আমি, ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়তাম মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। তারপর, আমার আব্বা কি মনে করলো, আমাকে নিয়ে ভর্তি করালও মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুলে। ছিলাম ফুল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে... হঠাৎ গিয়ে পড়লাম পুরা আরবি মিডিয়াম স্কুলে; এই স্কুলকে, বাংলা মিডিয়াম না বলে কেন আরবি মিডিয়াম বলছি তার পিছে কারন কিছু হলেও আছে… একটু পরেই বুঝতে পারবেন
যাই হোক, পুরো yoo yoo ভাবনিয়ে ভর্তি হলাম আইডিয়ালে। সেই সময় আমাদের ড্রেস কোড ছিল মাথায় গোল ইসলামিক টুপি আর সাদা শার্ট; যেটা কিনা আবার ট্রাউজারের সাথে ইন করে পড়া যাবে নাহ। প্রথমদিনেই জাম্প কেডস এর সাথে ওদের ড্রেস কোড মিলিয়ে পড়ে গেলাম। প্রথম ঘণ্টার ঠিক কিছু আগে থেকে শুরু হল মাইকে তালীম দেওয়া। হেড স্যার এর রুম থেকে মাইক্রোফোনে তালিম দেওয়া হত আর ঐ তালীম প্রতিটি শ্রেণী কক্ষে বাজতো। তালীমের বিষয়বস্তুগুলো এখন খুব একটা মনে নেই তবে ইসলামিক ধ্যান ধারনা সমৃদ্ধ বিষয়সমূহের প্রতিই আলোকপাত করা হত। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে যে স্কুলের প্রথমদিনের প্রথম ক্লাসেই তালীম শুনতে শুনতে আমি একটা বিদ্রোহী কবিতা রচনা করে ফেলি। কবিতার প্রতিটি লাইন এখনও মনে থাকার কারন হল যে ঐ লেখাটি এখন পর্যন্ত আমার কাছে সংরক্ষিত আছে কবিতা এরকমঃ
===
“মনে পড়ে যখন ভর্তি হয়েছিলাম আইডিয়াল স্কুলে
বাবা, তুমিই তো প্রথম নিয়ে আমায় এলে
স্যার এর কাছে বুঝিয়ে আমার তুমি চলে গেলে
জানও কি তুমি আমায় ফেলে গেলে অথৈ সাগর জলে
কিংবা আমায় রেখে গেলে বিভীষিকাময় জেলে
এই জেল হতে মুক্তি আমি পেলে
আসবো নাকো কোনওও দিনওও ঢাকার মতিঝিলে এ”
===
তালীম শেষ হবার আগেই আমার জীবনের প্রথম বিদ্রোহী কবিতাটি রচিত হয়ে গেল। সারা ক্লাস আমি মনমরা হয়ে বসে ছিলাম। আইডিয়াল স্কুলের তরিকার কারনে যে মনমরা ছিলাম তা কিন্তু না... আসলে এই বয়সে, স্কুল চেইঞ্জ করলে পুরনো বন্ধু বান্ধব, আগের স্কুলের সৃতি, এসব প্রথম দিন খুব তাড়া করে... তাই প্রথমদিন কবিতা লেখার মত কাজটিও সাচ্ছন্দে করে ফেলতে পেড়েছিলাম।
টিফিনের ঠিক আগে আগে একজন দাঁড়িওয়ালা সুঠাম দেহের অধিকারী এক শিক্ষক ক্লাসে এসে ঘোষণা দিলেন যে আগামীকাল থেকে এই বছরের ‘কারাত’ প্রতিযোগিতার সিলেকশন শুরু হবে। আমি সেই রকম ইম্প্রেসড হয়ে গেলাম। যে স্কুলে কুংফু কারাতের মত সাবজেক্ট আছে সেই স্কুল আর যাই হউক, আমার এডজাস্ট করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে নাহ। সাথে সাথে আমি হাত তুল্লাম। আশেপাশের ছাত্ররা এবার মনেহয় বুঝতে পেরেছে যে আমি কি ডিয়ারিং চিজ… শুধু শুধুই আমি জাম্প কেডস পড়ে আসি নাই সুঠাম দেহের শিক্ষকটি আমার নাম টুকে নিলো আর জানালো যে আগামীকাল টিফিন টাইমে অডিশন হবে… অডিশন লিস্টে, আমার সিরিয়াল ছিল ২ নম্বরে। সিরিয়ালের প্রথমে ছিল আমাদের ক্লাসের সেকেন্ড বয়। প্রতিযোগিতার অডিশন লিস্টের দ্বিতীয়তে নাম থাকায়, স্পেশালই আইডিয়ালের সেকেন্ড বয়ের ঠিক পরে পরেই নাম থাকায়, আমি সেই রকম ঈর্ষা অনুভব করছিলাম… আর একটু পর পর আমার জাম্প কেডস এর জিব্বা টা বের করে রাখছিলাম। (সেই সময় জাম্প কেডস খুব হিট একটা আইটেম ছিল… ডিয়ারিং ছেলেপেলেরাই শুধু জাম্প কেডস এর জিব্বা বের করে রাখত; জিব্বা বলতে কি বুঝাচ্ছি তা আমি শিওর সেই সমসাময়িক ছেলেপেলেরা বুঝতে পারছেন :p)
কুংফু কারাতের বিষয়টা মাথায় থাকায় প্রথমদিন ক্লাস শেষ করতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। রাতে আব্বা জিজ্ঞেস করলো যে ‘কি রে কেমন লাগলো তোর ক্লাস?’ আমি ও বললাম যে ‘আব্বু নট ব্যাড’ (আহহ আমার ওইদিনের এক্সাইটমেন্ট স্বীকারউক্তিই যে আমাকে আইডিয়ালের সাথে ৬ বছর বেধে ফেলবে তা বুঝি নাই)
জ্যাকি চেনের বিভিন্ন স্টেপস আমি সারা রাত আউরালাম... পরের দিন সময়মত ক্লাসে গেলাম, টিফিন টাইম এলো, টিফিন চোখের নিমিষে খেয়ে ফেললাম তারপর অডিশনের জন্য নির্ধারিত শ্রেণী কক্ষে বিপুলল উৎসাহের সাথে গেলাম; অডিশন লিস্টের প্রথমে নাম থাকা আমাদের সেকেন্ড বয়ের টিফিন শেষ হবার আগেই আমি অডিশন রুমে পৌঁছে গেলাম...
(*চলবে*…গল্পের দ্বিতীয় পর্বের আগেই, এই পর্বেই আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের ক্লাসের সেই সময়ের সেকেন্ড বয়কে। তার নাম অডিশন লিস্টের প্রথমে না থেকে, আমার নামটা যদি প্রথমে থাকতো তাহলে হয়ত আজ আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্ট এতটা বড় হত নাহ… লজ্জায়, আমি আইডিয়াল স্কুলের কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টই হয়ত একসেপ্ট করতাম নাহ :p)
[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট
http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Saturday, 24 November 2012]
