আসুন প্রথমে জেনে নিই কাদের দোয়া বেশি কবুল হয়
১. সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া২. মজলুম (যিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন)
৩. মুসাফির (যিনি দেশ-বিদেশ সফর করে বেড়ান)
দোয়া কখন কবুল হয়
১. শেষ রাতে তাহাজ্জুদের পরে২. আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়
৩. প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর (যেমনঃ জোহরের চার রাকাত ফরজের পর)
৪. বৃষ্টির সময়
কোন কোন বিষয়ে দোয়া করা যায়
দ্বীন-দুনিয়ার এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে পারবেনা। যা মনে চায় আল্লাহর কাছে তাই চাইবেন। এমনকি, বলা হয়েছে- যদি আপনার জুতার ফিতা ছিড়ে যায়, সেটা নিয়েও আল্লাহর কাছে বলতে পারেন। মনে করুন, আপনার টাকা ধার করা দরকার। আপনি কোন এক বন্ধুর কাছে যাচ্ছেন টাকা ধার চাইতে। বলা হয়েছে- দুনিয়ার কারো কাছে হাত পাতার আগে অবশ্যই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। বন্ধুর কাছে যাওয়ার আগে দু'রাকাত নামাজ পড়ে নিয়ে আল্লাহকে বলতে পারেন যে - আপনার অমুক প্রয়োজনে টাকা দরকার। তারপর বন্ধুর কাছে যান।দুয়া কবুল না হওয়ার কয়েকটি কারণ
কিছু পাপ আছে যা বান্দার মাঝে উপস্থিত থাকলে তার দুয়া কবুল হওয়ার জন্য বাঁধা হয়ে যায়। দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাই এগুলার প্রতি খেয়াল রাখতে হব। এই পাপগুলো তাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে- যদি কেউ চায় তার দুয়া কবুল করা হোক।যেমনঃ পাপগুলো হল-
১. হারাম খাদ্য, হারাম পানীয় ও হারাম বস্ত্র
কেউ হারাম কোনো খাবার খেলে বা কারো খাবার হারাম টাকায় কেনা হলে, পোশাক হারাম বা হারাম টাকায় কেনা হলে আল্লাহ ঐ অবস্থায় তার দুয়া কবুল করেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"হে মানব সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি এ ব্যাপারে মুমিনদের সে নির্দেশই দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসুলদেরকে। তিনি বলেছেনঃ
"হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর ও সৎকর্ম কর, তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত"।
এবং আল্লাহ (মুমিনদেরকে উদ্দেশ্য) করে বলেছেনঃ
"হে মুমিনগণ! তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা হতে আহার কর।"
এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে দীর্ঘ সফর করে মাথার চুলগুলোকে এলোমেলো করেছে এবং পদযুগল ধুলায় ধুসরিত করেছে অতঃপর আকাশের দিকে হাত তুলে দুআ করে, হে প্রভু! হে প্রভু! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার শরীর গঠিত হয়েছে হারাম দিয়ে, কিভাবে তার দুআ কবুল করা হবে?" [সহীহ মুসলিম]
২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বর্জন করা
মানুষকে ভালো কাজের দিকে আহবান না করলে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে না বললে অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগে অবহেলা করলে তার দুয়া আল্লাহ কবুল করেন না।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের প্রতি শাস্তি নাযিল করবেন অতঃপর তোমরা দুআ করবে কিন্তু তিনি তা কবুল করবেন না।" [তিরমিজী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
৩. দু'আ কবুলে তাড়াহুড়ো করা
অনেকে কিছুদিন দুয়া করার পরে আল্লাহর বিশেষ কোনো হেকমত অনুযায়ী দুয়া কবুল হতে দেরী হলে তাড়াহুড়া করে বা হতাশ হয়ে পড়ে। অভিযোগ করা শুরু করে দেয়। কই এতো দুয়া করলাম, আল্লাহ দুয় কবুল করেন না...আল্লাহ মনে হয় আমাদের কথা শুনেন না (নাউযুবিল্লাহ, এগুলা নাফরমানী ও কুফুরী কথা!)
এইসব কথা বলার শাস্তিস্বরূপ সত্যিই আল্লাহ তার দুয়া আর কবুল করেন না। এইজন্য ধৈর্য ধরে দুয়া করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হযরত জাকারিয়া (আঃ) অনেক অনেক বছর দুয়া করার পরে তাঁর দুয়া কবুল হয়েছিলো, তিনি পুত্র সন্তান পেয়েছিলেন একেবারে বৃদ্ধ বয়সে। তিনি ছিলেন আল্লাহর নবী, আর আমরা নিশ্চয়ই তাঁর থেকে উত্তম না। এইজন্য অবস্থা যাইহোক, ধৈর্য ধরতে হবে ও আল্লাহ কাছে আশা রেখে দুয়া করে যেতে হবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ "বান্দার দুআ সর্বদা কবুল করা হয় যদি সে দু'আতে পাপ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কের ছিন্ন করার কথা না বলে এবং তাড়াহুড়ো না করে। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াহুড়ো বলতে কি বুঝায়? তিনি বললেন, দুআতে তাড়াহুড়া হল, প্রার্থনাকারী বলে আমিতো দুআ করলাম কিন্তু কবুল হতে দেখলাম না। ফলে সে নিরাশ হয় ও ক্লান্ত হয়ে দুআ করা ছেড়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম।]
দুআয় এ ধরনের তাড়াহুড়া করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ "আর মানুষ অকল্যাণের দুআ করে, যেভাবে সে কল্যাণের দুআ করে, তবে মানুষ তো অতিমাত্রায় ত্বরা প্রিয়। (আল ইসরাঃ ১১)
তবে দুআর ভিতরে এ কথা বলা নিষেধ নয় যে, হে আল্লাহ এটা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও। দুআতে তাড়াহুড়া করার অর্থ হল দুআ করে কেন এখনো দুআ কবুল হলো না এমন ভাবনা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে দুআ করা ছেড়ে দেয়া।
দোয়া কিভাবে করতে হয়
রাসুল (সাঃ) বলেন - উদাসীন হৃদয়ের দোয়া কবুল হয়না। এটা কিন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উক্তি। তাই দোয়া করতে হবে একাগ্রচিত্তে, ধ্যান-মন এক সাথে করে। আল্লাহর কাছে নতজানু হতে হবে। নিজেকে আল্লাহর কাছে পূর্ণাংগ ভাবে সমর্পণ করতে হবে।দোয়া শুরুর আগে কয়েক বার দুরুদ শরীফ পরতে হবে। তারপর পশ্চিম দিকে ফিরে নামাজের সুরতে বসতে হবে। এরপর আল্লাহ যে আসমান-জমীন, পাহাড়-পর্বত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক, কিয়ামত, হাশর-নসর, মিজান-পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নামের মালিক, আমাদের সৃষ্টিকর্তা-পালনকর্তা-রিজিকদাতা ও শেষ দিবসে আমাদের যে আবার জীবিত করে বিচার করবেন - আল্লাহর শানে এসব কিছুর স্বীকারোক্তি দিয়ে দোয়া শুরু করতে হবে। দোয়া শেষ হবার পর আরো কয়েকবার দুরুদ শরীফ পড়ে নবী (সাঃ) এর দরবারে বকশিশ দিতে হবে। একদিন দোয়া করলেই আল্লাহ সব দিয়ে দিবেনা। বার বার চাইতে হবে। কান্না করতে হবে। মনে করেন- আপনার কাছে দুইটা ভিখারী এসে কিছু চাইলো। কিন্ত আপনার কাছে দেওয়ার মত সামান্য কিছুই আছে। তাদের মধ্যে একজন কান্না করতেছে আর চাচ্ছে, আর একজন শুধু দাঁড়িয়ে আছে। আপনি তখন কাকে দিবেন? নিশ্চয় যে কান্না করছে তাকে দিবেন। তেমনি ভাবে আল্লাহর কাছে না কাদলে আপনি কিছুই পাবেনা। আল্লাহর কাছে অনেকে অনেক কিছুই চায়, কিন্ত আল্লাহ সবাইকে দেয়না। যে কাদে তাকেই দেয়।
শেষ রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ সময় আল্লাহ সপ্তম আসমান থেকে নেমে এসে চতুর্থ আসমানে আসেন। দুনিয়ার লোকদের কাছে উদ্দেশ্য করে বলেন - তোমাদের কার কি দরকার আমাকে বল। আমি এখন দেব। আমি যদি দুনিয়ার প্রত্যেকে এইর রকম সাতটা দুনিয়ার সমান সম্পদ দান করি, তবুও আমার রহমতের দরিয়া থেকে দানা পরিমাণ কম পড়বে না। এরপর ফজর শুরুর আগে আবার সপ্তম আসমানে চলে যান।
তাই দোয়া হোক অন্তর থেকে, আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।
লেখাঃ মফিজুল
আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশক্তিমান পরম করুনাময়।🏵🏵
উত্তরমুছুন