||..একজন ‘অনন্ত জলিল’... ও আমরা কিছু, ‘অত্যন্ত খলিল’..||
... বৃহস্পতিবার, পিজা-হাঁটে ‘অনন্ত জলিল ও বর্ষার’ সাথে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালেই সেই ঘটনার ক্লিপ আমাকে ইনবক্স করে একজন পাঠিয়েছে। সেই সময় পিজা-হাঁটে উপস্থিত ছিল, এরকম একজনও ইনবক্স করে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়েছেন।
ক্লিপটি আমি গতকাল শেয়ার দেইনি কারন, ক্লিপের টাইটেলের সাথে ক্লিপের বিষয়বস্তু মিলছিল না! সত্যি বলতে, এই ক্লিপে, “অনন্তকেই অপেক্ষাকৃত ভদ্র লাগছিল”
সেই মুহূর্তে; সেখানে যে উপস্থিত ছিল, তার ভাষ্যমতে যা ঘটেছিলঃ অনন্ত আর বর্ষা পিজা-হাঁটে আসেন, সেই সময় পাশের এক টেবিলে বসে ছিল কিছু স্মার্ট ছেলে মেয়ে। তারা, অনন্তকে দেখে ‘আর ইউ পম গানা’কমেন্ট পাস করে। স্বাভাবিক ভাবেই অনন্ত এগিয়ে যায় সেই টেবিলের দিকে আর শুরু হয় তর্কা-তর্কী
আমি, অনন্তকে খুব ভাল করে চিনি না কিন্তু, ওতটুকু অন্তত চিনি যে, সে এই ক্ষেত্রে কি কি বলতে পারে! ‘ডু ইউ থিংক বাংলাদেশী হিরু আর আন-এডুকেটেড’..’ ডু ইউ নো, হাউ মেনি ল্যাঙ্গুয়েজ আই কেন স্পিক’ইত্যাদি বলছিল অনন্ত। হঠাৎ করে স্মার্ট টেবিল থেকে একজন স্মার্ট মেয়ে বলা শুরু করে, ‘রিকশাওয়ালার বাচ্চা, তোর ষ্ট্যাণ্ডার্ড এরকম দেখেই তো সিনেমায় আসিস... ভদ্র হলে কি আসতি সিনেমায়? আমরা জানি না কোন ফ্যামিলির ছেলে পেলে সিনেমায় আসে? তোর কথা শুনলেই বুঝা যায় যে তোরা বস্তি থেকে উঠে আসছিস’
আমি, অনন্তকে নিয়ে ফেসবুকে যে পরিমাণ পোষ্ট দিয়েছি, সেই পরিমাণ পোষ্ট হয়ত খুব বেশী মানুষ দেয়নি! আমার বিগত ৩/৪ মাসের পোষ্ট দেখলেই বুঝা যাবে আমি কি পরিমাণ তাকে পচিয়েছি! কিন্তু তারপরেও, কোনও দিন তাকে সামনে পেলে আমি কি পারতাম পচাতে? আচ্ছা আপনি পারতেন?
না, আমি-আপনি পারতাম না কারন আমরা জানি যে, ‘সব কিছুর একটা লিমিট আছে’… সব কিছু একটা জায়গায় যেয়ে থামিয়ে দিতে হয়!
যাই হক, পিজা-হাঁটে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বর্ষা সাথে সাথেই রিয়েক্ট করেন। পৃথিবীতে এমন কোন স্ত্রী আছে যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখবে যে তার হাজবেন্ড অপমানিত হচ্ছে, আর তাও আবার একজন মেয়ের কাছ থেকে? বর্ষা, উত্তেজনা সাম্লাতে না পেরে, একটি গ্লাস ছুঁড়ে মারেন মেয়েটির দিকে। সেখানে, অনন্তের জায়গায় আমি... আর বর্ষার জায়গায় আমার বউ থাকলে, শিওর আপনাদের ভাবি, ওরে কোলে করে কিচেনে নিয়ে, পিজা বেইক করার ওভেনে ঢুকিয়ে দিত। বর্ষা তো কমই রিয়েক্ট করেছে। কারন, আর যাই হক, এই কথাগুলো (রিকশাওয়ালার বাচ্চা, তোর ষ্ট্যাণ্ডার্ড এরকম দেখেই তো সিনেমায় আসিস... ভদ্র হলে কি আসতি সিনেমায়? আমরা জানি না কোন ফ্যামিলির ছেলে পেলে সিনেমায় আসে? তোর কথা শুনলেই বুঝা যায় যে তোরা বস্তি থেকে উঠে আসছিস) তো আর ফান করার মত কথা না
ক্লিপের শেষে দেখা যায় যে; অনন্ত তার স্ত্রীর এই আচরণের জন্য, হাত জোর করে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে চাইতে চলে আসেন ওখান থেকে।
কিন্তু সেই স্মার্ট টেবিল তখনও চেঁচিয়ে যাচ্ছিল, ঐ “শেমলেস রাস্কেল... কই যাস? ঐ বাস্টার্ড থাম” ইত্যাদি বলে
অনন্ত সিনেমায় আসার অনেক আগে থেকেই সে একজন সি.আই.পি। এই দেশে; আর যাই হক, দুর্নীতি করে বা সিস্টেম করে, ট্যাক্স ফাকি দিয়ে একজন সি.আই.পি (কমার্শিয়ালি ইম্পরটেন্ট পারসন) হওয়া যায় না! বছরের পর বছর সঠিক ট্যাক্স দিতে পারলেই কেবল একজন হতে পারে সিআইপি! যদি সিস্টেম করেই হত, তাহলে আজকে অনেক ছাত্রলীগ নেতাই সিআইপি হত! লক্ষ্য করবেন, সে সিনেমায় নামার আগে থেকেই সিআইপি... তার মানে সে ব্যাবসায়ি হিসেবে অনেক আগে থেকেই একজন সফল। সে শুধু টাকা কামানোর জন্য সিনেমায় নামে নি। সে, আসলেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু চেইঞ্জ আনার জন্য এসেছে। হ্যা, তারও কিছু ভুল আছে; “সে নিজে পিছনে থেকে, অন্য কোনও নায়ক কে মাঠে নামালে হয়ত সে বেশী সফল হত”। এরকম সমালোচনা অবশ্যই আমরা করতে পারি... কিন্তু লিমিটের বাইরে যেয়ে তাকে, তার স্ত্রীর সামনে স্মার্ট ডুডগিরি দেখানো, কি প্রকৃত বস্তিবাসীর এটিটিউড না?
ধরলাম, অনন্তের ৮০ ভাগ কাজই খারাপ... কিন্তু যে ২০ ভাগ ভাল আছে, ওগুলোর জন্য সে কি এপ্রিসিয়েশন পাওয়ার যোগ্য না? আচ্ছা এপ্রিসিয়েশনের দরকার নেই, তার এই ২০ ভাগ ভাল কাজের জন্য হলেও তো সে এভাবে পাবলিক প্লেইসে, স্ত্রীর সামনে অপমানিত হবার যোগ্য না… নাকি?
আচ্ছা, বলেন তো তার দোষ/ভুল টা কি? বাংলা ভাষার ১২টা বাজিয়েছে সে? এটা দোষের হয়ে থাকে তো মোস্তফা সারোয়ার ফারুকিকে আগে কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তো, আসলে অনন্তের ভুলগুলো কি? আমি বলি, তার ভুলগুলো কিঃ
- ৫০০০+ লোকের কর্মসংস্থান করে …সে বিরাট ভুল করছে
- মিসকিন জাতিকে ২০ কোটি টাকা দামের মুভি দেখিয়ে …সে বিরাট ভুল করছে
- তামিল/ভারতীয় নকল ছবির জায়গায় ফ্রেশ স্ক্রিপ্ট এর মুভি দেখিয়ে… সে বিরাট ভুল করছে
-বাংলা মুভিকে রিকশা ওয়ালা লেভেল থেকে আধুনিক/শিক্ষিত দর্শকদের পর্যায়ে আনার চেষ্টা করে… সে বিরাট ভুল করছে
-গাজী ট্যাংকির মত নায়িকার জাগায় বিদেশি গ্ল্যামারাস নায়িকা এনে… সে বিরাট ভুল করছে
-বাঙ্গালী, কাঠের ডামিতে পটকা ফাটা দেখত, সেখানে সে মুভিতে হাজার ডলারের ব্ল্যাংক গান দেখিয়ে …বিরাট ভুল করছে
- আপনে হাটুজলের মত মাফিয়া গডফদার হতেন তাহলে টক শোর হোস্ট আপনার পা চাটত, বাট সভ্য সিআইপি হওয়ায়… সে বিরাট ভুল করছে
লক্ষ্য করেছেন কিনা জানি না, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের টি.আর.পি বাড়ানোর জন্য অনন্তের ইন্টারভিও নিচ্ছে। ইন্টার্ভিউ তো আসলে নিচ্ছে না... উপস্থাপক চেষ্টা করছে জোর করে তার মুখ দিয়ে ফানি কিছু বের করার। একটা ফানি কিছু বের করতে পারলেই চ্যানেল হিট... কারন ঐ ক্লিপ ফেসবুকে হাজার হাজার শেয়ার পাবে। বাহ
এফএম রেডিও গুলো তো দৌড়ের উপর এপয়েন্টমেন্টই পাচ্ছে না। তাই বেশ কয়েকমাস আগের ক্লিপ বার বার বাজিয়ে যাচ্ছে!
ছোট বেলায় একটা কৌতুক শুনেছিলাম; “দোযখে প্রত্যেকটা দেশের একটা করে বড় ডেকচী আছে, যেখানে পাপীদের সিদ্ধ করা হয়। প্রত্যেকটা দেশের ডেকচীর উপরে গার্ড বসে থাকে, যদি কেউ ডেকচী থেকে উঠে পালাতে চায় তাই। কিন্তু বাংলাদেশের ডেকচীর উপরে কোনও গার্ড নেই, কারন, ডেকচী বেয়ে কেউ উপরে উঠার চেষ্টা করলে, নিচ থেকে অন্য বাঙ্গালী লাফফ দিয়ে ধরে ফেলে, তারে নিচে নামিয়ে আনে। সুতরাং গার্ডের দরকার কি?”
(যাই হক আর বেশী কিছু বলতে চাই না... শুধু এটা বলে রাখি, আজকের পর থেকে যদি আমার হোম পেইজে দেখি যে ওর নেগেটিভ দিক নিয়ে নিয়ে কেউ কোনও পোষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি ওকে ব্লক করে দিব। তার চেয়ে ভাল হবে, আমার এই পোস্ট যাদের ভাল লাগেনি, তারা এখনই আমাকে আনফ্রেন্ড করে দেন। এই বিষয়ে আপনার সাথে যদি আমার এখন না মিলে, আমার আগামী পোস্টগুলোতেও আপনার সাথে আমার মিলবে না! সুতরাং ঝামেলার দরকার কি!)
[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে। Wednesday, 14 November 2012]
