আজ আমি যে লেখাটি লেখেছি তা হলো মুসলিমদের সমার্থক হতে যাওয়া
তাবলীগ জামাত নিয়ে। চিন্তাশক্তির দ্বারে যারা তালা ঝুলিয়েছেন তারা দয়াকরে এই
লেখাটি পড়বেন না। আমি আমার এই লেখাটিতে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যুক্তিদ্বারা
তাবলীগ ও ইসলামের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।এটি একটি গবেষনাধর্মী লেখা।
সমাজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাবচ্ছেদ করে মানুষের অন্তরের চক্ষু উন্মোচন ও মানুষের
চেতনায় আশ্রয় নেওয়াই এই লেখার উদ্দেশ্য। আসলে আমাদের সমাজে যে ভাবে তাবলীক জামাত
ইসলামের সমার্থক শব্দ হতে যাচ্ছে তাতে এই বিষয়টি নিয়ে না লিখে পারলাম না। যেহেতু
তাবলীগ জামাতের জন্ম রাসুলের হাতে নয় তাই এটা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করার অধিকার
সকল মানুষেরই আছে। লেখাটি পড়ার আগেই এই ধারনা পোষন করবেন না যে আমি লেখাটি তাবলীগ
জামাতের বিরুদ্ধে লিখেছি। একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে হয়তোবা দেখবেন আপনার মনের চাপা
কথাটিই আমি প্রকাশ করেছি।
তাবলীক জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হলো দেওবন্ধ মাদ্রাসার প্রান
পুরুষ মওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস(রঃ)। সারা পৃথিবীতে মুসলিম শাসকদের ক্ষমতার
বিলুপ্তির পর যখন পৃথিবী ব্যাপী ইসলামের বানী প্রচারে প্রচন্ড ভাটা পরে তখন
ইসলামের বানী মানুষের কাছে পৌছে দেবার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯২৬ সালে ভারতের দিল্লীতে
নিজস্ব কিছু নীতিমালা তৈরি করে তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার প্রচেষ্টায়
কালক্রমে সেটা বহুল প্রচারিত আন্দোলনে রূপ নেয়।
এখন আসি ইসলাম তাবলীগ নিয়ে কি বলে। ধর্মের বানী অপরের
কাছে পৌছানোই আসলে তাবলীগ। ধর্মের বানী পৌছে দেয়া মানে তাবলীগ করা আসলে সকল
মুসলমানের উপরেই জরূরী বিষয়। এই বিষয়ে আল্লাহ বলেন,
তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
এই ধর্মের দাওয়াত দানের বিষয়ে রাসুল সাঃ বলেন,
যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। মুসলিম(২৬৭৪)
তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুযকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
এই ধর্মের দাওয়াত দানের বিষয়ে রাসুল সাঃ বলেন,
যে হেদায়েতের প্রতি আহবান জানায়, তার জন্য তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব রয়েছে, তবে তা তাদের সওয়াব থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। আর যে পথভ্রষ্টতার প্রতি আহবান জানায়, তার ওপর তার অনুসারীদের সমপরিমাণ পাপ আরোপিত, তবে তা তাদের পাপ থেকে কোন কিছু হ্রাস করবে না। মুসলিম(২৬৭৪)
তবে আমরা এই তাবলীগ করার সাথে তাবলীগ জামাত কে এক করে
ফেলি। প্রকৃতপক্ষে তাবলীগ করার কাজ হলো ইসলামের বানী প্রচার করা যা রাসুল ও তার
অনুসারীরা সবাই করে এসেছে কিন্তু তথাকথিত তাবলীগ জামাত হলো মুহাম্মদ ইলিয়াস এর
তৈরি করা একটা ফর্মুলা যা দ্বারা তিনটি বিষয় যথা আখিরাত, ঈমান আর আমলের দাওয়াত
দেওয়া হয় বা প্রচার করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে তাবলীগ জামাতের কাজ হলো মুসলমানদের আল্লাহর পথে ডাকা এবং মানুষকে আখিরাত, ঈমান, আমলের কথা বলে প্রথমে তিনদিন মসজিদে রাত্রি যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা । পরে যথাক্রমে সাতদিন , চল্লিশ দিন ও পরে ১২০ দিন মসজিদে রাত্রি যাপন করে ইসলামী পরিবেশে আল্লাহর ইবাদত করা আর মানুষকে মসজিদে রাত্রি যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে নিজেকে সুন্দর পরিবেশে রেখে বদলে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। এই হলো সংক্ষেপে ইসলামের তাবলীগ আর মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস (রঃ) এর তাবলীগ জামাতের পরিচিতি।
প্রকৃতপক্ষে তাবলীগ জামাতের কাজ হলো মুসলমানদের আল্লাহর পথে ডাকা এবং মানুষকে আখিরাত, ঈমান, আমলের কথা বলে প্রথমে তিনদিন মসজিদে রাত্রি যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা । পরে যথাক্রমে সাতদিন , চল্লিশ দিন ও পরে ১২০ দিন মসজিদে রাত্রি যাপন করে ইসলামী পরিবেশে আল্লাহর ইবাদত করা আর মানুষকে মসজিদে রাত্রি যাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে নিজেকে সুন্দর পরিবেশে রেখে বদলে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। এই হলো সংক্ষেপে ইসলামের তাবলীগ আর মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস (রঃ) এর তাবলীগ জামাতের পরিচিতি।
আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে যে যেহেতু তাবলীগ জামাত
মানব সৃষ্ট তাই এটা ত্রুটির উর্ধে নয়। মনে রাখতে হবে আমাদের ইসলাম এবং কোরআন সময়ের
পরীক্ষায় উত্তির্ন হবে মানে যে কোন সময়ের বা কালের সাথেই খাপখেয়ে যাবে কিন্তু মানব
সৃষ্ট কিছু সময়ের পরীক্ষায় উত্তির্ন হবেনা। আমাদের সমাজে এমন অসংখ্য মানুষ বসবাস
করে যারা তাবলীগ জামাত নিয়ে কিছু বললে রেগে আগুন হয়ে যান যেন আল্লাহ ও তার রাসুলের
বিরুদ্ধে কিছু বলেছি। তারা একবারও নিজের বন্ধ বিবেকটাকে খোলা রেখে অভিযোগ কারির
কথা শোনা বা বোঝার চেষ্টা করেনা। তাই আমি আমার লেখার নিচের অংশটা পড়ার আগে আপনাদের
নিজের বন্ধ বিবেককে খুলে দেবার জন্য অনুরোধ করছি। আমি এখানে বর্তমান তাবলীগের যে
প্রকৃয়া সেটা মুসলিমের জন্য কল্যানকর নাকি অকল্যাণকর সেটা যুক্তিদ্বারা সব কিছু
ব্যাখ্যা করে বলার চেষ্টা করেছি। আমার যুক্তির উপর কারও প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক তাই
কিছু বলার সুবিধার জন্য যুক্তির বিভিন্ন অংশ পয়েন্ট আকারে লিখেছি।
(১) তাবলীক আন্দোলন হলো সম্পুর্ন মসজিদ কেন্দ্রীক একটি আন্দোলন যার বাহিরের দুনিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। কেউ কেউ বলবে গাস্তে যাওয়া আর এর মাঝে এলাকাবাসীকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া এটা মসজিদ কেন্দ্রীক নয়, তাদের আমি বলবো এটা করা হয় মসজিদে যেতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য, দ্বীনের দাওয়াত মসজিদের বাইরে দেওয়ার জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তাবলীকের মূল কাজ ঐ মসজিদের ভিতরেই। এখন অনেকেই বলবে এতে সমস্যা কোথায়, আমি তাদের বলবো এতে আপাত কোন সমস্যা নাই কিন্তু আছে সুদূরপ্রসারী ক্ষতি মুসলিম উম্মাহর।
এখন আসি ক্ষতিটা কি সেটা নিয়ে। আমাদের সমাজ আজ ধীরে ধীরে অশ্লীলতা, নোংরামী আর অনাচারে ভরে যাচ্ছে। সমাজে অনৈসলামীক কাজ কর্ম গুলোকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ভাবে দেখার মানুষিকতা গড়ে উঠছে। এখনকার সমাজে ঘুস, সুদ, মদ্যপান আর ব্যাভিচারকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা হচ্ছে ধীরে ধীরে। মানুষের মুল্যবোধ (মানে যে দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা মাপা হয়) ধীরে ধীরে অনৈসলামীক হয়ে যাচ্ছে(যেমন ব্যাভিচার, সুদ, মদ্যপান হলো ব্যাক্তি স্বাধীনতা মনে করা,আগে যা খুনের মতই অপরাধ মনে করা হতো)। এই নোংরামী থেকে বাচতে আমাদের সমাজের কিছু ধার্মীক মানে ধর্মের বাহক মসজিদে গিয়ে আত্বগোপন করে নিজের শরীর কে নোংরা হওয়া থেকে বাচাচ্ছে। মসজিদে গিয়ে বসবাস করে তারা নিজেকে বাচিয়ে আর মানুষকে মসজিদে এসে নিজেকে বাচাতে আহ্বান করে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তারা বলছে সমাজটা নোংরা হয়ে গেছে তাই বিশুদ্ধ পরিবেশে নিজেকে বিশুদ্ধ করে যান। আপনারা কখনও টিভি দেখবেন না, আপনাদের ঘরে টিভি রাখবেন না তাতে ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ছেলে মেয়েকে ইন্টারনেট মানে কম্পিউটার চালাতে দিবেন না কারন বাজে জিনিস দেখবে। যেখানে অনৈসলামিক কথা বলা আর কাজ করা হয় সেখান থেকে দূরে থাকবেন। তর্ক থেকে দূরে থাকবেন মানে যেখানে দেখবেন তাবলীক বা ইসলাম নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সেখান থেকে চলে আসবেন। এক কথায় তারা বলে যে, জগতের সকল ঝামেলা আর প্রলোভন থেকে দূরে সরে মসজিদে এসে বসবাস করে নিজেকে বিশুদ্ধ কর। আপাত ভাবে ভালো কথাই মনে হয়, কিন্তু ভেবে দেখুন এইযে তারা নোংরা হবার ভয়ে যে নোংরা পরিবেশ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে , এভাবে তারা কতদিন পালিয়ে বেড়াবে? তারা যতই পালাবে ততই সমাজ আরও নোংরা হবে। শেষে মানুষকে বাচতে হলে সারা জীবন মসজিদেই কাটাতে হবে কারন সমাজ তখন এতটাই নোংরা হয়ে যাবে যে মসজিদের বাইরে পা দিলেই পা পচে যাবে। এই পালানো বাদ দিয়ে যদি প্রথম থেকেই তারা সমাজকে আবর্জনা মুক্ত করার প্রচেষ্টা করতো তবে আর পালানোর দরকার হতো না। তখন মানুষ মসজিদের বাইরেও সুন্দর পরিবেশ পেতো।
একটা উদাহরন দেই, ধরুন একটি রাস্তা আর একজন পথিক সেই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হেটে যায়। রাস্তার পাশেই একটা ময়লার পাইপ ছিদ্র হয়ে ধীরে ধীরে রাস্তা নোংরা হচ্ছে। যখনই পা নোংরা হয় তখনই পানি দিয়ে পা ধুয়ে নেয় আর এই জন্য লোকটির হাতে থাকে এক বোতল পানি। শেষে পাইপের নোংরাতে রাস্তা এতটাই নোংরা হয়ে গেলো যে পথিকের প্রতি পদক্ষেপেই পা নোংরা হয়ে যাচ্ছিলো আর সে তা ধৌত করতে ছিলো। এতবার ধৌত করতে হচ্ছিলো যে শেষে আর সহ্য করতে না পেরে ময়লা পায়ে পথ চলার অভ্যাস করে নিলো। এখানে পথিক যদি জনবল নিয়ে প্রথমেই ঐ পাইপের ছিদ্রটাকে বন্ধ করে দিতো তাহলে আজ তাকে ময়লা পায়ে পথ চলতে হতো না। ঠিক তেমনি আমাদের সমাজিক জীবনটা হলো সেই পথ আর পানির বোতল হলো মসজিদ ভিত্তিক তাবলীক। এখানে আপনি যতই মসজিদের পরিবেশে কাটিয়ে ইবাদত করে বুজুর্গ হয়ে আসুন আপনাকে তো চলতে হবে নোংরা পরিবেশেই। তাই, বাইরের নোংরা পরিবেশে আপনি নোংরা হবেনই যদিনা আপনি বাহির কে পরিষ্কার করেন। যদি না করেন পরিষ্কার তাহলে ঐ লোকটা যেমন পা ধৌত করছিলো বারবার তেমনি আপনাকেও থাকতে হবে মসজিদে বারবার। আর এটা সহ্য করতে না পেরে অভ্যাস করে নিবেন খারাপ পরিবেশের সাথে, নাহয় আপনি হবেন ইসলামী সন্যাসী। আমাদের তাবলীকের ভায়েরা যদি আজ মসজিদে বসে সময় না কাটিয়ে মসজিদের বাইরে ইসলাম কে নিয়ে আসতো তবে সমাজের অধোগতি হতে পারতোনা কখনই। আসলে জনাব ইলিয়াস যখন ১৯২৬ সালে এই তাবলীক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে তখন আমাদের সমাজে অনাচার প্রবল আকার ধারন করেনি। তখন মানুষের পক্ষে মসজিদে একবার বসবাস করে এসে অনেক দিন ভালো থাকা সম্ভব ছিলো কিন্তু এখন এটা অসম্ভব ব্যাপার। এই তাবলীক জামাত আন্দোলন হলো সাময়িক চিকিৎসা যা ঐ সময় আপাত ভালো কাজ করতো কিন্তু এই সময় এটা চালাতে গেলে মুসলিমদের পিছিয়ে পরতে হবে বিশ্বসভ্যতা থেকে। ইসলাম কখনই সন্যাসীদের ধর্ম না, ইসলাম নয় শুধুমাত্র কতিপয় তসবিহ আর আমলের সমুষ্ঠী। ইসলাম হলো একটা জীবন বিধান যাতে আছে সমাজ , পরিবার, রাষ্ট্র। তাই যারা ইসলাম কে শুধুমাত্র আমলের মধ্যে বাধতে চায় তারা আসলে ইসলামকে সংকির্ন করে ফেলতে চায়। তাই, সারা জীবন নিজে বাচার জন্য মসজিদে মসজিদে বসবাস কোন যুক্তিবাদী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলিমের কর্ম না।
(২) কোন একটা আন্দোলনের প্রভাব কেমন তা বোঝা যায় সেই আন্দোলন যখন চুড়ান্ত সফল হয় তখন। ধরি তাবলীক জামাত আন্দোলন সফল হয়েছে। আমাদের সমাজের সকল মুসলমান তাবলীক জামাত করে আর তারা মসজিদে মসজিদে রাত্রি যাপন করে। তাহলে একটু ভেবে দেখুন ত সমাজের চিত্রটা কেমন হয়? কোন পুরুষ ঘরে থাকে না, বউ বাচ্চার খবর রাখেনা শুধু মসজিদে মসজিদে ঘুরে। এদিকে টিভি দেখা যায় না অনাচারের জন্য, ইন্টারনেট চালায় না অনাচারের জন্য, সমাজে চলা যায় না অনাচারের জন্য কারন বিধর্মীরা তো থাকবেই আর অনাচার হবেই।তাবলীক জামাত তো আর বিধর্মীদের ইসলামের বানী শোনায় না। তাই, সকল মুসলিম পুরুষরা থাকে মদজিদে। হযরত মুহাম্মদ সাঃ কি এই ধরনের সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন? ইসলামী সন্যাসের চুড়ান্ত পর্যায় এটা। এই পর্যায়ে সমাজ পৌছালে মুসলিমরা বুঝবেনা রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ। আমরা তখন হবো অমুসলিমদের হাতের পুতুল। তাহলে দেখুন এই প্রকৃয়াটা এমন এক প্রকৃয়া যেটা সফল হলে পরিনতি দ্বারায় এত ভয়াবহ। এখন হয়তো আপনারা প্রশ্ন করবেন, কই এমন তো কিছু হয় না? তখন আমি বলবো, হয় না কারন তাবলীক জামাত আন্দোলন চুড়ান্ত সফল হয় না। যে আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিনতি এত ভয়াবহ সেই আন্দোলন কতটা যুক্তিযুক্ত একটু ভেবে দেখুন।
(৩) এরপরেও আমার প্রশ্ন পুরুষরা তো মসজিদে গিয়ে বাচলো কিন্তু নারীরা বাচবে কি করে? অনেকে বলে বাসায় বাসায় মহিলা তালিম হয় তখন আমি বলি তাহলেও তো বাচার কথা না কারন বাড়িতে তো আর নূরানী পবিত্র পরিবেশ পাওয়া যায় না। ঘরের সকল পুরুষ যদি বাইরে থাকে নারী তখন কি করবে? অনেকে বলেন পুরুষ ঘরে গিয়ে নারীদের শিখাবে, তখন আমার প্রশ্ন শেখাটাত বড় না, বড় ছিলো মসজিদের নূরানী পরিবেশটা। জানে তো অনেকেই কিন্তু সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কি আর নিজেকে গড়া যায়? পুরুষ নিজে শিক্ষার জন্য এত কষ্ট করবে কিন্তু নারীর জন্য এত উদাসীনতা কেন? আপনারা কি জানেন না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষিত মাতার প্রয়োজনীয়তা? আমি বলি সমাজে পুরুষের চেয়ে নারীদের ইসলামী শিক্ষার দরকার বেশি কারন আমাদের সন্তান প্রাথমিক শিক্ষাটা পায় মায়ের কাছ থেকেই। বরং আমাদের সমাজে দেখি বিভিন্ন সভা সেমিনারে যায় পুরুষ, শুক্রবারে মসজিদে ওয়াজ শোনে পুরুষ, বাইরে ইসলামী কর্মকান্ডে জরিত থাকে পুরুষ তাহলে নারীরা ইসলাম শিখবে কোথা থেকে?? আপনারা হয়তো বলবেন নারীদের জন্য তাহলে মসজিদে ব্যাবস্থা করা উচিত যাতে তাবলীক জামাতে শরীক হতে পারে, তাহলে আমার কথা মুসলিমদের আর বাড়ি ঘরের দরকার কি?
(৪) তাবলীক জামাত সীমিত কিছু বিষয় নিয়ে মুসলিমদের দাওয়াত দেয়। তারা সর্বদা দুনিয়াবি বিষয় গুলো এড়িয়ে গিয়ে আমলের উপর গুরুত্ব দেয়। এই বিষয়টা আমি মনে করি ইসলামের পুর্নতা নয়, আংশিক ইসলাম। কারন মানব জীবনের প্রতিটি ধাপে ইসলামের অনুপ্রবেশই হলো সত্যিকার ইসলাম। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্যই হলো এটা যে অন্যান্য ধর্ম শুধু প্রার্থনা নির্ভর কিন্তু ইসলাম শুধু প্রার্থনা নির্ভর ধর্ম না, এতে আছে ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য গাইড লাইন। সমাজের অল্প কিছু মানুষ যদি এই বিষয়টা ভুলে যেত আমি কিছু মনে করতাম না কিন্তু আজ সমাজের সকল মুসলিম এই বিষয়টা ভুলে গিয়ে আমল নির্ভর ধর্ম বানিয়ে দিয়েছে ইসলাম কে। তাই, এই বিষয়টা নিয়ে লিখতেই হলো।
(৫) তাবলীক জামাত কখনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনা। বিপদ দেখলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া তাবলীকের জামাতের শিক্ষা। সমাজের কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তাবলীক জামাত কথা বলবেনা। রাষ্ট্র বা সমাজের কোন অনৈসলামীক কাজের প্রতি তাদের দৃষ্টি থাকেনা। এটাতো প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য নয়। রাসুল বলেছেন, “কোন অন্যায় দেখলে হাত দিয়ে বাধা দাও, না পারলে মুখ দিয়ে বাধা দাও, তাও না পারলে মনে মনে ঘৃনা কর। আর এটাই সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়”। তাহলে কি আমি বলবো তাবলীক জামাত যারা করে তাদের ঈমানের ভিত্তি দুর্বল?? অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার শিক্ষাই তো রাসুল সাঃ আমাদের শিখিয়েছেন। এই জিহাদ হতে পারে বুদ্ধির, হতে পারে শক্তির। আজ মুসলমানরা ভীরু কাপুরুষ হয়ে আছে বলেই সমাজে ইসলাম নিয়ে কুসংস্কার বাড়তেছে আর মুসলিমরা বিশ্বসভ্যতা থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা ভালোকে ভালো আর খারাপ কে খারাপ বলতে পারেনা বলেই আজ চারিদিকে শয়তানের বিজয় উল্লাস।
(৬) বর্তমান তাবলীক জামাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা প্রযুক্তিকে ভয় পায়। তাদের জড়তা আজ তাদের প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে ভীত করে তুলেছে। তারা বলে টিভি হলো শয়তানের বাক্স, কিন্তু সেই টিভিই যে হতে পারে বেহেস্তের সোপান সেটা ভাবতে পারেনা। আজ সারা বিশ্বে ৫৩ টা মুসলিম দেশ আর এতে আছে কোটি কোটি ধর্মপ্রান মুসলমান। তারা কি পারেনা টিভি কে পালটে দিতে? এই টিভিই হতে পারে আধুনিক কালে ইসলাম প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম যদি মুসলিমরা সেটা ব্যাবহার করতে পারে। কারন আধুনিক মানুষ যুক্তি নির্ভর আর ইসলাম হলো সর্বোচ্চ যুক্তিসম্পন্ন ধর্ম। সেই তথাকথিত কেচ্ছা কাহিনী বাদ দিয়ে যদি সঠিক যুক্তিদ্বারা ইসলামকে প্রকাশ করা হয় তবে টিভি দ্বারাই সম্ভব ইসলামী বিপ্লব। অনুরূপ সমস্যা তাদের কম্পিউটার ইন্টারনেট নিয়ে। মাথা ব্যাথা বলে মাথা কেটে ফেলা কোন বুদ্ধিমান মানুষের কর্ম নয়। প্রযুক্তিকে যদি আমরা অবহেলা করি তাহলে সমস্যায় পরবো আমরাই। আমরা আর কখনই মাথা তুলে দ্বারাতে পারবো না। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে সৈয়দ আমির আলীর ইংরেজী শিক্ষা গ্রহনের আহ্বানের মত আবারও আমার বলতে হচ্ছে মুসলিমদের তোমরা প্রযুক্তিকে ব্যাবহার কর।
(৭) তাবলীক জামাত সুন্নত আমলের উপর এতটাই প্রাধান্য দেয় যে যারা সামান্য সুন্নত অবহেলা করে তাদের বাঁকা চোখে দেখে। তারা প্রত্যেক মানুষের উপর আমলের বোঝা চাপিয়ে দিতে চায়। এই কাজটি কখনও রাসুল সাঃ করেন নি। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে সেই ইবাদত প্রিয় যা বান্দা প্রতিদিন করে। বুখারীর একটি হাদিস আছে এমন যে একবার রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এক লোক আসলো আর বললো হে রাসুল, আমি কম কি করলে বেহেস্তে যাবো? তিনি বললেন, আল্লাহ যা করতে বলেছেন(ফরজ) তাই পালন কর আর পাপ থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর লোকটি বলল আমি এর থেকে কমও করবোনা, বেশিও না। তখন রাসুল বললেন, তোমরা একজন বেহেস্তিকে দেখে রাখ।
আসলে সুন্নত ইবাদত হলো মানুষের জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। কেউ কোন সুন্নত না পালন করলে এই না যে সে মুনিন না। তাই, কেউ কোন সুন্নত না পালন করলে তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা একটা বাড়াবাড়ি কারন রাসুল নিজেও এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন নাই। আমাদের সমাজের নব্য দীক্ষিত নব্য নামাজীদের উপর এই পাহাড় সমান আমল চাপিয়ে দিয়ে আমরা আসলে তাদের ইবাদত বিমুখ করে দিচ্ছি।
(৮) আমি আমার জীবনে যত তাবলীগ জামাতের লোকদের দেখেছি তাদের সবারই মনের দরজায় তালা দেওয়া দেখেছি মানে তারা কিছু বুঝতে চায়না, ভাবতেও চায়না। তাবলীগ জামাতের আমিরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দীক্ষা নিয়েই তারা নিজেদের জগত গড়ে তুলে। তুমি যদি তাদের সামনে কোরআন হাদিস আর যুক্তিদিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখিয়েও দাও তাও তারা তা মানবে না। তাদের সকল ফতোয়া সেই দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দীক। পৃথিবীর কেউ মাওলানা আলেম না শুধু ঐ মাদ্রাসায় যারা থাকে তারা ব্যাতিত। কিন্তু কোরআন কি বলে দেখি, কোরআন বলে তোমরা তর্ককর আর যুক্তি দেখাও সবচেয়ে উত্তম আর গ্রহনযোগ্য পন্থায়। তাই মুসলিমদের নিজেদের যুক্তির চর্চা করতে হবে। তাই যে সকল মানুষ যুক্তিদ্বারা যাচাই বাছাই না করে কোন কিছু গ্রহন করে তারাই হল সমাজের জঞ্জাল।
(৯) তাদের বয়ানের মাঝে দেখা যায় অনেক গল্প আর কেচ্ছা কাহিনীতে ভরপুর। আমার কোন সমস্যা নাই যদি কেউ ইসলামের মহান লোকদের গল্প করে কিন্তু যদি নামাজের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে গল্পটা এমন হয় যে এক মহিলার কবর খুড়ে কুকুর পাওয়া গেছে কারন সে নামাজ পরতো না, তাই আমাদের নামাজ পড়তে হবে তাহলে ঘোর আপত্তি না জানিয়ে পারিনা। এসব বলে হয়তো কোন বোধহীন মানুষকে ভয় দেখায়ে নামাজ পড়াতে পারবেন কিন্তু বোধসম্পন্ন মানুষ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ঠিকই হাসবে।
(১০) তাবলীগ জামাত মুহাম্মাদ ইলিয়াসের তৈরি বিধান থেকে এক চুলও সরে আসতে পারছেনা। পৃথিবীর অন্য কারও যুক্তিযুক্ত মতামত গ্রহন না করে এক ব্যাক্তিতে এক বই ফাজায়েল আমলে আবদ্ধ থাকা কোন গ্রহনযোগ্য বিষয় নয়।
(১১) তাবলীগ জামাতের লোকদের অবস্থানের জন্য মসজিদের পরিবেশ দূষিত হয়। আজকাল কেউ কাকরাইল মসজিদে গেলে দেখবেন সেটা একটা ছাত্রাবাস হয়ে গেছে মনে হয়। মসজিদ গুলোকে হোটেল বানানো কখনই কোন মুসলিমের কাম্য নয়।
(১২) তাবলীগ জামাত মসজিদে থাকার শরীয়াতের অনুমোদনের জন্য বলে যে আমরা ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করি। এটা আসলে সম্পুর্ন ধোঁকাবাজি করে অনুমোদন আদায়। এটার সাথে তুলনা দেওয়া যায় এটার যে , “আমি এক মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে তাকে গিলে খাচ্ছি। সে সময় আমার এক বন্ধু আমায় বললো তুমি অন্যায় করছ কারন পর নারীর দিকে তাকানো পাপ। তখন আমি বন্ধুকে বললাম, আমি তার দিকে পাত্রী দেখার নিয়তে তাকিয়েছি তাই পাপ না। অতঃপর মেয়েটি চলে গেলে অন্য মেয়ে আসলো আর আমি আবার সেই অন্য মেয়েটির দিকে পাত্রী দেখার নিয়তে তাকিয়ে থাকলাম আর বললাম আগের পাত্রী পছন্দ হয় নাই”।
আমি দেখেছি তাবলীগ রা ডাঃ জাকির নায়েক কে দেখতে পারেনা কারন নাকি তিনি টাই প্যান্ট সার্ট পরেন, হিন্দুদের ধর্ম খৃষ্টানদের ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন, পিস টিভিতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মিউজিক দিয়ে সুরে গাওয়া হয়। নেটওয়ার্কের মত সকল তাবলীগ জামাতের লোকেদের মাথায় এটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই তারা একবারও এর যথার্থতা বোঝার চেষ্টা করেনা। প্যান্ট সার্ট আর টাই পরা কোথায় ইসলামে নিষিদ্ধ আমি জানিনা। ওরা একবারও দেখেনা জাকির হিন্দু খৃষ্ঠানদের ধর্ম গ্রন্থ থেকে কি বলেন আর কি বোঝান। ওরা বোঝার চেষ্টা করে না সুর ইসলামে হারাম না, তাহলে কোরআন সুর করে পড়া নিষিদ্ধ হয়ে যেত আর জাকির ভয়েস এর মিউজিক ব্যবহার করেন যা হারাম নয়।
(১) তাবলীক আন্দোলন হলো সম্পুর্ন মসজিদ কেন্দ্রীক একটি আন্দোলন যার বাহিরের দুনিয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। কেউ কেউ বলবে গাস্তে যাওয়া আর এর মাঝে এলাকাবাসীকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া এটা মসজিদ কেন্দ্রীক নয়, তাদের আমি বলবো এটা করা হয় মসজিদে যেতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য, দ্বীনের দাওয়াত মসজিদের বাইরে দেওয়ার জন্য নয়। প্রকৃতপক্ষে তাবলীকের মূল কাজ ঐ মসজিদের ভিতরেই। এখন অনেকেই বলবে এতে সমস্যা কোথায়, আমি তাদের বলবো এতে আপাত কোন সমস্যা নাই কিন্তু আছে সুদূরপ্রসারী ক্ষতি মুসলিম উম্মাহর।
এখন আসি ক্ষতিটা কি সেটা নিয়ে। আমাদের সমাজ আজ ধীরে ধীরে অশ্লীলতা, নোংরামী আর অনাচারে ভরে যাচ্ছে। সমাজে অনৈসলামীক কাজ কর্ম গুলোকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ভাবে দেখার মানুষিকতা গড়ে উঠছে। এখনকার সমাজে ঘুস, সুদ, মদ্যপান আর ব্যাভিচারকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা হচ্ছে ধীরে ধীরে। মানুষের মুল্যবোধ (মানে যে দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ সেটা মাপা হয়) ধীরে ধীরে অনৈসলামীক হয়ে যাচ্ছে(যেমন ব্যাভিচার, সুদ, মদ্যপান হলো ব্যাক্তি স্বাধীনতা মনে করা,আগে যা খুনের মতই অপরাধ মনে করা হতো)। এই নোংরামী থেকে বাচতে আমাদের সমাজের কিছু ধার্মীক মানে ধর্মের বাহক মসজিদে গিয়ে আত্বগোপন করে নিজের শরীর কে নোংরা হওয়া থেকে বাচাচ্ছে। মসজিদে গিয়ে বসবাস করে তারা নিজেকে বাচিয়ে আর মানুষকে মসজিদে এসে নিজেকে বাচাতে আহ্বান করে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তারা বলছে সমাজটা নোংরা হয়ে গেছে তাই বিশুদ্ধ পরিবেশে নিজেকে বিশুদ্ধ করে যান। আপনারা কখনও টিভি দেখবেন না, আপনাদের ঘরে টিভি রাখবেন না তাতে ছেলে মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ছেলে মেয়েকে ইন্টারনেট মানে কম্পিউটার চালাতে দিবেন না কারন বাজে জিনিস দেখবে। যেখানে অনৈসলামিক কথা বলা আর কাজ করা হয় সেখান থেকে দূরে থাকবেন। তর্ক থেকে দূরে থাকবেন মানে যেখানে দেখবেন তাবলীক বা ইসলাম নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে সেখান থেকে চলে আসবেন। এক কথায় তারা বলে যে, জগতের সকল ঝামেলা আর প্রলোভন থেকে দূরে সরে মসজিদে এসে বসবাস করে নিজেকে বিশুদ্ধ কর। আপাত ভাবে ভালো কথাই মনে হয়, কিন্তু ভেবে দেখুন এইযে তারা নোংরা হবার ভয়ে যে নোংরা পরিবেশ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে , এভাবে তারা কতদিন পালিয়ে বেড়াবে? তারা যতই পালাবে ততই সমাজ আরও নোংরা হবে। শেষে মানুষকে বাচতে হলে সারা জীবন মসজিদেই কাটাতে হবে কারন সমাজ তখন এতটাই নোংরা হয়ে যাবে যে মসজিদের বাইরে পা দিলেই পা পচে যাবে। এই পালানো বাদ দিয়ে যদি প্রথম থেকেই তারা সমাজকে আবর্জনা মুক্ত করার প্রচেষ্টা করতো তবে আর পালানোর দরকার হতো না। তখন মানুষ মসজিদের বাইরেও সুন্দর পরিবেশ পেতো।
একটা উদাহরন দেই, ধরুন একটি রাস্তা আর একজন পথিক সেই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হেটে যায়। রাস্তার পাশেই একটা ময়লার পাইপ ছিদ্র হয়ে ধীরে ধীরে রাস্তা নোংরা হচ্ছে। যখনই পা নোংরা হয় তখনই পানি দিয়ে পা ধুয়ে নেয় আর এই জন্য লোকটির হাতে থাকে এক বোতল পানি। শেষে পাইপের নোংরাতে রাস্তা এতটাই নোংরা হয়ে গেলো যে পথিকের প্রতি পদক্ষেপেই পা নোংরা হয়ে যাচ্ছিলো আর সে তা ধৌত করতে ছিলো। এতবার ধৌত করতে হচ্ছিলো যে শেষে আর সহ্য করতে না পেরে ময়লা পায়ে পথ চলার অভ্যাস করে নিলো। এখানে পথিক যদি জনবল নিয়ে প্রথমেই ঐ পাইপের ছিদ্রটাকে বন্ধ করে দিতো তাহলে আজ তাকে ময়লা পায়ে পথ চলতে হতো না। ঠিক তেমনি আমাদের সমাজিক জীবনটা হলো সেই পথ আর পানির বোতল হলো মসজিদ ভিত্তিক তাবলীক। এখানে আপনি যতই মসজিদের পরিবেশে কাটিয়ে ইবাদত করে বুজুর্গ হয়ে আসুন আপনাকে তো চলতে হবে নোংরা পরিবেশেই। তাই, বাইরের নোংরা পরিবেশে আপনি নোংরা হবেনই যদিনা আপনি বাহির কে পরিষ্কার করেন। যদি না করেন পরিষ্কার তাহলে ঐ লোকটা যেমন পা ধৌত করছিলো বারবার তেমনি আপনাকেও থাকতে হবে মসজিদে বারবার। আর এটা সহ্য করতে না পেরে অভ্যাস করে নিবেন খারাপ পরিবেশের সাথে, নাহয় আপনি হবেন ইসলামী সন্যাসী। আমাদের তাবলীকের ভায়েরা যদি আজ মসজিদে বসে সময় না কাটিয়ে মসজিদের বাইরে ইসলাম কে নিয়ে আসতো তবে সমাজের অধোগতি হতে পারতোনা কখনই। আসলে জনাব ইলিয়াস যখন ১৯২৬ সালে এই তাবলীক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে তখন আমাদের সমাজে অনাচার প্রবল আকার ধারন করেনি। তখন মানুষের পক্ষে মসজিদে একবার বসবাস করে এসে অনেক দিন ভালো থাকা সম্ভব ছিলো কিন্তু এখন এটা অসম্ভব ব্যাপার। এই তাবলীক জামাত আন্দোলন হলো সাময়িক চিকিৎসা যা ঐ সময় আপাত ভালো কাজ করতো কিন্তু এই সময় এটা চালাতে গেলে মুসলিমদের পিছিয়ে পরতে হবে বিশ্বসভ্যতা থেকে। ইসলাম কখনই সন্যাসীদের ধর্ম না, ইসলাম নয় শুধুমাত্র কতিপয় তসবিহ আর আমলের সমুষ্ঠী। ইসলাম হলো একটা জীবন বিধান যাতে আছে সমাজ , পরিবার, রাষ্ট্র। তাই যারা ইসলাম কে শুধুমাত্র আমলের মধ্যে বাধতে চায় তারা আসলে ইসলামকে সংকির্ন করে ফেলতে চায়। তাই, সারা জীবন নিজে বাচার জন্য মসজিদে মসজিদে বসবাস কোন যুক্তিবাদী সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলিমের কর্ম না।
(২) কোন একটা আন্দোলনের প্রভাব কেমন তা বোঝা যায় সেই আন্দোলন যখন চুড়ান্ত সফল হয় তখন। ধরি তাবলীক জামাত আন্দোলন সফল হয়েছে। আমাদের সমাজের সকল মুসলমান তাবলীক জামাত করে আর তারা মসজিদে মসজিদে রাত্রি যাপন করে। তাহলে একটু ভেবে দেখুন ত সমাজের চিত্রটা কেমন হয়? কোন পুরুষ ঘরে থাকে না, বউ বাচ্চার খবর রাখেনা শুধু মসজিদে মসজিদে ঘুরে। এদিকে টিভি দেখা যায় না অনাচারের জন্য, ইন্টারনেট চালায় না অনাচারের জন্য, সমাজে চলা যায় না অনাচারের জন্য কারন বিধর্মীরা তো থাকবেই আর অনাচার হবেই।তাবলীক জামাত তো আর বিধর্মীদের ইসলামের বানী শোনায় না। তাই, সকল মুসলিম পুরুষরা থাকে মদজিদে। হযরত মুহাম্মদ সাঃ কি এই ধরনের সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন? ইসলামী সন্যাসের চুড়ান্ত পর্যায় এটা। এই পর্যায়ে সমাজ পৌছালে মুসলিমরা বুঝবেনা রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ। আমরা তখন হবো অমুসলিমদের হাতের পুতুল। তাহলে দেখুন এই প্রকৃয়াটা এমন এক প্রকৃয়া যেটা সফল হলে পরিনতি দ্বারায় এত ভয়াবহ। এখন হয়তো আপনারা প্রশ্ন করবেন, কই এমন তো কিছু হয় না? তখন আমি বলবো, হয় না কারন তাবলীক জামাত আন্দোলন চুড়ান্ত সফল হয় না। যে আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিনতি এত ভয়াবহ সেই আন্দোলন কতটা যুক্তিযুক্ত একটু ভেবে দেখুন।
(৩) এরপরেও আমার প্রশ্ন পুরুষরা তো মসজিদে গিয়ে বাচলো কিন্তু নারীরা বাচবে কি করে? অনেকে বলে বাসায় বাসায় মহিলা তালিম হয় তখন আমি বলি তাহলেও তো বাচার কথা না কারন বাড়িতে তো আর নূরানী পবিত্র পরিবেশ পাওয়া যায় না। ঘরের সকল পুরুষ যদি বাইরে থাকে নারী তখন কি করবে? অনেকে বলেন পুরুষ ঘরে গিয়ে নারীদের শিখাবে, তখন আমার প্রশ্ন শেখাটাত বড় না, বড় ছিলো মসজিদের নূরানী পরিবেশটা। জানে তো অনেকেই কিন্তু সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কি আর নিজেকে গড়া যায়? পুরুষ নিজে শিক্ষার জন্য এত কষ্ট করবে কিন্তু নারীর জন্য এত উদাসীনতা কেন? আপনারা কি জানেন না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষিত মাতার প্রয়োজনীয়তা? আমি বলি সমাজে পুরুষের চেয়ে নারীদের ইসলামী শিক্ষার দরকার বেশি কারন আমাদের সন্তান প্রাথমিক শিক্ষাটা পায় মায়ের কাছ থেকেই। বরং আমাদের সমাজে দেখি বিভিন্ন সভা সেমিনারে যায় পুরুষ, শুক্রবারে মসজিদে ওয়াজ শোনে পুরুষ, বাইরে ইসলামী কর্মকান্ডে জরিত থাকে পুরুষ তাহলে নারীরা ইসলাম শিখবে কোথা থেকে?? আপনারা হয়তো বলবেন নারীদের জন্য তাহলে মসজিদে ব্যাবস্থা করা উচিত যাতে তাবলীক জামাতে শরীক হতে পারে, তাহলে আমার কথা মুসলিমদের আর বাড়ি ঘরের দরকার কি?
(৪) তাবলীক জামাত সীমিত কিছু বিষয় নিয়ে মুসলিমদের দাওয়াত দেয়। তারা সর্বদা দুনিয়াবি বিষয় গুলো এড়িয়ে গিয়ে আমলের উপর গুরুত্ব দেয়। এই বিষয়টা আমি মনে করি ইসলামের পুর্নতা নয়, আংশিক ইসলাম। কারন মানব জীবনের প্রতিটি ধাপে ইসলামের অনুপ্রবেশই হলো সত্যিকার ইসলাম। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্যই হলো এটা যে অন্যান্য ধর্ম শুধু প্রার্থনা নির্ভর কিন্তু ইসলাম শুধু প্রার্থনা নির্ভর ধর্ম না, এতে আছে ব্যাক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য গাইড লাইন। সমাজের অল্প কিছু মানুষ যদি এই বিষয়টা ভুলে যেত আমি কিছু মনে করতাম না কিন্তু আজ সমাজের সকল মুসলিম এই বিষয়টা ভুলে গিয়ে আমল নির্ভর ধর্ম বানিয়ে দিয়েছে ইসলাম কে। তাই, এই বিষয়টা নিয়ে লিখতেই হলো।
(৫) তাবলীক জামাত কখনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনা। বিপদ দেখলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া তাবলীকের জামাতের শিক্ষা। সমাজের কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তাবলীক জামাত কথা বলবেনা। রাষ্ট্র বা সমাজের কোন অনৈসলামীক কাজের প্রতি তাদের দৃষ্টি থাকেনা। এটাতো প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য নয়। রাসুল বলেছেন, “কোন অন্যায় দেখলে হাত দিয়ে বাধা দাও, না পারলে মুখ দিয়ে বাধা দাও, তাও না পারলে মনে মনে ঘৃনা কর। আর এটাই সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়”। তাহলে কি আমি বলবো তাবলীক জামাত যারা করে তাদের ঈমানের ভিত্তি দুর্বল?? অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করার শিক্ষাই তো রাসুল সাঃ আমাদের শিখিয়েছেন। এই জিহাদ হতে পারে বুদ্ধির, হতে পারে শক্তির। আজ মুসলমানরা ভীরু কাপুরুষ হয়ে আছে বলেই সমাজে ইসলাম নিয়ে কুসংস্কার বাড়তেছে আর মুসলিমরা বিশ্বসভ্যতা থেকে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমরা ভালোকে ভালো আর খারাপ কে খারাপ বলতে পারেনা বলেই আজ চারিদিকে শয়তানের বিজয় উল্লাস।
(৬) বর্তমান তাবলীক জামাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা তারা প্রযুক্তিকে ভয় পায়। তাদের জড়তা আজ তাদের প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে ভীত করে তুলেছে। তারা বলে টিভি হলো শয়তানের বাক্স, কিন্তু সেই টিভিই যে হতে পারে বেহেস্তের সোপান সেটা ভাবতে পারেনা। আজ সারা বিশ্বে ৫৩ টা মুসলিম দেশ আর এতে আছে কোটি কোটি ধর্মপ্রান মুসলমান। তারা কি পারেনা টিভি কে পালটে দিতে? এই টিভিই হতে পারে আধুনিক কালে ইসলাম প্রচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম যদি মুসলিমরা সেটা ব্যাবহার করতে পারে। কারন আধুনিক মানুষ যুক্তি নির্ভর আর ইসলাম হলো সর্বোচ্চ যুক্তিসম্পন্ন ধর্ম। সেই তথাকথিত কেচ্ছা কাহিনী বাদ দিয়ে যদি সঠিক যুক্তিদ্বারা ইসলামকে প্রকাশ করা হয় তবে টিভি দ্বারাই সম্ভব ইসলামী বিপ্লব। অনুরূপ সমস্যা তাদের কম্পিউটার ইন্টারনেট নিয়ে। মাথা ব্যাথা বলে মাথা কেটে ফেলা কোন বুদ্ধিমান মানুষের কর্ম নয়। প্রযুক্তিকে যদি আমরা অবহেলা করি তাহলে সমস্যায় পরবো আমরাই। আমরা আর কখনই মাথা তুলে দ্বারাতে পারবো না। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে সৈয়দ আমির আলীর ইংরেজী শিক্ষা গ্রহনের আহ্বানের মত আবারও আমার বলতে হচ্ছে মুসলিমদের তোমরা প্রযুক্তিকে ব্যাবহার কর।
(৭) তাবলীক জামাত সুন্নত আমলের উপর এতটাই প্রাধান্য দেয় যে যারা সামান্য সুন্নত অবহেলা করে তাদের বাঁকা চোখে দেখে। তারা প্রত্যেক মানুষের উপর আমলের বোঝা চাপিয়ে দিতে চায়। এই কাজটি কখনও রাসুল সাঃ করেন নি। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে সেই ইবাদত প্রিয় যা বান্দা প্রতিদিন করে। বুখারীর একটি হাদিস আছে এমন যে একবার রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এক লোক আসলো আর বললো হে রাসুল, আমি কম কি করলে বেহেস্তে যাবো? তিনি বললেন, আল্লাহ যা করতে বলেছেন(ফরজ) তাই পালন কর আর পাপ থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর লোকটি বলল আমি এর থেকে কমও করবোনা, বেশিও না। তখন রাসুল বললেন, তোমরা একজন বেহেস্তিকে দেখে রাখ।
আসলে সুন্নত ইবাদত হলো মানুষের জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। কেউ কোন সুন্নত না পালন করলে এই না যে সে মুনিন না। তাই, কেউ কোন সুন্নত না পালন করলে তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা একটা বাড়াবাড়ি কারন রাসুল নিজেও এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন নাই। আমাদের সমাজের নব্য দীক্ষিত নব্য নামাজীদের উপর এই পাহাড় সমান আমল চাপিয়ে দিয়ে আমরা আসলে তাদের ইবাদত বিমুখ করে দিচ্ছি।
(৮) আমি আমার জীবনে যত তাবলীগ জামাতের লোকদের দেখেছি তাদের সবারই মনের দরজায় তালা দেওয়া দেখেছি মানে তারা কিছু বুঝতে চায়না, ভাবতেও চায়না। তাবলীগ জামাতের আমিরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত দীক্ষা নিয়েই তারা নিজেদের জগত গড়ে তুলে। তুমি যদি তাদের সামনে কোরআন হাদিস আর যুক্তিদিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখিয়েও দাও তাও তারা তা মানবে না। তাদের সকল ফতোয়া সেই দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দীক। পৃথিবীর কেউ মাওলানা আলেম না শুধু ঐ মাদ্রাসায় যারা থাকে তারা ব্যাতিত। কিন্তু কোরআন কি বলে দেখি, কোরআন বলে তোমরা তর্ককর আর যুক্তি দেখাও সবচেয়ে উত্তম আর গ্রহনযোগ্য পন্থায়। তাই মুসলিমদের নিজেদের যুক্তির চর্চা করতে হবে। তাই যে সকল মানুষ যুক্তিদ্বারা যাচাই বাছাই না করে কোন কিছু গ্রহন করে তারাই হল সমাজের জঞ্জাল।
(৯) তাদের বয়ানের মাঝে দেখা যায় অনেক গল্প আর কেচ্ছা কাহিনীতে ভরপুর। আমার কোন সমস্যা নাই যদি কেউ ইসলামের মহান লোকদের গল্প করে কিন্তু যদি নামাজের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে গল্পটা এমন হয় যে এক মহিলার কবর খুড়ে কুকুর পাওয়া গেছে কারন সে নামাজ পরতো না, তাই আমাদের নামাজ পড়তে হবে তাহলে ঘোর আপত্তি না জানিয়ে পারিনা। এসব বলে হয়তো কোন বোধহীন মানুষকে ভয় দেখায়ে নামাজ পড়াতে পারবেন কিন্তু বোধসম্পন্ন মানুষ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ঠিকই হাসবে।
(১০) তাবলীগ জামাত মুহাম্মাদ ইলিয়াসের তৈরি বিধান থেকে এক চুলও সরে আসতে পারছেনা। পৃথিবীর অন্য কারও যুক্তিযুক্ত মতামত গ্রহন না করে এক ব্যাক্তিতে এক বই ফাজায়েল আমলে আবদ্ধ থাকা কোন গ্রহনযোগ্য বিষয় নয়।
(১১) তাবলীগ জামাতের লোকদের অবস্থানের জন্য মসজিদের পরিবেশ দূষিত হয়। আজকাল কেউ কাকরাইল মসজিদে গেলে দেখবেন সেটা একটা ছাত্রাবাস হয়ে গেছে মনে হয়। মসজিদ গুলোকে হোটেল বানানো কখনই কোন মুসলিমের কাম্য নয়।
(১২) তাবলীগ জামাত মসজিদে থাকার শরীয়াতের অনুমোদনের জন্য বলে যে আমরা ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করি। এটা আসলে সম্পুর্ন ধোঁকাবাজি করে অনুমোদন আদায়। এটার সাথে তুলনা দেওয়া যায় এটার যে , “আমি এক মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে তাকে গিলে খাচ্ছি। সে সময় আমার এক বন্ধু আমায় বললো তুমি অন্যায় করছ কারন পর নারীর দিকে তাকানো পাপ। তখন আমি বন্ধুকে বললাম, আমি তার দিকে পাত্রী দেখার নিয়তে তাকিয়েছি তাই পাপ না। অতঃপর মেয়েটি চলে গেলে অন্য মেয়ে আসলো আর আমি আবার সেই অন্য মেয়েটির দিকে পাত্রী দেখার নিয়তে তাকিয়ে থাকলাম আর বললাম আগের পাত্রী পছন্দ হয় নাই”।
আমি দেখেছি তাবলীগ রা ডাঃ জাকির নায়েক কে দেখতে পারেনা কারন নাকি তিনি টাই প্যান্ট সার্ট পরেন, হিন্দুদের ধর্ম খৃষ্টানদের ধর্ম নিয়ে আলোচনা করেন, পিস টিভিতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মিউজিক দিয়ে সুরে গাওয়া হয়। নেটওয়ার্কের মত সকল তাবলীগ জামাতের লোকেদের মাথায় এটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই তারা একবারও এর যথার্থতা বোঝার চেষ্টা করেনা। প্যান্ট সার্ট আর টাই পরা কোথায় ইসলামে নিষিদ্ধ আমি জানিনা। ওরা একবারও দেখেনা জাকির হিন্দু খৃষ্ঠানদের ধর্ম গ্রন্থ থেকে কি বলেন আর কি বোঝান। ওরা বোঝার চেষ্টা করে না সুর ইসলামে হারাম না, তাহলে কোরআন সুর করে পড়া নিষিদ্ধ হয়ে যেত আর জাকির ভয়েস এর মিউজিক ব্যবহার করেন যা হারাম নয়।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা এটা
বলতে পাড়ি যে ইসলামের প্রচারও প্রসার আমরা সবাই চাই আর এটার জন্য আমাদের কাজ করতে
হবে এক হয়ে। আমরা শুধু মাত্র আল্লাহর দ্বাসত্ব করবো আর কারও নয়। আমরা সেই কথা
গুলোই অন্ধের মত মানতে পারি যা রাসুল বলেছেন বা করেছেন, এছাড়া অন্য কারও ফর্মলা
অন্ধের মত মানা এটা অজ্ঞতার পরিচয়। তাবলীগ জামাত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস (রঃ)
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামের ভালোর জন্যই কিন্তু তাই বলে আমরা সেটা আকড়ে ধরেই বসে
থাকবো সেটা বোকামী কারন মানব সৃষ্ট কিছু কখনই বিশুদ্ধ নয়,তাতে সমস্যা থাকবেই আর
তাকে আমাদের সমাধান করতে হবে। তাহলে কি আমরা তাবলীগ জামাতকে তুলে দিবো? আমি বলি না, আমরা তাবলীগ কে
নিশ্চিহ্ন করে দিবো না শুধু সংস্কার করবো। তাবলীগ কে আজ বের হতে হবে মসজিদ থেকে, সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে
ইসলামের আলো। ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হয় সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এটা গোপনে নিভৃতে
বসে প্রতিষ্ঠা করার বিষয় নয়। তাবলীগকে প্রতিবাদ করা শিখতে হবে, আন্দোলন করতে হবে
ইসলামী শিক্ষা নিয়ে , আন্দোলন করতে হবে ইসলাম বিরোধী আইন নিয়ে। ইসলাম কে মাঠে ঘাটে বনে
বাদাড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে তবেই সমাজ হবে জঞ্জাল মুক্ত আর সুন্দর। তখন আর আমাদের
মসজিদে গিয়ে লোকাতে হবেনা বাচার জন্য। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে ভালো কাজে
ব্যাবহারের শিক্ষা দিতে হবে মানুষকে। নারীদের মাঝেও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে
হবে। হে মসজিদে মুখ লুকানো মুসলিম জাতি, তোমাদের ধরতে হবে দেশের হাল
সমাজের হাল। শ্লোগান হবে এটা, “বিশ্ব মোদের ইবাদত খানা”। আমরা
যদি কাজ করতে চাই ইসলামের কল্যানে তবে কেন অন্ধ করে রাখবো আমাদের জ্ঞান চক্ষু? আমাদের বিবেগকে কেন
বন্দি করে রাখবো? কেন সত্য আর ভালোকে বোঝতে শিখবো না? তাই আসুন আমরা তাবলীগ
করি পুর্নাঙ্গ ইসলাম নিয়ে, আংশিক ইসলাম নিয়ে নয়।