ইন্সুরেন্স কোম্পানি’র লোকের পাল্লায় কখনও পরেছেন

যে পরেনিসে কোনও দিনও বুঝতে পারবে না এরা কেমন টাইট মানুষ!

এসিস্টেন্ট ম্যানেজার আজম সাহেব’ নামের এক টাই পরা ভদ্রলোক গত সাড়ে তিন বছর থেকে আমার পিছে আঠার মত লেগে আছে… কোনও ভাবেই ছুটতে পারছি নাহ

বড় মেয়ে জন্ম নেবার ঠিক পরের দিন তিনি এক কংগ্রাচুলেশন লেখা’ কেক নিয়ে হাজির। হাসি মুখে উনার বিজনেস কার্ড আর কেক দিয়ে চলে গেলেন। গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যেসম্ভবত শুধু সেই দিনটিতেই আমি উনার সাথে হাসি মুখে কথা বলেছিলাম।

স্যার আপনার মেয়ে হয়েছে… তার জন্য একটা ইন্সুরেন্স পলিসি খুলে ফেলেন!

আমি এই সব বুঝি না… সুতরাং আমি ইন্সুরেন্স করব না

ওকে স্যার আমি আগামী সপ্তাহে আসব

আরে এসে লাভ কি হবেএমন তো বলিনি যেবিষয়টা আমাকে বুঝার জন্য টাইম দেন… নাকি?”

স্যার আগামী সপ্তাহে দেখা হবে

প্রতি সপ্তাহে উনি একবার করে অফিসে ঢুঁ মেরেই যাচ্ছেন। টানা ৮/৯ মাস এরকম বিরক্ত হয়েএকদিন অফিসের রিসিপ্সহন ডেস্কে বলে দিলাম, “এই বান্দা নেক্সট টাইম আসলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি আর এক কাপ কফি খাওয়ায় বিদেয় করবা। বলবে যে স্যার জরুরী মিটিং এ ঢুকেছে

এর পর থেকে উনি নতুন ঢং শুরু করলসকালে অফিসে আসার পর যখন রিসিপ্সহন ডেস্ক থেকে তাকে বলা হয় যে, ‘স্যার আজকে ব্যাস্ত… দেখা করতে পারবে না’! উনি উত্তর দেয় যে, ‘স্যারের ব্যাস্ততা কমুক… আমি বসি… আমার তাড়া নেই

দুপুরে আমাকে রিসিপ্সহন ডেস্ক থেকে জানায়, ‘স্যার উনি এখনও বসে আছেন!

ওমাওকে বিদায় করনি?”

উনি বলেছে যে আপনার ব্যাস্ততা শেষ হক… তারপর ২ মিনিটের জন্য দেখা করবে

বসে থাক যতক্ষন ইচ্ছে… কফি সাপ্লাই বন্ধ করে দাও

ওকে স্যার

তারপর আসলেই কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম… আবার ৪ টার দিকে রিসিপ্সহন ডেস্ক থেকে কল আসলো, ‘স্যার উনি এখনও বসে আছেন!

মানে কিবসে বসে করছে কি?”

স্যার এই এসিস্টেন্ট ম্যানেজার আজম সাহেবকে ম্যানেজ করা অনেক কঠিন… উনি বসে বসে পেপার পড়ছে…’

পেপার সাপ্লাই বন্ধ করে দাও… দরকার হলে হাত থেকে টান মেরে পেপার নিয়ে যাও… বলও যেসরিআজকে আমাদের অফিসের সব পেপার বিক্রি করার ডেইট। বুঝতে পেরেছ?”

কি মনে করে৫ টার দিকে আমিই রিসিপ্সহন ডেস্কে কল দিয়ে বললাম, “সে কোথায়?”

স্যার বসে আছে… নিজের পকেট থেকে কি জানি একটা বের করে পড়ছে। ওটাও হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিব স্যার?’

ওকে পাঠাও আমার কাছে

আজম সাহেব হাসিমুখে রুমে ঢুকলেন… আমি বললাম, “দুপুরে ভাত খেয়েছেন?”

স্যাররের অনেক দয়া… জি স্যার খেয়েছি

কখন খেলেন?”

স্যার আপনি যখন বাসায় লাঞ্চ করতে গেলেন সেই চাঞ্চে আমি ও ঝটপট লাঞ্চ করে এসেছি গুলশান-২ থেকে

শুনেনআমি আসলে ইন্সুরেন্স করার মতো অবস্থায় নেই। যদি কোনও দিন ডিসিশন নেই যে করবদেন ইউ উড বি দ্যা ফার্স্ট ওয়ান টু নো। ওকেভাল থাকবেন। আমি এখন আবার মিটিং এ ঢুকবো। আজ আসেন

কয়েকদিন পরেআবার উপস্থিত উনি… ততদিনে রিসিপ্সহন ডেস্কের এক্সিকিউটিভ চেইঞ্জ হয়ে নতুন এসেছে। রিসিপ্সহন ডেস্ক থেকে বলল, ‘স্যার আজম সাহেব নামের এক ভদ্রলোক আপনার মেয়ের জন্মদিনের কেক নিয়ে এসেছে

আমি মনে মনে হালকা খুশি হলাম যেআজ আমার মেয়ের জন্মদিন… এটা উনি মাথায় রেখে একটা কেক নিয়ে এসেছে… বেচারা। আচ্ছা উনাকে পাঠাও রুমে।

স্যার আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে আপনার মামুনির জন্য ছোট্ট একটা উপহার

ধন্যবাদ

স্যারপিতা হিসেবে আপনার মেয়েকে এই জন্মদিনে একটা ইন্সুরেন্স পলিসি গিফট করে দেন। সেটা আপনার মামুনির সারাজীবন মনে রাখবে!

প্রথম জন্মদিন গেল… দ্বিতীয় জন্মদিন গেল… তৃতীয় জন্মদিন গেলোআজম সাহেব এখনও হাল ছারেনি। ছোট মেয়ে হলসেই খবর ও তিনি পেয়ে গেলেন। হাসপাতালে কংগ্রাচুলেশন লেখা কেক নিয়ে হাজির।

কোনও ভাবেই উনার কাছ থেকে ছুটতে পারছি নাহ।

দুই সপ্তাহ আগে বাসার জন্য টুকটাক বাজার করতে ল্যাভেন্ডার গিয়েছি… ওখানে যেয়ে দেখি আমার পিছনে আজম সাহেব দাড়িয়ে।

স্যার ভাল আছেন?’

হ্যা ভাল আছি… আপনি এখানে?”

স্যার কি প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে আসেন সপ্তাহের বাজার করতে?’

আমি মনে মনে ভাবলাম… ইনি কে এখন আমাকে রীতিমতো ফলো করা শুরু করে দিয়েছে নাকিআমি তো আসলেই প্রতি বৃহস্পতিবার আসি এখানে… বাজারের কিছু না থাকলেও সিডি ডিভিডি কিনি। আমি বললাম, “হ্যা মাঝে মাঝে আসি আরকি!

যতক্ষণ টুকটাক কেনাকাটা করলাম ততক্ষন উনি আমার সাথেই থাকলেন। খুবই বিব্রতকর অবস্থা! স্যার এই সয়াবিন তেলটা নেন... এটা ভাল হবে... ভাবি খুশি হবে। স্যার মধু নিসেন মধু?’

গত বৃহস্পতিবার বউকেই নিয়ে গেলাম। বাজার করতে করতে বউ বলেএরকম উকিঝুকি মারছ কেনআমি বললাম কিছু না... তাড়াতাড়ি বাজার শেষ করো। বাসায় যাই... ঘুম এসেছে।

বাসায় ঢুকেই দেখি মোবাইলে এসএমএস; ‘স্যারসাথে ম্যাডাম ছিল দেখে এগিয়ে আসিনি। মামুনিদের সাথে ম্যাডামকেও একটা পলিসি গিফট করে সারপ্রাইস করে দিতে পারেন। মাশাল্লাহ ম্যাডাম এমনিতেও অনেক হাসিখুশি তারপরেও উনি অনেক খুশি হবেন

আজকে বৃহস্পতিবার... ল্যাভেন্ডারে যাব অফিসের পরে... আজকে যদি ওখানে এসিস্টেন্ট ম্যানেজার আজম সাহেবকে পাইতাহলে আমি ঠিক করেছি যে উনাকে আজকে আমার কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টেম্যানেজার পদে যোগ দিতে বলব। দরকার হলেসে এখন যে বেতন পায়তার দ্বিগুণ অফার করব!... ১০ লাখ টাকার পলিসি বিক্রি করে এখন সে যে কমিশন পায়৮০ লাখ টাকার এপার্টমেন্ট বিক্রি করতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই সে বেশ ভালই কমিশন পাবে। সাড়ে তিন বছরের বেশী সময় ধরে ইন্টার্ভিউ নিয়েছি... হি ডিজারভস ইট

কিন্তু কেনও জানি... কেনও জানিমনে হচ্ছে আজকে উনি ল্যাভেন্ডারে আসবেন না

[NB: মূল লেখক Arif R Hossain ভাই। উনার ওয়েবসাইট  http://arifrhossain.com ডাউন। তাই আমি ওয়েব আর্কাইভ থেকে কপি করে এখানে পোষ্ট করেছি, যাতে করে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও লেখাগুলা পড়তে পারে। Wednesday, 07 November 2012]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম