শয়তানের পাঠশালার প্রথম পাঠ হলো হতাশা -ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং জঘন্য কাজে উৎসাহ দেয়, পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদের তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। আল্লাহ বিপুলদাতা, সর্বজ্ঞ’। (সুরা বাকারা : ২৬৮)
শয়তান মানুষকে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত করে।আমার জীবনে কি হবে, না হবে; এটা পেলাম না ওটা কিভাবে পাব! - এরকম একটা দুশ্চিন্তার ভিতরে মানুষকে ফেলে দিয়ে শয়তান তার মনের মধ্যে প্রবেশ করে।
পক্ষান্তরে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো- তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং তোমাদের উপর অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের অতীত নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না আর ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়োনা, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখলে তোমাদের এখন যা আছে তার থেকে অনেক গুণ বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কাজেই আমাদের আল্লাহর এই ওয়াদার উপর আস্থা আনতে হবে এবং হতাশা এবং দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আর সাথে সাথে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদি কেউ আল্লাহর এই ওয়াদার উপর আস্থা না আনতে পারে তাহলে সে বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবে এবং কুফরিতে লিপ্ত হতে পারে - এভাবে সে ধীরে ধীরে জাহান্নামের পথে এগোবে।
হতাশা কিভাবে আসে
হতাশা আসে মূলত অতীতের কিছু অপ্রাপ্তি ও ভবিষ্যতের দূর্ভাবনা থেকে। বর্তমান নিয়ে আমাদের হতাশা খুবই কম। খারাপ চিন্তাটা এমন ভাবে আসে যে অতীতে এটা হয়নি, ওটা হয়নি - জীবনে কি আর পেলাম! অমুক এটা পেয়েছে, তমুক ওটা পেয়েছে! এটা পাইনি বলে জীবন এরকম হলো, ওটা পেলে জীবন আরো ভালো হতো, সবই শেষ হয়ে গেল! - আমাদের আক্ষেপ গুলো বেশিরভাগ এমন। এই প্রথম ধাপটা শুরু হয় আল্লাহর না-শুকরিয়া অর্থাৎ যেকোন অবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ বলতে না পারা। এটা একটা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ আমাকে কি দিয়েছেন সেটা মনে না রেখে, কি দেননি সেটা নিয়ে সব সময় ক্ষোভ প্রকাশ করা।
হতাশার পরিণতী
হতাশার ফলে সংসারে অশান্তি আসে। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতি বিরক্ত হয়, অনেক সময় সংসারে ভাঙ্গন ধরে। চাকুরীর জন্য হতাশ হয়ে অনেক যুবক মাদকাসক্ত হয়। হতাশাক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা আজকাল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর এটার ফলে কুফরে লিপ্ত হয়ে ঈমান হারানোর আশংকা তো আছেই।
হতাশা থেকে মুক্তির উপায়
আল্লাহ বলেন- ‘... তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না…’ (সূরা জুমার-৫৩) মহান আল্লাহ আরো বলেছেন, “আমার প্রতি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সঙ্গে আচরণ করি।…’ যদি কেউ এরকম ধারণা করে যে আল্লাহ আমাকে দয়া করবেন না, তাহলে তার সাথে আল্লাহর আচরণ সে রকমই হবে। আর যে ব্যক্তি আস্থা রাখবে আল্লাহ তার উপর একটু দেরীতে হলেও অবশ্যই দয়া করবেন - সে যতই খারাপ অবস্থায় থাক না কেন কখনোই তার মনোবল ভেঙে পড়বে না। পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে, ‘ যে ব্যক্তি বেশি বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ পেশ করবে, আল্লাহ তা'আলা তার হতাশা দূর করে দিবেন।'এইসব আমলের মাধ্যমে আমরা আমাদের ডিপ্রেশন তথা হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারি।
[ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের একটা ভিডিওর সংক্ষিপ্ত ট্রান্সক্রিপ্ট]