বিচিত্র আমরা

৭/৮ বছর আগের কথা হবে... কি কারনে জানি মনটা খুব খারাপ ছিল। কি করলে মন ভাল হবে তাও বুঝতে পারছিলাম নাহ। কিছু একটা করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো কিন্তু কি করলে মন ভাল হবে তা মাথায় আসছিল নাহ। হুট করে ঠিক করলাম একা ফ্যান্টাসি কিংডম যাব। যেই চিন্তা সেই কাজ, ইউনিভার্সিটির ক্লাস থেকে সোজা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে, একটা হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে একাই রওনা দিলাম ফ্যান্টাসি কিংডমের উদ্দেশে। রাস্তায় যেতে যেতে ভাবছি, একা একা কি ওখানে যেয়ে মজা হবে? যাব নাকি ট্যাক্সি কে ঘুরাতে বলব! ট্যাক্সির ভিতরে বসে যখন এরকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম তখন দেখি সিটের পাশে একটা ‘গোল বল্টু’ (নাট-বল্টের বল্টু) পড়ে আছে... সাথে সাথে মাথায় একটা বুদ্ধি চেপে গেলো। বল্টুটা আস্তে করে পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম আর ট্যাক্সি ড্রাইভার কে বললাম... “ভাই, উড়ায় টানও ফ্যান্টাসি কিংডমে...দেরি করলে বখশিশ নট”।

যেয়ে দেখি একটা অফিসের (নাম বলা যাবে নাহ) কর্পোরেট ডে আউট হচ্ছে ওখানে। অনেক মধ্য বয়সী লোক হাসি খুশি ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। রোলার কোস্টার এর বেশ কিছু টিকেট কাটলাম... গম্ভীর মুখে লাইনে দাঁড়ালাম। সময়মত একজন গম্ভীরমুখো মানুষের পাশে যেয়ে গম্ভীর ভাবে বসে পড়লাম। রোলার কোস্টারের বেল্ট লাগানো হল, কোস্টার ছাড়বে ছাড়বে এমন সময় আমি পকেট থেকে বল্টুটা বের করে পাশের গম্ভীর মুখের ভাই কে বললাম, ‘ব্রাদার, এটা কথা থেকে আসলো?’ সাথে সাথে রোলার কোস্টার ছেড়ে দিলো। উনি ভুত দেখার মত চমকে উঠল বল্টু দেখে। আমি ও সেই রকম আতঙ্কিত হবার অভিনয় করলাম। উনি গলা ছেড়ে চিল্লাচ্ছে আর তিন সিট পিছে বসে থাকা উনার স্ত্রী কে গলা ফাটিয়ে বলছে ‘সালমা... বাবুদের শক্ত করে ধর... কোস্টারের নাট বল্টু ঢিলা হয়ে গেসে...সালমা...ঐ সালমা’

কে শুনে কার কথা অতক্ষণে রোলার কোস্টার সেই রকম গতিতে চলছে। সব আরোহীরা মজা করে চিল্লাচ্ছে আর আমি আর পাশের ব্রাদার আতঙ্কিত হয়ে চিল্লাচ্ছে। বল্টু তখনও আমার হাতে। উনি একটু পর পর আমার হাতের বল্টু দেখছেন আর গলা ফাটিয়ে সালমা ভাবি কে ডাকছেন।

রোলার কোস্টার থামার সাথে সাথে উনি দৌড়ে গেলেন পিছের সিটে বাবুরা ঠিক আছে নাকি দেখতে; আমি সাথে সাথে কাট মেরে বের হয়ে, জোরে জোরে হেঁটে ফ্যান্টাসি কিংডম থেকেই বের হয়ে গেলাম। ইচ্ছে ছিল আরও কয়েকজনকে ভয় দেখাবো এভাবে কিন্তু পড়ে আর সাহস হল নাহ। ট্যাক্সিতে উঠে মনে হল আসার সময় যতটা মন খারাপ ছিল, এখন একটুও নেই। খুশি খুশি বাসায় ফিরে এলাম।

ঘটনাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আজকে একটা ব্যাংকে গিয়েছি লোন রিলেটেড কিছু কাজে। যেয়ে দেখি উনি সেই ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমাকে অনেক খাতির যত্ন করলো... আব্বার কথা, বাসার কথা জিজ্ঞেস করলো। দুপুরে ভাবি নাকি নিজ হাতে আজ খিচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছে... ওটা এক চামচ হলেও খেয়ে যেতে হবে। আমি কোনমতে নিজের বউ এর দোহাই দিয়ে ওখান থেকে ভেগে আসি।

ভাগ্যিস উনি আমাকে চিনতে পারেন নি... নাকি চিনেছে দেখেই সালমা ভাবির রাধা খিচুড়ি খাওানর জন্য জোর-জবসস্তি করছিল; যেন খেতে খেতে উনি পুলিশ কল করার সময়টুকু পান... ইউ নেভার নো...

এ দেশ বরই বিচিত্র... এবং আরও বিচিত্র আমরা, এই দেশের হাসিখুসি এবং মন-খারাপ করে থাকা মানুষগুলো :p

[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট  http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Saturday, 24 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম