লং ডিসট্যান্ট ইভ টিজিং

আরেকটা গোপন সৃতি শেয়ার করি; অবশ্য এটা আমার জন্য গোপনীয় না; যাকে নিয়ে এই ঘটনা, তার জন্য এটা হালকা গোপনীয়। আমাদের সাথে সেই সময়ে আরেকজন বাঙালি ছাত্র পড়ত। ঢাকা আই.বি.এ থেকে বিবিএ করে এখানের বিজনেস স্কুলে মাস্টার্স করতে এসেছিল। আমার থেকে সে বয়সে ২/৩ বছরের ছোট ছিল বলে আমাকে ‘ভাই ভাই’ ডাকতো। উপরে উপরে আই.বি.এ ভাব নিলেও ভিতরে ভিতরে হালকা ফটকা টাইপ ছিল। ওর কাজই হল কলিং কার্ড কিনে ঢাকায় ফোন করে মেয়েদের সাথে গপ্প করা। চিনেনা... জানেনা এরকম রঙ নাম্বারে ইচ্ছে করে ডায়াল করে কথা বলত। মেয়ের গলা শুনলেই, ‘হ্যালো, অমুক আছে? আমি ইউ.কে থেকে ফোন করেছি’ বলে গপ্প শুরু করে দিত। কিছু মেয়ে কথা বলত না, কিছু মেয়ে ইউ.কে থেকে রঙ নাম্বার শুনেও কথা বলত। এটাই সে এঞ্জয় করত। প্রায় দুইদিন পর পরই সে কলিং কার্ড কিনে এসব করত। আমি বলতাম ‘বেটা টাকা খরচ করে যখন বাংলাদেশেই ফোন করছ, তখন মা বাবা ভাই বোন গার্লফ্রেন্ড ওদের কল দাও’। না, সে ওদেরকে সপ্তাহে একবার কল দিবে ...আর ডেইলি কল দিবে এরকম রেন্ডম বাঙালি মেয়েদের।

একদিন আমি ক্লাস শেষে মাঠের বেঞ্চে বসে ঢাকায় বউ এর সাথে গল্প করছি এমন সময় আমার কাছে এসে বলল ‘কি বস? কার সাথে মৌজ নিতেসেন?’ আমি বিরক্ত ভাব নিয়ে বললাম ‘বউ এর সাথে আলাপ করি’। ও একটু দূরে যেয়ে ঘাসের উপরে বসে হাসি হাসি মুখ নিয়ে কলিং কার্ডগুলো গুছাতে লাগলো। আমি ফোন শেষ করে ওর কাছে গেলাম। ও বলল ‘বস, বউ এর সাথে এত কি আলাপ? সারা জীবন তো পরেই আছে’। এখন ভাই আলাপ করবেন অন্য মানুষের বউ এর সাথে... নিজের বউ এর সাথে না... হে হে। বস জানেন, আমার কি হইসে জানি না কিন্তু বাংলায় ফষ্টি নসটি না মারলে আমার ঘুমই হয় না... ইংরেজিতে কি আর মজার মজার কথা বলে মেয়ে পটানো যায়? বাঙালি মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলার আবেগই আলাদা... নাকি বস?’ আমি বললাম, ‘হু’

সে বলতে থাকল, ‘তো বস আমার স্টক শেষ... আমাকে আপনার ২/১ টা বান্ধবির নাম্বার দিতে পারবেন’? কসম আল্লাহ আপনার নাম নিব না। জাস্ট নাম্বার আর নাম দিলেই হবে, বাকি কাজ আমার... আমার কথায় জাদু আসে বস বুঝলেন জাদু আসে। আমি বললাম, ‘আচ্ছা নোট করো’। আমি বললাম, “মেয়ের নাম হল ‘মিষ্টি’। খুব সুন্দরি মেয়ে। এক সময় টিভি তে নাটক ফাটক করত মনে হয়। অনেক্ লিবারেল ফেমেলির মেয়ে… ওকে কল দিতে পার। সেই নাও নাম্বার”; বলে ওকে আমি আলাউদ্দিন এর মিষ্টির দোকানের টি.এন.টি নাম্বার দিয়ে দিলাম। আমি বললাম, ‘ফোন করলে ওর ভাই ধরবে কিন্তু সমস্যা নেই, ওরা অনেক লিউবারেল... চাইলেই হবে ভাইয়ের কাছে’। সে আমার কাছে ফোন নম্বর নিয়ে লাফাতে লাফাতে রুমে চলে গেল।

২ দিন পর তার সাথে আমার দেখা হওয়ার সাথে সাথে বলল বস, ‘আপনি যে বললেন মিষ্টির ফ্যামিলি লিবারেল কিন্তু আসলে তো অনেক কনজারভেটিভ অ্যান্ড রুউড’। আমি বললাম, ‘কেন কি হলও’? ও বলল, প্রথম দিন কল দিয়ে ভাই কে বললাম, ‘স্লামালিকুম, মিষ্টি কি আছে’? উনি উত্তর দিল ‘আছে’। আমি বললাম ‘একটু দিবেন কি’? ভাই বলল, ‘অবশই দিব; আপনি আসেন’। আমি বললাম ‘ফোনে দেন আগে পড়ে নাহয় আসবো’। ভাই খট করে ফোন রেখে দিলেন। বুঝলাম নাহ বস।

পরের দিন আবার কল দিলাম, ‘বললাম মিষ্টি আছে’? উনি বলল ‘আছে তো’। আমি বললাম ‘দেন তাইলে’। উনি বলল ‘না আসলে কি ভাবে দিব’? আমি বললাম ‘ভাই আমি তো ইউ.কে এখন... ফোন টা দেন না মিষ্টিকে’। ভাই বলল ‘ফোনের ভিতর দিয়ে আইসা তোর ___ দিয়ে মিষ্টি ভইরা দিমু হারামি ফোন রাখখখ’। বস এমন করল কেন? এনি আইডিয়া??

আমি গম্ভীর মুখে বললাম “চিন্তার বিষয়... দুই দিন পরে আবার না হয় ট্রাই করো আর এই নাও আরেকটা নাম্বার রাখ; এই মেয়ের নাম ‘ময়না’... নামটা ওল্ড ফেসান্ড কিন্তু মেয়ে অনেক স্মার্ট... মডেলিং ফদেলিং করে। ওর বাবা হয়ত ফোন ধরবে, বাবা কে বললেই হবে ‘আঙ্কেল, একটু ময়নার সাথে কথা বলতে চাই’। বুঝলা?? এই নাও নাম্বার”... বলে কাঁটাবনের পশু-পাখির দোকানের নাম্বার দিয়ে দিলাম।

সে বলল, ‘বস... আপনি দেখি ছুপা রুস্তম দি গ্রেট...। থ্যাঙ্ক ইউ... থ্যাঙ্ক ইউ..’। আপনার ফিস এন্ড চিপস পাওনা থাকল। আমি বললাম, ‘নো প্রবলেম’

কাঁটাবনের আঙ্কেল কি বলে গালি দিয়েছিল জানি নাহ কিন্তু ওর পর থেকে সে ভুলেও আমার কাছে কোনদিন নাম্বার চায়নি। আর ওকেও খুব একটা ফোনে আলাপ করতে দেখতাম নাহ। কাঁটাবনের আঙ্কেল নিশ্চয়ই ভালই মুখ খারাপ করেছিল!

[NB: আরিফ ভাইয়ের ওয়েবসাইট (arifrhossain.com) ডাউন। আমি জানিনা উনার এই সাইটটা কে ম্যানেজ করে। এটা ডাউন রাখা উচিত হয়নি। উনার লেখাগুলা আমার কাছে অনেক ভাল লাগে। তাই ওয়েব আর্কাইভ থেকে লেখাগুলো কপি করে এখানে রেখে দিচ্ছি, যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম লেখাগুলো পড়তে পারে।]


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম