লাইভ, ইসলামিক সাওয়াল-জাওয়াব

...রোযার আগে, বছরের এই সময়ে, সাধারণত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো থেকে রমজানের বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সরের অফার আসতে থাকে। এই মৌসুমে দেখছি পুরোই ভিন্ন আমেজ... ভিন্ন স্ট্রেটেজি!

এই সপ্তাহেই অফিসে কল দিলেন ৩ জন আলেম। প্রত্যেকেই সময় চাচ্ছেন আমার সাথে দেখা করার জন্য। আমি হালকা চিন্তায় পরে গেলাম যে, এমন কি করে বসলাম যে আলেম সম্প্রদায় ক্ষেপে উঠেছে। ভাবতে ভাবতেই আরেকজন গত বিকেলে কল দিলেন। ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে জানাল যে, “বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার, তফসীর কারক ও ভাষ্যকার মাওলানা হাফেজ অমুক সাহেব” আপনার সাথে ফোনে কথা বলতে আগ্রহি।

নামের ভারিক্কী দেখে ফ্রন্ট ডেস্ককে বললাম, “দেন, কথা বলি”

সালাম দিয়ে উনি কথা বলা শুরু করল, “আরিফ সাহেব আপনি যদি একটু সময় দিতেন তাহলে আমি সশরীরে আসতাম আপনার সাথে দেখা করতে”।

আমি বললাম, “অবশ্যই... কি ব্যাপার যদি আগে একটু বলতেন তাহলে আমিও হয়ত কিছু হোম-ওয়ার্ক করে প্রস্তুত থাকতাম”

উনি বললেন, ‘আমি আসি আগে... এক সাথেই না হয় বসে ক্লাস-ওয়ার্ক করব... হা হা’

আমি মোটামটি স্কলার সাহেবের বাতচিতে মুগ্ধ। সময় দিলাম আজকে সকালে আসতে।

উনি ঠিক সময় মত সকালে অফিসে এসে উপস্থিত। বগলে বিশাল ফাইল নিয়ে আমার রুমে ঢুকল।

কফি খেতে খেতে উনি জানালেন যে উনি ৭ টা চ্যানেলে এর ১ ঘণ্টা করে কিনে ফেলেছেন। বলে হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

এমতাবস্থায় আমার কি বলা উচিত বুঝতে পারছিলাম নাহ। তাও আমি বললাম “মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ”

উনি বললেন, ‘ইসলামিক সাওাল-জাওাবের অনুষ্ঠানটা বেশী জমে আর আপনাদের টার্গেট মার্কেটও এটা বেশী খায়... আপনি এখানে ব্র্যান্ডিং করতে পারেন’

উনার মুখে ‘ব্র্যান্ডিং, বিজনেস, টার্গেট-মার্কেট’ এসব শুনে হালকা বিরক্ত লাগছিল। আমি আমার টোন চেইঞ্জ করে ফেললাম।

বলতে থাকলাম, “আপনাদের এই সব সাওয়াল-জাওয়াবের অনুষ্ঠানে, আসলে মানুষের কতোটুকু উপকার হয় জানি নাহ”

উনি অবাক হয়ে বললেন, “এটা কি বললেন ভাইসাহেব”?

আমি বললাম, আচ্ছা আমাকে একটা উত্তর দেন তো, “মনে করেন, আপনি আপনার কাপড়ের পটলা পাশে রেখে নামাজে দাঁড়িয়েছেন। নামাজরত অবস্থায় আপনি বুঝতে পারলেন যে চোর আপনার পটলা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এখন কি করনীয়?”

উনার মনে হয় প্রশ্নটা কমন পরেছেন। উনি চোখ বন্ধ করে বলতে থাকলেন, “ওই পটলায় জিনিসপত্রের মূল্য যদি ৭ তোলা পরিমান রৌপ্যের অধিক বা সমপরিমান হয়, কেবল তাহলেই আপনি নামাজ ভঙ্গ চোর কে পাকড়াও করতে পারবেন… নচেৎ নহে”

উনি চোখ খুললেন।

এবার আমি শুরু করলাম, “তারমানে, নামাজে বসে আমি এখন হিসেব করব যে পটলায় কি কি আছে… ওগুলো কত দিয়ে কিনেছিলাম… এখন রৌপ্যের বাজার দর কত… পটলায় রাখা আমার দুটো প্যান্ট বা ১ টি শার্ট যেগুলো আমি দুই বছর আগে কিনেছি ওটার মূল্য এখন মার্কেটে কত হওয়া উচিত… এই সব?”

উনি বললেন ‘না তা না... ওটা আপনার হিসেবে থাকবে না?’

আমি বললাম তারমানে “আমি নামাজ পড়তে বসার আগেই পোটলার হিসেবটা করে রাখব”?

উনি বললেন ‘না, তাও না’

“তাহলে?????”

...এবার আমি স্কলার সাহেবের মত, তার উত্তরের অপেক্ষায় চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম!

আর মনে মনে ওয়েট করছি যে কখন উনার ‘তা না...না তাও না’ শেষ হয় আর আমি নেক্সট প্রশ্নটা করি... ফোন ও লাইভের মত তো আর এখানে লাইন খট করে কেটে দিতে পারবে না...

ক্লাস ওয়ার্ক আজ, ভালই জমবে মনে হচ্ছে :p

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম