‘হাসি-তামাশার ভিতর দিয়ে শিক্ষাগ্রহণ’ কর্মসূচী

আমার টেবিলের সামনের সোফায় বসে আছে একজন ‘জাদুকর’... মধ্য বয়সী জাদুকর। শুধু আমাকে ইমপ্রেস করার জন্যই এই গরমে সে সুট আর নেক টাই পরে এসেছে। আমি ইম্প্রেসসড!!

সে অবশ্য একটা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে । তার স্বপ্ন হল, ‘জাদুর মাধ্যমে দেশের জন্য কিছু করা’। তার ভাষ্যমতে, তার প্রতিটি জাদুই শিক্ষণীয়। তার প্ল্যান হল আগামী ৩ মাসের মধ্যে ৬৪ টি জেলার প্রতিটি ‘জেলা স্কুলে’ বাচ্চাদের জাদু প্রদর্শন করবে। এই জাদুর মাধ্যমে কোমলমতী শিশুরা হাসিতামাশার ভিতর দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করবে। যে শিক্ষা পুঁথিগত শিক্ষা থেকেও অনেক কার্যকরী। মারতে-দাম-তাকক এই শিক্ষা তারা ভুলবে নাহ।

আমি বললাম, বিষয়টা আরও একটু বুঝিয়ে বলেন।

উনি পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আমাকে ওটাতে স্বাক্ষর দিতে বললেন... আমি স্বাক্ষর দিয়ে ওকে রুমালটা ফিরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে উনি এটা বাতাসে ছুড়ে মারলেন। সাথে সাথে ওটা হাওয়া হয়ে গেলো। আমি চোখ ছোট করে তাকিয়ে রইলাম। উনি আস্তে করে দাড়িয়ে, উনার প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে সেই রুমালটাই আবার বের করলেন। হ্যাঁ স্বাক্ষর আছে রুমালে।

উনি বলতে থাকলেন, ‘এ থেকে আমরা কি শিখলাম বাচ্চারা? শিখলাম যে, পরিষ্কার থাকার জন্য সব সময় পকেটে একটা রুমাল রাখতে হবে’।

আমি বললাম ‘ও’

উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার মিলসে?’

আমি বললাম ‘মোটামটি’

উনি বললেন, স্যার এইটা দেখেন তাইলে। বলেই পকেট থেকে একটা কয়েন বের করে মুখে ঢুকিয়ে কচ কচ করে খেয়ে ফেললেন। জাদুর পার্ট পরিপূর্ণ করার জন্য উনি আমার টেবিলে থাকা গ্লাসের পানিটাও খেলেন। ঠিক তারপরেই উনি ক্যোঁৎ করে একটা আওয়াজ করে পেটে বরই ব্যথা হচ্ছে ভাব নিয়ে পেটে হাত দিলেন। সাথে সাথে উনার পশ্চাৎদেশ এর কাছে লুকানো কোনও একটা গোপন পকেট থেকে ঝন ঝন করে কয়েকটা কয়েন আমার উডেন ফ্লরে পড়ল। ব্যাপারটা এমন যেন কয়েন খেয়েছেন মুখ দিয়ে আর বের হয়েছে নির্ধারিত জায়গা দিয়েই।

উনি বলতে থাকলেন, ‘বাচ্চারা এটা থেকে আমরা কি শিখলাম? শিখলাম যে কয়েন মুখে দিতে হয় নাহ। দিলে পেট ব্যথা হবে’। আর ব্যথা যে বহুগুণে হবে তা বোঝানোর জন্যই স্যার আমি পিছন দিয়ে ১টার বদলে ৭ টা কয়েন বাইর করসি।

উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার মিলসে?’

আমি বললাম ‘মোটামটি’

উনি সাথে সাথে উনার বুক পকেটে থাকা একটা প্লাস্টিকের তেলাপকা বের করলেন। ওটা বাম হাতের মুঠির মধ্যে নিলেন... বললেন, স্যার একটা ফুঁ দেন। আমি বললাম, ‘দিলাম ফুঁ’। মুঠি খোলার পরে দেখা গেলো এটা বাম হাতের মুঠিতে নেই... চলে এসেছে ডান হাতের মুঠিতে।

‘বাচ্চারা আমরা আজ কি শিখলাম, শিখলাম যে, বাথরুম করার পরে বাম হাত ঠিক মত সাবান নিয়ে না ধুইলে এই বাম হাতের ময়লা আমাদের অজান্তেই ডান হাতে চলে আসবে’।

উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার মিলসে?’

আমি বললাম ‘মোটামটি’

উনি আরেকটা কিছু দেখাতে যাবেন এমন সময় আমি উনাকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, আপনি আমার কাছে কি চাচ্ছেন খুলে বলেন।

উনি বললেন, ৬৪ টা জেলায় থাকা-খাওয়ার টাকা আপনি যদি আমাকে দেন তাহলে আমি আপনার কোম্পানির সিল মারা টাই পরে জাদু দেখাবো।

আমি মনে মনে ভাবলাম যে, উনি জাদু মোটামটি ভালই জানেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন সেটার সাথে উনি জাদু ঠিক ভালো ভাবে মিলাতে পাড়ছেন নাহ। উনার জাদু ঠিক আছে কিন্তু স্ক্রিপ্ট ঠিক নেই...আরও হোমওয়ার্ক করে আশা উচিত ছিল তার কারন, এখন তিনি এক রকম রীতিমতো জোর করেই মিলাচ্ছেন… এবং সেটা উনিও ভালো মত জানেন। আর এর জন্যই উনি একটু পর পর উনি জিজ্ঞেস করছেন, ‘স্যার মিলসে?’... ‘স্যার মিলসে?’

হঠাৎ করে কেনও জানি তার জন্য মায়া লেগে উঠল। আমি ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছি যে, সে আসলে আগামী ৩ মাস যেন শান্তিতে খেয়ে পরে থাকতে পারে তার একটা ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন। ‘৬৪ টি জেলার গল্প হল তার সারভাইভাল প্ল্যানের অংশ’।

আমি বললাম, ‘আমাকে জাদু শেখাবেন?’ প্রতি সপ্তাহে ১ দিন করে আমার অফিসে এসে আমাকে শেখাবেন। পারবেন? কত নিবেন বলেন।

উনি বলল, স্যার, প্রতি সপ্তাহে আমাকে ৩০০ করে মাসে ১২০০ টাকা দিতে হবে… আর এখন ৫০০ টাকা দিতে হবে এডভান্স!

আমি বললাম, ‘ok Done’

উনি, মাটিতে পরে থাকা কয়েনগুলো টুকাতে টুকাতে বলল, ‘স্যার তাইলে আজ উঠি’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘৬৪ টি জেলার প্ল্যানের কি হল’?

উনি উঠতে উঠতে বলল, ‘স্যার নিজে আগে বাঁচি… তারপর না হয় দেশের কোমলমতীদের বাঁচাবো’

**(গল্প শেষ… এখন বাচ্চারা বলেন তো আজকে আসলে আমরা কি শিখলাম?)

[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট  http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম