বিষয়বস্তু বাড়িয়ে বলা

আমাদের সবারই কম বেশী একটা গুন হল যে, ‘বিষয়বস্তুকে বাড়িয়ে বলা। এটাকে আমি দোষের কিছু বলছিনা কারন এই বাড়িয়ে বলা’ টা আমরা ইচ্ছে করেই করি পরিবেশগত কারনে নিজেদের প্রশান্তির জন্য। কারও ক্ষতি করার জন্য নয়!

যেমনরাতে ২ বাচ্চার কারনে খুব ভাল ঘুম হয়নি বলে সকাল ৯ তার দিকে অঘোরে ঘুমাচ্ছি। হঠা করে বউ বলল, ‘আরিফ আরিফভুমিকম্প হচ্ছে... আগুন লাগসে। আমি পড়ি কি মরি করে উঠে দিলাম দৌড় লিফটের সামনে থেকে fire extinguisher আনতে। মাঝ পথে মনে হল আগুন কইইতি মধ্যে বাসায় দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেছে। বউ কে যে জিজ্ঞেস করবো যে আগুন কই’ তার ও উপায় নাই কারনসে বেচারিও বিভ্রান্তের মত দুই বাচ্চা কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে। পরে আর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি যে ভাই আমার… আগুন কই পাইসিলা?’

নাস্তা করতে করতে শুনি বুয়া বলছে যেউপরের তলায় থাকা শো-কেসের উপর নাকি গ্রিলের জানালা ভেঙ্গে পড়েছে। চারিদিকে কাঁচের টুকরা চুরমার হয়ে পরে আছে… যাওয়াই যাবে না ওইদিকে এখন। বউ আম্মা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে। আমি ওদিকে কান দিলাম নাহ। আমি জানি যে গত কয়েকদিনের কাজের গাফলতির কারনে ভেঙ্গে যাওয়া প্লেট গ্লাস কে হালাল করার উপায় বের করছে তারা।

ফেসবুকে ঢুকে দেখি একজন স্ট্যাটাস দিয়েছে মাইরি… ১০ রিক্টার স্কেলে ধরণী কাঁপছে… আজ কি হবে। আমার টু-ডু লিস্টের মধ্যে একটা অন্যতম কাজ হল এই ভূতত্ত্ববিদ কে আন ফ্রেন্ড করা।

শুধু আজকের ঘটনা নাহগত বৃহস্পতিবারেআমি তখন অফিসে… আম্মা আমাকে কল দিয়েছে কি কাজে জানিতখন দুপুর ১ টার মত বাজে। কথা প্রসঙ্গে বলল যেরাস্তায় নাকি খুব জ্যাম। তার নাকি গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ এ যেতে লেগেছে চার ঘণ্টা আর আসতে লেগেছে তিন ঘণ্টা। আমি মনে মনে হিসাব করে দেখলাম এখন বাজে ১টা… তারমানে সে বাসা থেকে বের হয়েছে ভোর সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু আমি তো সাড়ে নয়টার দিকে নাস্তা খেতে খেতে দেখলাম গুলশান-১ এ যাওয়ার জন্য সে তখনও রেডিই হতে পারেনি… মাথায় পড়ার হিজাব খুঁজে পাচ্ছিল নাহ বলে।

আমার একান্ত পিওন নাকি ডেইলি ১৮ কিমি সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসে। এর জন্য প্রতিদিন তার দেরি হয়। একদিন জিজ্ঞেস করলাম তোমার বাসা কই’? সে উনায়ে বিনায়ে উত্তর দিলো স্যাররামপুরায়। আমি অবাক হয়ে বললাম রামপুরা থেকে গুলশান-২ এর দূরত্ব ১৪ কিমি নাকিসে উত্তর দিলো, ‘স্যার রাস্তা তো সুজা না... ঘুরায়ে আসতে হয়। এখন... সে কি যাত্রাবাড়ী ঘুরে আসে নাকি ওটা নিয়ে আর কথা বাড়ালাম নাহ।

গত সপ্তাহে এক বন্ধুর বিয়ের দাওয়াত ছিল। আমি দেশে ছিলাম না তাই যেতে পারিনি। দেশে আসার পরে ফোন করলো আমাকে সে। বলল আসলি না ব্যাটা... মিস করসস৭১০ গাড়ি নিয়ে বরযাত্রা করসি... শ্বশুরপক্ষ কাইত। আমি মনে মনে একটু বিরক্ত হয়েই ভাবলাম, ‘সাইয়্যাদেনা কমিউনিটি সেন্টারে বিয়া করতে গেসস ৭১০ গাড়ি নিয়ে। ফুটাবি তো সব দিক দিয়েই ফুটা... বেক্কল কোথাকার

মিথ্যা বলব নাআমিও বাড়িয়ে বলি মাঝে মাঝে... হ্যাঁতবে আমাদের নিজেদের সাথে নাহ। যেমন কোনও ফরেনার এর সাথে দেখা, ‘জিডিপি বা ব্যাংকের রিজার্ভ বা পার কেপিটা ইনকাম বা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শতকরা’ ইত্যাদি বাড়িয়ে বলা থেকে যা যা বাড়িয়ে বলা যায় তাই বলি। দেশ নিয়ে বাড়িয়ে বললে গুনা হয় নাহ। সওয়াব না হোকগুনা হবে নাহ আমার বিশ্বাস।

আশা করি আল্লাহ্ আমাদের এই বাড়িয়ে বলাটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এটা আমাদের কালচারের অংশ... বুঝতে হবে।

[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট  http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম