প্রেক্ষাপট -১:::
আমার এক বাল্য বন্ধুর খুব ইচ্ছে ছিল ও বড় হয়ে শেফ (বাবুর্চি) হবে। তার হাতের রান্না এবং পরিবেশনাও ছিল সেই রকম অসাধারন। খুব প্রাক্টিকালি-শৌখিন ছেলে না হলে মধ্যবিত্ত ঘরের কেউ নটরডেম কলেজে (কমার্সে) পড়তে পড়তে ভবিষ্যতে শেফ হওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে পারে নাহ। আমি নিশ্চিত ছিলাম ও যদি এই লাইনে পড়াশোনা করে অবশ্যই সে তার লক্ষে একদিন খুব ভাল মতই পৌছাতে পারবে। আমার এখনও মনে আছে, আমিই সেই সময় তাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছিলাম। এমনকি তাকে পর্যটন কর্পোরেশনে সাথে করে নিয়েও গিয়েছিলাম হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এর কোর্স সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে।
একদিন, সে তার আব্বা কে সাহস করে বলেই ফেললো যে ‘আব্বা আমি বড় হয়ে শেফ হতে চাই’। তার হজ ফেরত আব্বা এই কথা শুনে তাকে এমন জোরে একটা রাম থাপ্পড় মারে যে তার জিব্বার বাম পাশের অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। এখন আমার বন্ধু একটি সরকারি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। আব্বাজানের সেন্টিমেন্টের কারনেই হউক আর জিব্বায় অনুভূতি না থাকার কারনেই হউক, ঐ দিনের পর থেকে সে আর রান্না ঘরে ঢোকেনি। শৌখিন মানুষটি হয়ে গেলো কাঠকোটটা ব্যাংকার।
---
প্রেক্ষাপট -২:::
আমার এক ডিসট্যান্ট রিলেটিভ (সিনিয়র কাজিন ব্রাদার) গত ৪ বছর থেকে নিউজিল্যান্ডে থাকে। এক সময় সে জাতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্য ছিল... ২/৩ মৌসুম জাতীয় দলে খেলার পর পলিটিকাল দলাদলির কারনে অভিমান করে দেশ ছেড়ে চলে যায়। গত সপ্তাহে এসেছে বাংলাদেশে ৪ বছর পর। এসেই আমাদের বাসায় এসেছিল দেখা করতে। ড্রয়েং রুমে আমার আব্বার সাথে তার আলাপচারিতা কিছুটা এরকম ছিলঃ
আব্বাঃ গুড বয়... নিউজিল্যান্ডে এখন কি করছ?
উনিঃ আঙ্কেল আমি একটা হাই স্কুলে ক্রিকেট ট্রেইন করি
আব্বাঃ গুড... পাশাপাশি আর কি করছ?
উনিঃ আঙ্কেল একটা কাউন্টি টিমেও খেলছি
আব্বাঃ আচ্ছা... আচ্ছা...তাছাড়া??
উনিঃ আঙ্কেল ক্রিকেট প্র্যাকটিস করি
আব্বাঃ হুম
আব্বা অনেক কুতিয়ে কুতিয়ে প্রশ্ন করেও যখন দেখলও যে ছেলেটা খেলাধুলার বাইরে উত্তর দিচ্ছে নাহ তখন আব্বা খানিকটা বিরক্তই হন। চেহারা দেখে বুঝে নিলাম আব্বা মনে মনে বলছে ‘কাজের কিছু তো করো নাহ... রাত দিন খালি খেলা নিয়ে আসো... তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার’
---
আসলপট:::
খেলা জিনিষটাকে আমরা এখনও অনেকেই খেলা মনে করি। পড়াশোনা শেষ করে যে মানুষ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার এরকম কিছুর বাইরে কিছু একটা হতে পারে তা আমরা ভাবতেই পারি নাহ। রান্না করবা? খেলাধুলা করবা? করো কিন্তু আগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার হও, তারপর...
কারেন্ট জেনারেশন তাদের বাচ্চাদের কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনই মনে করে না যে ‘বেটা তুমি বড় হয়ে আসলে কি হতে চাও?’ জিজ্ঞেস করলে, কেউ কেউ উত্তর দিয়ে জিব্বার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে বা কেউ কেউ জিব্বানুভুতি হারানোর ভয়েই সঠিক উত্তর টা দেয় নাহ।
আমি অন্তত আমার দুই মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম করবো নাহ। ওদের যখন বোঝার জ্ঞান হবে তখনই ওদের কাছ থেকে শুনে নেব ওরা বড় হয়ে কি হতে চায়। বড় মেয়ে যদি বলে ‘বাবা, আমি নার্স হতে চাই’ আমি বলব ‘অবশ্যই মা... অবশ্যই। ছোট মেয়ে যদি মহিলা আম্পায়ারও হতে চায়, তখনও বলব ‘কেনও নয় মা ...কেনও নয়’
যতদিন না আমরা এই পেরেন্টস-জেনারেশন মুক্ত মনা হবো, ততদিন দেশ কোনকিছুতেই আগাবে নাহ... না আগাবে পড়াশোনায়... না আগাবে খেলাধুলায়.
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Sunday, 11 November 2012]
আমার এক বাল্য বন্ধুর খুব ইচ্ছে ছিল ও বড় হয়ে শেফ (বাবুর্চি) হবে। তার হাতের রান্না এবং পরিবেশনাও ছিল সেই রকম অসাধারন। খুব প্রাক্টিকালি-শৌখিন ছেলে না হলে মধ্যবিত্ত ঘরের কেউ নটরডেম কলেজে (কমার্সে) পড়তে পড়তে ভবিষ্যতে শেফ হওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে পারে নাহ। আমি নিশ্চিত ছিলাম ও যদি এই লাইনে পড়াশোনা করে অবশ্যই সে তার লক্ষে একদিন খুব ভাল মতই পৌছাতে পারবে। আমার এখনও মনে আছে, আমিই সেই সময় তাকে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছিলাম। এমনকি তাকে পর্যটন কর্পোরেশনে সাথে করে নিয়েও গিয়েছিলাম হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এর কোর্স সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে।
একদিন, সে তার আব্বা কে সাহস করে বলেই ফেললো যে ‘আব্বা আমি বড় হয়ে শেফ হতে চাই’। তার হজ ফেরত আব্বা এই কথা শুনে তাকে এমন জোরে একটা রাম থাপ্পড় মারে যে তার জিব্বার বাম পাশের অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। এখন আমার বন্ধু একটি সরকারি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। আব্বাজানের সেন্টিমেন্টের কারনেই হউক আর জিব্বায় অনুভূতি না থাকার কারনেই হউক, ঐ দিনের পর থেকে সে আর রান্না ঘরে ঢোকেনি। শৌখিন মানুষটি হয়ে গেলো কাঠকোটটা ব্যাংকার।
---
প্রেক্ষাপট -২:::
আমার এক ডিসট্যান্ট রিলেটিভ (সিনিয়র কাজিন ব্রাদার) গত ৪ বছর থেকে নিউজিল্যান্ডে থাকে। এক সময় সে জাতীয় ক্রিকেট টিমের সদস্য ছিল... ২/৩ মৌসুম জাতীয় দলে খেলার পর পলিটিকাল দলাদলির কারনে অভিমান করে দেশ ছেড়ে চলে যায়। গত সপ্তাহে এসেছে বাংলাদেশে ৪ বছর পর। এসেই আমাদের বাসায় এসেছিল দেখা করতে। ড্রয়েং রুমে আমার আব্বার সাথে তার আলাপচারিতা কিছুটা এরকম ছিলঃ
আব্বাঃ গুড বয়... নিউজিল্যান্ডে এখন কি করছ?
উনিঃ আঙ্কেল আমি একটা হাই স্কুলে ক্রিকেট ট্রেইন করি
আব্বাঃ গুড... পাশাপাশি আর কি করছ?
উনিঃ আঙ্কেল একটা কাউন্টি টিমেও খেলছি
আব্বাঃ আচ্ছা... আচ্ছা...তাছাড়া??
উনিঃ আঙ্কেল ক্রিকেট প্র্যাকটিস করি
আব্বাঃ হুম
আব্বা অনেক কুতিয়ে কুতিয়ে প্রশ্ন করেও যখন দেখলও যে ছেলেটা খেলাধুলার বাইরে উত্তর দিচ্ছে নাহ তখন আব্বা খানিকটা বিরক্তই হন। চেহারা দেখে বুঝে নিলাম আব্বা মনে মনে বলছে ‘কাজের কিছু তো করো নাহ... রাত দিন খালি খেলা নিয়ে আসো... তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার’
---
আসলপট:::
খেলা জিনিষটাকে আমরা এখনও অনেকেই খেলা মনে করি। পড়াশোনা শেষ করে যে মানুষ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার এরকম কিছুর বাইরে কিছু একটা হতে পারে তা আমরা ভাবতেই পারি নাহ। রান্না করবা? খেলাধুলা করবা? করো কিন্তু আগে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার হও, তারপর...
কারেন্ট জেনারেশন তাদের বাচ্চাদের কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনই মনে করে না যে ‘বেটা তুমি বড় হয়ে আসলে কি হতে চাও?’ জিজ্ঞেস করলে, কেউ কেউ উত্তর দিয়ে জিব্বার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে বা কেউ কেউ জিব্বানুভুতি হারানোর ভয়েই সঠিক উত্তর টা দেয় নাহ।
আমি অন্তত আমার দুই মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম করবো নাহ। ওদের যখন বোঝার জ্ঞান হবে তখনই ওদের কাছ থেকে শুনে নেব ওরা বড় হয়ে কি হতে চায়। বড় মেয়ে যদি বলে ‘বাবা, আমি নার্স হতে চাই’ আমি বলব ‘অবশ্যই মা... অবশ্যই। ছোট মেয়ে যদি মহিলা আম্পায়ারও হতে চায়, তখনও বলব ‘কেনও নয় মা ...কেনও নয়’
যতদিন না আমরা এই পেরেন্টস-জেনারেশন মুক্ত মনা হবো, ততদিন দেশ কোনকিছুতেই আগাবে নাহ... না আগাবে পড়াশোনায়... না আগাবে খেলাধুলায়.
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Sunday, 11 November 2012]
