বিয়া... ওকে গোসল করাও’ আর ‘সেকেন্ড অফিসারকে বলল, একজন কাজি ডেকে নিয়ে আসতে’
ছেলের বাপকে বললাম, ‘আপনি আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করে আসেন ও বিয়ে করবে কি না! ছেলের বাপ জোরে জোরে হেঁটে থানার কারাগারের দিকে গেলো’
মেয়ের বাপ আমাকে ফিসফিস করে বলল, ‘স্যার, আমার মেয়ের বিয়া তো আমি এই ছেলের সাথে দিব নাহ’।
আমি বললাম, ‘বিয়া আপনার মেয়ের সাথে হবে নাহ। আমি শুধু দেখতে চাই ছেলে এতে রাজি হয় কি না। সত্যি সত্যি টিজ করে থাকলে সে এই বিয়েতে রাজি হবে আর যদি আসলেই এই মেয়ের কাছে টাকা পাওনা থাকে তাহলে সে বিয়ে তে এতো সহজে রাজি হবে নাহ। এখন, ও যদি রাজি হয় তাহলে আমি আজকেই ওর বিয়ে দিব এই মামলার প্রধান সাক্ষী, আপনার বাসার ওই কাজের মেয়েটার সাথে... এনি প্রবলেম’?
উনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ...নো প্রবলেম..... এই মেয়ে এতিম... আমরাই ওর বাপ-মা’
ঠিক তখন ছেলের বাপ হাসি মুখে ওসি সাহেবের রুমে ঢুকে জানালেন যে, ‘আরিফ স্যার যেহেতু চাচ্ছেন তাই তার ছেলে এই বিয়েতে রাজি আছে’।
এখন, ছেলের বাপও খুশি, মেয়ের বাপ-মাও খুশি, ওসি সাহেবও খুশি আর ছেলে তো খুশিই... কারন মেয়েকে তার পছন্দ হয়েছেই বলে তো টিজ করে গিয়েছিল। সুতরাং এই ইভ কে তার পাত্রি হিসেবে পছন্দ :p
সবাই খুশি খুশি!
আমি বাসায় ফোন করে বউ কে বললাম, ‘বউ, আমি ড্রাইভার পাঠাচ্ছি বাসায়... ওর হাতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে দাও’
এতদিন, থানায় টাকা দিয়েছি খারাপ উদ্দেশে... আজ এই প্রথম কোনও টাকা দিতে যাচ্ছি ভালো উদ্দেশে
টাকা তো লাগবেই কারন... জামাই বাবাজী পাত্রির মুখ দর্শন করার পর যখন লাফালাফি শুরু করে দিবে তখন পুলিশকেই তো অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে।
মজাই লাগছে!
(শেষ)
*এই গল্পের কোনও দ্বিতীয় পর্ব নেই... শুধু এটা জেনে রাখেন যে টাকা পয়সা দিয়ে আমি এখনও আসামিকে কোর্টে চালান দাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছি... সে এখনও থানাতেই আছে। ওসি সাহেব প্রতিদিন তাকে ২ বার গোসল দাওাচ্ছে কারন তিনিও বদ্ধ পরিকর যে, এই ছেলে বিয়েতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত, না তাকে সে কোর্টে চালান দিবে... না দিবে থানা থেকে বের হওয়ার কোনও সুযোগ। থানায় থাকুক সমস্যা কি!
যাদের আমার এই কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তারা আমাকে ইনবক্স করেন, আমি থানার নাম আর ওসি সাহেবের ফোন নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি :P ক্রস চেক করে দেখেন। এক বিন্দু বাড়িয়ে বলছি না... আফটার ওল ইভ টিজিং এর বিরুদ্ধে এটা আমার প্রথম কোনও মুভমেন্ট :p
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]
